ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার একটি শহর ও পৌরসভা ভাটপাড়া। দেশটিতে লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে চলা বিচ্ছিন্ন সহিংসতার মধ্যেও এ শহরে দেখা গেল এক অনন্য নজির। হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিচ্ছেন মুসলিম বাসিন্দারা। আর নিশ্চিন্তে পূজা পালন করতে পারছেন হিন্দুরা।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, ভাটপাড়া থানা থেকে কিছুটা দূরে নয়াবাজার এলাকা। সেখানের এনসি রোডের প্রায় ৯০ শতাংশ বাসিন্দাই মুসলিম। সেখানেই রয়েছে পুরোনো শিবমন্দির। দু’বেলাই মন্দিরে পুজো-অর্চনা হয়। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তুলসীপ্রসাদ মন্দিরের মধ্যেই একটি ঘরে বসবাস করেন। তার ঠিক ১০০ মিটার ব্যবধানে রয়েছে ঈশাক সরদার মসজিদ।
ভাটপাড়ায় লোকসভা ভোটের সময় শুরু হওয়া রাজনৈতিক হিংসায় সাম্প্রদায়িক রং লেগে যাওয়ায় যখন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন, তখন মুসলিম মহল্লার মধ্যে নিশ্চিন্তে দিন যাপন করছেন তুলসীপ্রসাদ। মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে গর্বের সঙ্গে তিনি জানালেন, ‘এখানকার বেশির ভাগ মানুষ মুসলিম সম্প্রদায়ের। কিন্তু আমরা সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে থাকি।’
‘১৯৭১ সালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তখন থেকে আজ পর্যন্ত কোনও ঝামেলা হয়নি। ঈশ্বর ও আল্লার কাছে প্রার্থনা করি, এ বারেও যেন কিছু না হয়। সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা শান্তিতে থাকুন। কোনও গণ্ডগোলে পা দেবেন না।’
ঈশাক সরদার মসজিদের ইমাম মাওলানা মহম্মদ নিশারও সব ধর্মের মানুষের কাছে শান্তির আবেদন রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের মসজিদের পাশেই মন্দির রয়েছে। অন্য কোথাও মসজিদে কেউ বোমা মেরেছে বলে আমাদের মহল্লাতে মন্দিরে পাল্টা হামলা হোক, সেটা আমরা চাই না। হিন্দু-মুসলিম সবাই আমরা একসঙ্গে থাকি। সবাইকে বলব, শান্তিতে থাকুন।’
শুক্রবার দুপুরে মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে এসেছিলেন আনোয়ার আলী নামে এক মুসল্লি। তিনি বলেন, ‘গন্ডগোলের জেরে এলাকার মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কাজে যেতে পারছে না। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। যদি আমাদের এলাকার কেউ গন্ডগোল করে পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। কোনও কিছু হলেই গোটা মহল্লাকে কেন দায়ী করা হবে? আমাদের মসজিদের পাশেই মন্দির রয়েছে। এত গন্ডগোলের মধ্যেও ওখানে একটা ইটের টুকরো পড়তে দিইনি। অনেক হিন্দু পরিবার আছে। তারা কোনও দিন অসুবিধা বোধ করেননি।’