Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রতারণার আরেক নাম ‘ফ্রি ভিসা’

free-visaফ্রি ভিসার নামে অভিনব কায়দায় প্রতারণা চলছে। বাস্তবে এর অস্তিত্ব না থাকলেও এই ভিসার নাম করে মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে। বৈধ ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট না থাকায় এসব দেশে গিয়ে কোনো কাজ পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা। ফলে প্রবাসে অমানবিক জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, দুবাই, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে ফ্রি ভিসা বেশি খোঁজে বিদেশগামী বাংলাদেশি শ্রমিকরা। এসব দেশগুলোতে ফ্যামেলি ভিসা, ভিজিট ভিসা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারিং ভিসা, খাদেম (বাসা) ভিসা, কোম্পানির ভিসাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা দিয়ে থাকে।

chardike-ad

দূতাবাসের এক কর্মকর্তা ফ্রি ভিসার বিষয়ে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট কাজের চুক্তির মাধ্যমে ভিসা ইস্যু হয়। অনেক ক্ষেত্রে ভিসার সব খরচ নিয়োগকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বহন করে থাকে। ফ্রি ভিসা বলে কিছু না থাকলেও মূলত কিছু অসাধু বাংলাদেশি স্থানীয়দের যোগসাজশে ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা পদ্ধতি চালু করেছে।

তিনি বলেন, সাধারণ শ্রমিক তার সর্বস্ব বিক্রি করে বিদেশে এসে কাজ না পেয়ে অসহায়ত্বের মধ্যে পড়েন। এমনকি জেল জরিমানার ফাঁদেও পড়েন।

কুয়েত প্রবাসী ব্যবসায়ী সেলিম বলেন, ফ্রি ভিসা বলে কোনো ভিসা হয় না। প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা তাদের আত্মীয়-স্বজনকে কাছে নেয়ার স্বার্থে এসব ভিসার সহায়তা নেন। এ ধরনের ভিসা নিয়ে গিয়ে বিপদে পড়বেন জেনেও বিদেশে পাড়ি জমান তারা।

দূতাবাসের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ফ্যামিলি ভিসা, ভিজিট ভিসা ছাড়া অন্যকোনো ভিসায় কাজ করার অনুমোদন নেই। এছাড়া বাকি যেকোনো ভিসা নিয়ে যে দেশেই যাওয়া হোক না কেন মালিকের কাজ করতে হবে। (ফ্রি ভিসায় যাওয়া শ্রমিকরা) কাজের জন্য বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকে, ঘুরতে থাকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে।

তিনি বলেন, কপিল (মালিক) ছাড়া অন্য কোথাও কাজ করা অবস্থায় ধরা পড়লে আইডি কার্ডের নম্বর নিয়ে সিস্টেম ব্লক করে রাখা হয়। আকামা শেষ হলে পরবর্তীতে এই আকামা আর রিনিউ করা যায় না। আবার অনেক সময় কোম্পানি বা মালিককে নোটিশ করা হয় আগামী সপ্তাহ পনের দিনের মধ্যে দেশে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য।

ফ্রি ভিসায় কুয়েত আসা আরেক প্রবাসী বলেন, ফ্রি ভিসায় প্রশাসনের হাতে আটক হলে কফিলকে কৈফিয়ত দিতে হয়। এমনকি মালিকের লাইসেন্স ব্লক করে দেয় কফিল। মালিক নিজে বাঁচতে শ্রমিকদের দায়ভার নিতে চায় না। যেহেতু ভিসার দালালেরা আগেই তাদেরকে টাকার বিনিময়ে ভিসা বিক্রির নিয়ম শিখিয়ে দিয়েছে সেক্ষেত্রে কোনো সময় বিপদে পড়লে বেশিরভাগ মালিক এড়িয়ে চলে।

তিনি বলেন, ধার-দেনা, জমি-জমা বন্ধক রেখে বিদেশগামীরা না বুঝেই স্বচ্ছলতা ফেরাতে ছুটে যান অনিশ্চিত গন্তব্যে। দালালের কথা ও বাস্তবতার সাথে মিল খুঁজে পায় না প্রবাসীরা।

‘ফ্রি ভিসায় কোনো কাজ পেলে অর্থকষ্টে মানবতের জীবন যাপন করতে এমন অনেক প্রবাসীদের। যার আশায় পথ চেয়ে থাকে পরিবার সে যদি এমন পরিস্থিতিতে পড়ে তার পরিবারের করুণ অবস্থার কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঋণের সুদ,পরিবারে খরচ, চাকরির খোঁজ, বেতন বকেয়া, আকামার বিষয়ে ইত্যাদির মানসিক চাপে বাসা বাঁধে নীরব ঘাতক স্ট্রোক।’

সাহিত্যিক ও সংগঠক রফিকুল ইসলাম ভুলু বলেন, মালিক থাকলেও কাজ নিজেকে খুঁজে নিতে হয়। যেকারণে এসব শ্রমিকরা বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকি নিয়ে কাজের সন্ধানে অপেক্ষায় থাকে বা ঘুরতে দেখা যায়। আগেও এইভাবে কাজের জন্য বসে থাকতো প্রবাসীরা।

সম্প্রতি বিদেশে শ্রমিকদের স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা দিনেদিনে বেড়েই চলেছে। পরিবারে জন্য সুখ কিনতে যাওয়া সেই মানুষটি যখন কাঠের কফিন বন্দি হয়ে দেশে ফিরে হতাশা আর অন্ধকার নেমে আসে প্রবাসীর পরিবারে। এ ছাড়া কুয়েতে ভিসা করতে খরচ ১ লাখ টাকার মতো কিন্তু দালালদের হাত বদলের ফলে ভিসার মূল্য দাঁড়ায় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকায়।

লেখক- সাদেক রিপন, কুয়েত থেকে