চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিশ্ববাজারে ডলারের যে পতন হয়েছে, তা গত ৫২ বছরে মধ্যে সবচেয়ে বড় ধস। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মান কমেছে ১০ শতাংশের বেশি।
১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র মুদ্রা ছাপানোর ক্ষেত্রে স্বর্ণমান থেকে বেরিয়ে আসার পর ডলারের বড় ধরনের দরপতন হয়েছিল। ওই সিদ্ধান্ত ছিল যুগান্তকারী ঘটনা। এরপর বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় ডলারের ব্যবহার ও মান বেড়ে যায়।
তবে এবারের পটভূমি ভিন্ন। এখন ডলারের এই পতনের পেছনে আছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্বব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা, বিশেষ করে আগ্রাসী শুল্কনীতি ও আত্মকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি। ট্রাম্পের শুল্কনীতি, মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা ও সরকারি ঋণের বাড়বাড়ন্ত—সব মিলিয়ে ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় বিনিয়োগকারীদের ক্রমেই আস্থা কমে আসা।
ডলারের দাম কমে যাওয়ায় মার্কিন নাগরিকদের বিদেশে ভ্রমণের খরচ বেড়েছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। এমন এক সময়ে বিষয়টি ঘটছে, যখন দেশটি আরও বেশি ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে ডলার দুর্বল হওয়ায় মার্কিন রপ্তানিকারকদের সুবিধা হয়েছে, যদিও আমদানির খরচ বাড়ছে। মুদ্রা দুর্বল হলে স্বাভাবিকভাবে এসব ঘটলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকির কারণে বাণিজ্যসংক্রান্ত এই ‘স্বাভাবিক’ বিষয়গুলোও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
যত দিন যাচ্ছে, ততই ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি ক্ষীণ হচ্ছে। অর্থাৎ নীতিগতভাবে ট্রাম্প সেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছেন। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন শেয়ারবাজার চাঙা, বন্ডের বাজারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু ডলারের মান কমেই চলেছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের বিদেশি মুদ্রা গবেষণা বিভাগের স্টিভ ইংল্যান্ডার বলেন, ‘ডলার দুর্বল, না শক্তিশালী, এটা মূল প্রশ্ন নয়। মূল প্রশ্ন হলো, বিশ্বসমাজ তোমার অবস্থান কীভাবে দেখছে?’
মূলত ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পরপর ডলার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বিনিয়োগকারীদের ধারণা ছিল, ট্রাম্প ব্যবসাবান্ধব ও প্রবৃদ্ধিমুখী। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করা হলে বিপুল সুবিধা দেয়া হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। ফলে ধারণা করা হয়েছিল, ট্রাম্প বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারবেন এবং পরিণতিতে ডলারের চাহিদা বাড়বে। কিন্তু সেই আশা স্থায়ী হয়নি। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় অর্থাৎ ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের সময় ডলার সূচক সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছার পরই পড়তে শুরু করে। নতুন প্রশাসন ব্যবসাবান্ধব হবে, সেই আশা দূর হয়ে শুরু হয় উচ্চ মূল্যস্ফীতির আতঙ্ক, উচ্চ সুদহারের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব আর অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা।
এরপর আসে ট্রাম্পের ঘোষিত সেই ‘স্বাধীনতা দিবস’ অর্থাৎ ২ এপ্রিল, যেদিন তিনি পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। সেদিন তিনি একেবারেই অপ্রত্যাশিত উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন; যে বিষয়টি অর্থনীতিবিদ, বিনিয়োগকারী কিংবা বিশ্লেষক—কেউই অনুমান করতে পারেননি। ফলে শেয়ারবাজার থেকে শুরু করে বন্ডের বাজার ও ডলার—সব ক্ষেত্রেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস







































