পুরো ম্যাচেই দাপুটে ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী দল। ৭৬ মিনিট পর্যন্ত এগিয়েও ছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু হুট করেই এলোমেলো হয়ে যায় সবকিছু। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে ২ গোল হজম করে নিশ্চিত জয়ের ম্যাচ ড্রয়ের শঙ্কা তৈরি হয়। তবে অতিরিক্ত সময়ের একদম শেষ মুহূর্তে তৃষ্ণা রানী সরকারের গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশের মেয়েরা।
বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় আজ আসরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে ৩-২ গোলে জয় পেয়েছে আফঈদা খন্দকারের দল। ম্যাচের প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল তারা। ম্যাচের শুরু থেকেই নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে কর্নার থেকে আসা বল কেড়ে নিতে বক্সের ভেতর সৃষ্টি হয় জটলা। সেখানে নেপাল গোলরক্ষক সুজাতা তামাংকে একা পেয়ে গোল করতে পারেননি আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা মোসাম্মৎ সাগরিকা।
অষ্টম মিনিটে জয়নব বিবি রিতার দারুণ এক পাসে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন সিনহা জাহান শিখা। একের পর এক আক্রমণে নেপালকে চাপে রাখার সুফল বাংলাদেশ পায় ১৪ মিনিটে। বাঁ প্রান্ত দিয়ে সাগরিকার পাস ধরে বক্সে ঢুকে পড়েন মুনকি। দুই ফুটবলারকে কাটিয়ে গোলরক্ষককেও পরাস্ত করেন তিনি। তার সেই শট গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন নেপালের গঙ্গা রোকিয়া। কিন্তু পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি। উল্টো বল ঠেলে দেন শিখার কাছে। দারুণ এক শটে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন শিখা।
৩৬ মিনিটে শান্তি মার্দির ক্রসে বল পেয়ে দুবারের চেষ্টায় সুজাতাকে টপকাতে ব্যর্থ হন শিখা। তবে সুযোগসন্ধানী সাগরিকা কোনো ভুল করেননি। সুজাতার হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়া বল দ্রুত জালে পাঠান তিনি।
বিরতির পর দুই দলই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে। ৫০ মিনিটে মুনকির পাসে সুযোগ পেয়েছিলেন সাগরিকা। কিন্তু গতির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। ৫২ মিনিটে স্বপ্না রানির থ্রু বলে গোলরক্ষককে একা পান শিখা। কিন্তু তার শট পোস্টের অনেকটা বাইরে দিয়ে চলে যায়।
৫৫ মিনিটে লাল কার্ড দেখেন বাংলাদেশ এবং নেপালের দুই ফুটবলার। বাংলাদেশের সাগরিকার সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ান নেপালের সিমরান রায়। সাগরিকা বল নিয়ে ছুটছিলেন। তাকে ঠেকাতে গিয়ে মেজাজ হারিয়ে ঘুষি মেরে বসেন সিমরান। সেটার জবাব দেন সাগরিকাও। রেফারি দুজনকে লাল কার্ড দেখান। ফলে বাকিটা সময় দুই দলকেই ১০ জন নিয়ে খেলতে হয়েছে।
৭৬ মিনিটে নেপালের ফুটবলার মিনাকে বক্সের ভেতর ফেলে দেন জয়নব। পেনাল্টি পায় সফরকারীরা। স্পট কিক থেকে কোনাকুনি শটে ব্যবধান কমান আনিশা রায়। এরপর সমতা ফেরাতে আরও মরিয়া হয়ে ওঠে নেপাল। শান্তি ও শিখাকে তুলে উমহেলা মার্মা ও অয়ন্ত বালাকে নামান বাটলার। ৮৬ মিনিটে সমতায় ফেরে নেপাল। পুর্ণিমার আড়াআড়ি ক্রস বুটের তলার টোকায় স্বর্ণাকে পরাস্ত করেন মিনা।
যোগ করা সময়ের শেষ মূহুর্তে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন তৃষ্ণা রানী। দারুণ এক গোলে দলের তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করে নেপালকে স্তব্ধ করে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটান তিনি।
চার দলের এই রাউন্ড-রবিন ভিত্তিক আসরে প্রতিটি দল একে অপরের বিপক্ষে দু’বার করে খেলবে। মোট ছয় ম্যাচের এই লিগের পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকলেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জিত হবে। প্রতিদ্বন্দ্বী চার দল—বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটান।
শক্তিমত্তার বিচারে স্বাগতিক বাংলাদেশই এবার ফেভারিট। গত বছর সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। এবারের লক্ষ্য সেই শিরোপা ধরে রাখা। ঘরের মাঠে লাল-সবুজের দল সে লক্ষ্যেই এগোচ্ছে আত্মবিশ্বাসে ভর করে।










































