বুধবার । ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক আন্তর্জাতিক ৬ অক্টোবর ২০২৫, ১:০৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

ইসরায়েলি আটক কেন্দ্রে ফ্লোটিলা কর্মীদের ওপর বর্বর নির্যাতনের অভিযোগ


Detention
গাজামুখী মানবিক সহায়তা বহনকারী ফ্লোটিলা আটকের পর ইসরায়েল থেকে ফেরত পাঠানো আন্তর্জাতিক কর্মীরা আটক অবস্থায় ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ভয়াবহ নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন।

রোববার (৫ অক্টোবর) ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র অংশগ্রহণকারীদের এসব নতুন অভিযোগ ইসরায়েলের আচরণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা ও সমালোচনা আরও জোরালো করেছে।

আটক হওয়া মানবাধিকারকর্মীদের বক্তব্য
ইতালির রোমে ফিরমিচিনো বিমানবন্দরে পৌঁছে ইতালীর মানবাধিকারকর্মী সিজারে তোফানি বলেন, আমাদের সঙ্গে ভয়াবহ আচরণ করা হয়েছে… সেনাবাহিনীর পর পুলিশের কাছেও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।

ইতালির ইসলামিক কমিউনিটির ইউনিয়নের সভাপতি ইয়াসিন লাফরাম মিলান বিমানবন্দরে পৌঁছে দেশটির পত্রিকা কোরিয়েরে দেলা সেরা-কে জানান, আমাদের ওপর অস্ত্র তাক করা হয়েছে, সহিংসতা করা হয়েছে। যে দেশ নিজেকে গণতান্ত্রিক বলে দাবি করে, সেখানে এ আচরণ সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

অন্যদিকে ইতালীয় সাংবাদিক সাভেরিও তোম্মাসি জানান, ইসরায়েলি সেনারা আটক কর্মীদের দরকারি ওষুধ খেতে দেয়নি এবং তাদের সঙ্গে “বানরের মতো ব্যবহার করেছে।” তাঁর ভাষায়, “আমাদের বিদ্রুপ ও উপহাস করা হয়েছে, যেখানে মোটেও হাসির কোনো বিষয় ছিল না।”

ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
ইতালির আরেক সাংবাদিক লরেঞ্জো দ্যাগোস্তিনো অভিযোগ করেন, তার ব্যক্তিগত মালপত্র ও টাকা ইসরায়েলিরা নিয়ে নিয়েছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে পৌঁছে তিনি বলেন, আমাদের ভয় দেখাতে কুকুর ব্যবহার করা হয়েছে এবং বন্দিদের দিকে বন্দুকের লেজার লাইট তাক করা হয়েছে।

আরেক মানবাধিকারকর্মী পাওলো দে মন্টিস জানান, তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাত বাঁধা অবস্থায় একটি ভ্যানে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, আমাদের চোখ তুলে তাকাতে দেওয়া হতো না। একবার তাকালে আমাকে ঝাঁকুনি দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। চার ঘণ্টা হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল।

মালয়েশিয়ার দুই বোন ও শিল্পী হেলিজা ও হাজওয়ানি হেলমি জানান, আটক অবস্থায় তারা “বর্বর” ও “নৃশংস” আচরণের শিকার হয়েছেন। হাজওয়ানি বলেন, আমাদের টয়লেটের পানি খেতে দেওয়া হয়েছিল। কেউ অসুস্থ হলে ইসরায়েলিরা বলত, ‘সে কি মরে গেছে? না হলে এটা আমাদের সমস্যা নয়।’ তারা ভীষণ নিষ্ঠুর।

হেলিজা আরও জানান, ১ অক্টোবরের পর থেকে আমি কিছুই খাইনি। তিন দিন শুধু টয়লেটের পানি খেয়ে বেঁচে ছিলাম।

গ্রেটা থানবার্গসহ অন্যদের নির্যাতনের অভিযোগ
ডিপোর্ট হওয়া কয়েকজন কর্মী আরও অভিযোগ করেন, সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থানবার্গকে বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়েছিল। তাকে “মাটিতে টেনে নিয়ে যাওয়া, ইসরায়েলের পতাকা চুম্বন করতে বাধ্য করা, এমনকি প্রচারণার কাজে ব্যবহার করা” হয়েছে।

ইসরায়েলের দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়া
এ অভিযোগের বিষয়ে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও চরমপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতমার বেন-গভির বিপরীত সুরে মন্তব্য করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় দাবি করেছে, এসব গল্প “মিথ্যা ও প্রোপাগান্ডা”। তারা জানিয়েছে, “সব বন্দির আইনি অধিকার পুরোপুরি রক্ষা করা হয়েছে। বরং গ্রেটা ও অন্যরা দ্রুত ডিপোর্ট হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, তাই দীর্ঘ সময় আটক ছিল।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের হাতে কর্মীদের আটক ও নির্যাতনের অভিযোরগ পাকিস্তান, তুরস্ক, কলোম্বিয়া সহ কয়েকটি দেশ কড়া সমালোচনা করেছে। গ্রিস আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিভিন্ন দেশে রাস্তায় বিক্ষোভও হয়েছে।

রোববার ইসরায়েল আরও ২৯ জন ফ্লোটিলা কর্মীকে ডিপোর্ট করেছে। তবে এখনো অনেকে ইসরায়েলে আটক আছেন।

স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে মানুয়েল আলবারেস জানিয়েছেন, আটক ৪৯ স্প্যানিশ কর্মীর মধ্যে ২১ জন রোববার দেশে ফিরবেন। আর গ্রিস জানিয়েছে, সোমবার ২৭ জন গ্রিক নাগরিক দেশে ফিরবেন।