মালালা ইউসুফজাই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর পাকিস্তানে নারী শিক্ষার পথে ধর্মীয় রক্ষণশীলতা এবং উগ্রবাদী ইসলামিক মতাদর্শের ভূমিকা আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে। কিন্তু প্রায় একই ধরণের আর্থ-সামাজিক অবস্থান থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে। বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিকভাবে সবার প্রশংসাও অর্জন করেছে।
ধর্মীয় রক্ষণশীলতার কারণ পাকিস্তানে নারী শিক্ষা যেখানে পদে পদে বাধাগ্রস্থ, সেখানে বাংলাদেশ কিভাবে এত অগ্রগতি অর্জন করলো? বাংলাদেশের শিক্ষা বিষয়ক পরিসংখ্যান ব্যুরো, ব্যানবেইসের হিসেবে ২০১২ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৫১ শতাংশই ছিল মেয়েশিশু। প্রায় শতভাগ মেয়েই এখন স্কুলে যাচ্ছে।
যে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রায় ভঙ্গুর, অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাপকাঠিতে যে দেশ এখনো অনেক পিছিয়ে, সেখানে মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে এই অর্জনকে উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা ‘বিস্ময়কর’ বলেই বর্ণনা করছেন।
কিভাবে এটি সম্ভব হলো?
বিশেষজ্ঞরা এক্ষেত্রে প্রথমত দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন বাংলাদেশের শিক্ষা বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ওপর। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে সব সরকারই শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। সেই সঙ্গে মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর জন্য নানা ধরণের উৎসাহব্যাঞ্জক নীতি নিয়েছে।
গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলছিলেন, মেয়েদের শিক্ষার হার প্রায় শতভাগে পৌঁছানোর একটি বড় কারণ এটি।
তিনি বলেন, “৯০ পরবর্তী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারগুলোর সময় থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক অঙ্গিকারে কখনোই ভাটা পড়েনি। যে সরকার যখনই এসেছে মেয়ে শিশুদের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে।”
মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারী সংগঠনগুলোর সমন্বিত কাজ এবং একইসাথে উপযুক্ত নীতিমালা গ্রহণও এ সাফল্য অর্জনের বড় দুটি কারণ বলে মনে করছেন রাশেদা কে চৌধুরী।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রায় ৬ বছর যাবত মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা শ্যামল কান্তি ঘোষ বলেন, এক্ষেত্রে মেয়ে এবং অভিভাবকদের আস্থা অর্জনটিই ছিল বড় বাধা।
এই আস্থা অর্জনের জন্য সরকার থেকেও বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল এবং সেগুলোও বেশ ভালো ভূমিকা রেখেছে।
“মেয়েদের জন্য বিদ্যালয়ে যে পরিবেশ করা দরকার, সেগুলো করা হয়েছে। শিক্ষকতায় ৬০ ভাগ শিক্ষিকাকে নিয়োগদান করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সবার জন্য বৃত্তি থাকলেও, মাধ্যমিক পর্যায়ে শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য বৃত্তি রাখা হয়েছে। এ বিষয়গুলো কাজে দিয়েছে” বলেন মি. ঘোষ।– বিবিসি।







































