
ছবি: এএফপি
গাজায় তীব্র শীতে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে নবজাতক ও শিশুরা। পর্যাপ্ত আশ্রয়, উষ্ণ পোশাক এবং জ্বালানির অভাবে হাইপোথার্মিয়াসহ বিভিন্ন শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) সতর্ক করে বলেছে, গাজায় ত্রাণ প্রবেশে ইসরায়েলি বাধা অব্যাহত থাকলে এই পরিস্থিতি অচিরেই এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নেবে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিকূল আবহাওয়ায় অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশিই শিশু। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে মাত্র ২৯ দিন বয়সী শিশু সাঈদ আসাদ আবেদিন তীব্র হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
একই করুণ পরিণতি হয়েছে দুই সপ্তাহ বয়সী শিশু মোহাম্মদ খলিল আবু আল-খাইরের। আল-মাওয়াসি এলাকার বাসিন্দা তার মা ইমান জানান, গত ১৩ ডিসেম্বর বৃষ্টির রাতে ঘুমের মধ্যেই শিশুটির শরীর বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। কোনো যানবাহন না পেয়ে গাধার গাড়িতে করে হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ইমান আক্ষেপ করে বলেন, “আমার সন্তানের কোনো শারীরিক সমস্যা ছিল না; তাঁবুর অসহ্য ঠান্ডাই ওর ছোট শরীর সহ্য করতে পারেনি।”
নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের মাতৃ ও শিশু বিভাগের প্রধান আহমেদ আল-ফাররা জানান, শিশুদের জন্য হাইপোথার্মিয়া অত্যন্ত প্রাণঘাতী। তাঁবুতে বসবাসকারী পরিবারগুলোর জন্য অবিলম্বে ক্যারাভান বা মোবাইল হোমের ব্যবস্থা করা না হলে মৃত্যুহার আরও বাড়বে। হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার বিলাল আবু সাদা জানান, অনেক শিশুকে মৃতপ্রায় এবং শরীর বরফশীতল অবস্থায় হাসপাতালে আনা হচ্ছে।
গাজার বর্তমান পরিস্থিতি কেবল প্রতিকূল আবহাওয়াই নয়, বরং এক চরম মানবিক বিপর্যয়ের দিকে মোড় নিয়েছে। এর মূল চিত্রগুলো হলো:
আবাসন সংকট: গত কয়েক সপ্তাহের টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের অন্তত ৫৩ হাজার তাঁবু পুরোপুরি ধ্বংস বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে হাজারো পরিবার এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি: হিমাঙ্কের কাছাকাছি তাপমাত্রা এবং পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে শিশুদের মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা এই প্রাণঘাতী ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি রয়েছে।
অবকাঠামো বিপর্যয়: ইসরায়েলি হামলায় গাজার ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আগে থেকেই বিধ্বস্ত ছিল। এখন সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকাগুলোতে নর্দমার নোংরা পানি উপচে পড়ছে, যা সংক্রামক রোগ ও স্বাস্থ্যঝুঁকিকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভবন ধস: তীব্র শীত থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে অনেক পরিবার বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত আধাভাঙা ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আশ্রয় নিচ্ছে। গত সপ্তাহেই এমন ১৩টি ভবন ধসে পড়ে নিহতের ঘটনা ঘটেছে।
গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও গাজায় প্রয়োজনীয় ত্রাণ ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ ও এমএসএফ। সংস্থাটির মতে, তাঁবু ও কম্বলসহ অতিপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছাতে না পারায় অন্তত ৫৫ হাজার পরিবার এবং ৩০ হাজার শিশু সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়েছে।
এমএসএফ-এর দাবি, এই মুহূর্তে রাজনৈতিক জটিলতা সরিয়ে রেখে অবিলম্বে বড় পরিসরে মানবিক সহায়তা ও শীতবস্ত্র গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। অন্যথায় শীতের কামড়ে আরও অনেক নিষ্পাপ প্রাণ অকালে ঝরে যাবে।







































