জনপ্রিয় লেখক ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে কোর্ট পয়েন্টে এনে চাবুক মারার ইচ্ছাপোষণকারী সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের বক্তব্যের একটি অডিও ক্লিপ গণমধ্যমে প্রকাশিত। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অডিও ক্লিপটি ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজনের মোবাইলে রেকর্ড করা অডিও ক্লিপে সিলেট-৩ আসনের সরকারদলীয় এই সাংসদকে প্রচণ্ড আক্রোশের সাথে জনপ্রিয় লেখক জাফর ইকবালকে কটূক্তি করতে শোনা যায়।
গত ৯ মে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে হাজী সাজ্জাদ আলী কল্যাণ ট্রাস্টের মেধা বৃত্তি বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহমুদ সামাদ চৌধুরী কয়েস জাফর ইকবালকে ‘সিলেট বিদ্বেষী’ উল্লেখ করে যে বক্তব্য দেন তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।
তবে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন আসলেই জাতীয় সংসদের একজন সদস্য এমন বক্তব্য দিয়েছেন কিনা। অবশেষে সাংসদ কয়েসের বক্তব্যের অডিও প্রকাশের মাধ্যমে বিষয়টি এখন পরিষ্কার হলো।
সাংসদ তার বক্তব্যে জাফর ইকবালের কারণে শাবিপ্রবিতে সিলেটিরা বঞ্চিত এমন অভিযোগ করে সিলেটের মানুষ তাকে ফুল দিয়ে মূর্তিপূজা করে বলেও উল্লেখ্য করেন।
তিনি উল্লেখ্য করেন,…আমি যদি বড় কিছু হতাম তাকে ধরে চাবুক মারতাম। জাফর ইকবালকে বামপন্থী ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই লেফইষ্টরা আমাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
অডিও ক্লিপে সাংসদ কয়েসকে বলতে শোনা যায়,
আমি ছিলাম শাহজালাল ইউনিভার্সিটিতে, সেখানে সিলেটি ছেলেদের ওরা ভর্তি করানোর জন্য ১৪ আইন কালো কানুন দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এই যে আপনার কি এটার নাম জাফর ইকবাল সে হল ১ লক্ষ পারসেন্ট গৌড়গোবিন্দ, সে চায়না সিলেটের মানুষ শাহজালাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হোক। এখানে যে ভিসি ছিল তাকেও দিয়েছে তাড়িয়ে। আর এই সিলেটের মানুষ তাকে ফুলচন্দন নিয়ে সুন্দর সুন্দর ফুল নিয়ে প্রত্যেক দিন মূর্তিপূজা করতে যায়। আমি যদি বড় কিছু হতাম তাকে ধরে চাবুক মারতাম কোর্ট পয়েন্টে এনে …জাফর ইকবাল তাকে আমি চাবুক মারতাম। এই লেফইষ্টরা আমাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
এদিকে গত শনিবার সাংসদ কায়েসের অনুসারী হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা `সিলেটবাসী`র ব্যানারে জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে মিছিল করেন। মিছিল থেকে ‘সিলেট বিদ্বেষী জাফর ইকবাল, এই মুহূর্তে সিলেট ছাড়’ ‘ব্লগার জাফর ইকবালের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ প্রভৃতি স্লোগান দেয়া হয়।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন মিছিলে নেতৃত্ব দেন।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এমরুল হাসানসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী এতে অংশ নেন।
এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কায়েস’র মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।