Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

এশিয়ার সেরা ১০ বিশ্ববিদ্যালয়

hong-kongপ্রতি বছরের মতো এবারও উচ্চশিক্ষা নিয়ে যুক্তরাজ্যের টাইমস হাইয়ার এডুকেশন পত্রিকা মানের দিক থেকে এশিয়া মহাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা করেছে। এতে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ৪০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জায়গা করে নিলেও নেই বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। তালিকায় চীনের ৭২টি, ভারতের ৪৯টি, তাইওয়ানের ৩২টি, পাকিস্তানের ৯টি, হংকংয়ের ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সেরা ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আজকের আয়োজন:

১) সিংহুয়া ইউনিভার্সিটি, চীন: শতবর্ষ পাড়ি দেওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯১১ সালে। তবে ৩০ বছর ধরে অসংখ্য বিষয়ে বিশ্বমানের শিক্ষা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। চীনের অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারির এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তারাই পড়ার সুযোগ পান, যারা চীনের জাতীয় পরীক্ষাগুলোতে দারুণ সাফল্য দেখাতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকপর্যায়ে ৫১টি বিষয় ছাড়াও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে দুই শতাধিক বিষয়ে শিক্ষাদান করা হয়।

chardike-ad

সর্বশেষ র‌্যাংকিং অনুযায়ী, এশিয়ায় এক নম্বরে থাকা সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ২২ নম্বর অবস্থানে রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, লাইফ সায়েন্স, ফিজিক্যাল সায়েন্স, কম্পিউটার সায়েন্স এবং ব্যবসা বিষয়ে উন্নতমানের পড়াশোনা এবং গবেষণা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথম সারিতে নিয়ে এসেছে।

বেইজিংয়ের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে চীনা কিং ডাইনেস্টির রাজকীয় বাগানগুলোর একটি সাইটে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের অঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক রাজকীয় নিদর্শন। চীনা স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে পাশ্চাত্যের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলো। পরিবেশ-প্রকৃতি মিলিয়ে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি।

চীনের সঙ্গে বিশ্বের, প্রগৈতিহাসিকের সঙ্গে আধুনিকতার এবং শিল্পের সঙ্গে বিজ্ঞানের সংযোগ স্থাপনই সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। কণা পদার্থবিদ চ্যান-নিং ইয়াংসহ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন দুই শিক্ষার্থী নোবেল পুরস্কারও জয় করেছেন।

২) ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর: বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ২৩ নম্বরে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি এশিয়ায় ২নং অবস্থানে আছে। এটি সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে পুরনো এবং শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। গবেষণায় শ্রেষ্ঠত্ব এবং আবিষ্কারের সুনাম এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে সেরা ৩০-এর মধ্যে নিয়ে এসেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেকনোলজিতে দুর্দান্ত সাফল্য দেখাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রায় ৩০ বছর ধরে এটি আবিষ্কার এবং প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

১৯০৫ সালে মেডিকেল কলেজ হিসেবে গড়ে ওঠা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নাম ছিল ব্রিটিশ রাজা সপ্তম অ্যাডওয়ার্ডের নামে। যদিও পরে আরও বেশ কয়েকবার এর নাম পরিবর্তন করা হয়। বিভিন্ন বিভাগ এবং বিষয় সংযুক্তির মাধ্যমে ১৯৮০ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হয় ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর। ব্রিটিশ স্টাইলে শিক্ষাকার্যক্রম চললেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স ক্রেডিটে আমেরিকান পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন হলে প্রায় ছয় হাজার আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে, এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বেশি।

এখানে পড়াশোনা করে অন্তত চারজন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার দুজন প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও এখানে পড়াশোনা করেছেন অসংখ্য নামিদামি রানীতিক এবং স্থানীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিরা।

৩) হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি: স্বচ্ছ পানির জন্য বিখ্যাত হংকংয়ের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা সাই কুংয়ের ‘ক্লিয়ার ওয়াটার বে’ উপকূলে মনোরম এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৯১ সালে। সায়েন্স, টেকনোলজি, প্রকৌশল, ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে বিশ্বমানের শিক্ষা দেওয়া হয় এখানে। এ ছাড়া এখানে সামাজিক বিজ্ঞান এবং মানবিক অনুষদও রয়েছে।

প্রতিষ্ঠার মাত্র ২৮ বছরের মধ্যেই এশিয়ার মধ্যে এটি তিন নম্বর অবস্থানে চলে এসেছে। গত বছর এটি পঞ্চম স্থানে ছিল। এবার বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৪১তম।

সমুদ্রের সুনীল জল আর পাহাড়ি পরিবেশে গড়ে ওঠা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোর অবস্থান সবার ওপরে, পাহাড়ের চূড়ায়। আর শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল এবং খেলাধুলার মাঠগুলো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। সেখান থেকে কয়েক পা এগোলেই সমুদ্রের স্বচ্ছ জলের উচ্ছ্বাস।

ক্যাম্পাসের ঠিক মাঝখানে আছে ‘লি শাও কি’ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরিতে প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক বইয়ের সংগ্রহ আছে। এ ছাড়া এখানে আছে প্রায় ৪৭ হাজার সাময়িকীর সমাহার। লাইব্রেরিতে একটি মানচিত্র সংগ্রহশালাও রয়েছে। প্রায় ৫০০ বছর ধরে চীনা এবং পশ্চিমা মানচিত্রকারদের হাতে তৈরি চীন ও এশিয়ার অনেক পুরনো মানচিত্রও রয়েছে সেখানে।

৪) ইউনিভার্সিটি অব হংকং: এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হয় ইংরেজিতে। হংকংয়ের পক ফু লামে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯১১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর তৈরি করেছিলেন। বিশ^বিদ্যালয় ভবনগুলোর স্থাপত্যে তাই ব্রিটিশ কলোনিয়াল আর্কিটেকচারের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।

এখানে ভর্তি হতে পারা খুব কঠিন কাজ। সত্যিকারের মেধাবীরাই তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এখানে ভর্তি পরীক্ষায় টিকতে পারে। স্নাতকপর্যায়ের বিষয়গুলো চার বছরের মধ্যে শেষ করার পর আবার এক কিংবা দুই বছরের জন্য মেডিকেল প্রোগ্রামও সম্পন্ন করতে হয়। স্থানীয় শিক্ষার্থীদের জন্য চীনা এবং ইংরেজি ভাষা শেখার বাধ্যতামূলক কোর্স রয়েছে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী চীনের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রাইভেট সেক্টরের অসংখ্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যবসা ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে পড়াশোনা এবং গবেষণার জন্য বিস্তৃত পরিসর রয়েছে। এ ছাড়া পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের কেন্দ্র বলা হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়কে।

২০০৯ সাল থেকে এটি ইভনিং এমবিএর মাধ্যমে লন্ডন বিজনেস স্কুল অ্যান্ড কলাম্বিয়ার সঙ্গে একীভূত হয়েছে। এশিয়ার মধ্যে চার নম্বর অবস্থানে থাকলেও এটি বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চেয়েও এগিয়ে আছে। ২০১৯ সালের র‌্যাংকিং অনুযায়ী, বিশ্বে এর অবস্থান ৩৬তম।

৫) পিকিং ইউনিভার্সিটি, চীন: এশিয়ায় পঞ্চম স্থানে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের চেয়েও এগিয়ে ৩১তম অবস্থানে আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় চীনের প্রথম আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিং ডাইনেস্টি শাসনামলের শেষ দিকে ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নামটি ছিল ইমপিরিয়াল ইউনিভার্সিটি অব পিকিং। বর্তমানে এটি আধুনিক চিন্তা এবং গবেষণার সূতিকাগার। এখানে অন্তত ২১৬টি গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে।

সায়েন্স, সামাজিক বিজ্ঞান এবং কলা অনুষদের বিষয়গুলো এখানে খুব গুরুত্বসহকারে পড়ানো হলেও এখানকার প্রকৌশলবিদ্যা আন্তর্জাতিকভাবে বেশ সমাদৃত হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিটি এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ বলে ধরা হয়। এখানে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ বই এবং গবেষণা-সংক্রান্ত দলিল রয়েছে।

১৯৫২ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তন করে বেইজিংয়ের হাইডিয়ান জেলায় কিং রাজবংশের রাজকীয় বাগান এলাকায় পুনঃস্থাপন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কাঠামো গড়ে উঠলেও এর চারপাশেই প্রাচীন আমলের বাগান, মন্দির এবং ঐতিহাসিক ভবনের প্রাচুর্য দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকেই চোখে পড়ে নানা ম্যুরাল চিত্র এবং ভাস্কর্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। চীন এবং বিশ্বের অসংখ্য বিখ্যাত ব্যক্তি এখানে পড়াশোনা করেছেন। অন্তত তিনজন নোবেল বিজয়ী এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছেন।

৬) নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি, সিঙ্গাপুর: এটি গবেষণাভিত্তিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল, ব্যবসা, সায়েন্স, মানবিক, কলা ও মেডিসিনের ওপর আটটি আলাদা কলেজের অধীনে প্রায় ৩৩ হাজার স্নাতকপর্যায়ের শিক্ষার্থী রয়েছেন। লন্ডনের ইমপিরিয়াল কলেজের সঙ্গে একীভূত হয়ে ১৯৫৫ সালে নানিয়াং ইউনিভার্সিটি নাম নিয়ে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮১ সালে এটি নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি নাম ধারণ করে।

৫০০ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি বিশাল বাগানের কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এটি একটি বলে ধরা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক স্থাপনাগুলোর ওপর রয়েছে সবুজ ঘাসের আস্তরণ।

স্মার্ট এই বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল প্রযুক্তির ওপর ভর করে নানা আবিষ্কার এবং বিভিন্ন রিসোর্সের সাসটেইনেবিলিটি উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। বিএমডব্লিউ, ভলভো বাস, ব্লু সলিউশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের অংশীদারত্ব সম্পর্ক রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের গাড়িতে বৈদ্যুতিক এবং যান্ত্রিক উন্নয়নে অংশ নেয় নানিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্র আবিষ্কার ও উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই প্রতিষ্ঠান। এর আলাদা সবগুলো প্রতিষ্ঠানই বিশ্বমানের। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন সিঙ্গাপুরের সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়। এশিয়ায় ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ৫১তম স্থানে রয়েছে।

৭) চাইনিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকং: ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি উচ্চমানের গবেষণা কার্যক্রমের জন্য বিখ্যাত। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আধুনিকতার এবং চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয় করার দায়িত্ব পালন করে। নয়টি কলেজের সমন্বয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কলা, ব্যবসা, প্রশাসন, শিক্ষা, প্রকৌশল, আইন, মেডিসিন, সায়েন্স এবং সামাজিক বিজ্ঞান এ আটটি অনুষদ এসব কলেজে ছড়িয়ে আছে। চীনা ভাষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো ধারণা দেয় এই বিশ্ববিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কলেজে পেশাজীবীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। চীনা স্টাডিজ, ট্রান্সলেশনাল বায়োমেডিসিন, ইনফরমেশন অ্যান্ড অটোমেশন টেকনোলজি, এনভাইরনমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি এই চার বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে বিস্তৃত পরিসরে এখানে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এশিয়ায় সপ্তম অবস্থানে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে আছে ৫৩তম স্থানে।

৮) দি ইউনিভার্সিটি অব টোকিও: ১৮৭৭ সালে টোকিও কাইসেই স্কুল এবং টোকিও মেডিকেল স্কুল একীভূত হয়ে নতুন চারটি অনুষদ সৃষ্টি করেছিল। এই অনুষদগুলো হলো আইন, সায়েন্স, লেটারস ও মেডিসিন। অনুষদগুলোর যৌথভাবে নাম হয় ইউনিভার্সিটি প্রিপারেটরি স্কুল। পরে এর সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি স্কুল এবং প্রতিষ্ঠান যুক্ত করে গবেষণার বিশাল এক পরিসর সৃষ্টি করা হয়। গবেষণায় অনন্য অবদান এবং সাফল্যের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে এটি এশিয়ার মধ্যে অষ্টম স্থানে রয়েছে। তবে, বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৪২তম।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ১০টি অনুষদ, ১৫টি স্নাতক স্কুল, ১১টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ১৩টি বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে সংযুক্ত কেন্দ্র, তিনটি লাইব্রেরি, অগ্রসর পড়াশোনার জন্য দুটি ইনস্টিটিউট এবং ইউনিভার্সিটি অব টোকিও হসপিটাল রয়েছে।

সারা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত সাড়ে চারশোটি আন্তঃসম্পর্ক চুক্তি রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি বেশ কয়েকবার নাম পরিবর্তনের সম্মুখীন হয়েছে। ২০০৪ সালে এই বিশ^বিদ্যালয়ের পুরো নামটি দাঁড়ায় ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি করপোরেশন, দি ইউনিভার্সিটি অব টোকিও।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আটজন নোবেল বিজয়ী, ১৫ জন জাপানি প্রধানমন্ত্রী এবং চারজন নভোচারী রয়েছেন।

৯) সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি: ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দক্ষিণ কোরিয়ায় খুবই মর্যাদাসম্পন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়টির তিনটি ক্যাম্পাস রয়েছে। মূল ক্যাম্পাসটি সিউলের দক্ষিণ অংশে গাওনক জেলায় অবস্থিত। এ ছাড়া দায়েহাঙ্গো এবং পিয়ংচেঙে আরও দুটি ক্যাম্পাস রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৬টি কলেজ, একটি স্নাতক স্কুল এবং ৯টি প্রফেশনাল স্কুল রয়েছে। এখানে পড়াশোনা করছে প্রায় ১৭ হাজার স্নাতকপর্যায়ের শিক্ষার্থী এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে রয়েছে আরও ১১ হাজার শিক্ষার্থী। এশিয়ায় নবম অবস্থানে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয় বিশ^ র‌্যাংকিংয়ে ৬৩তম স্থানে রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব পরিস্থিতির জন্য যথাযথভাবে গড়ে তোলাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি দেশটির গণতন্ত্র থেকে শুরু করে কোরিয়ান উপদ্বীপে শান্তির জন্য কাজ করার দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে।

এখান থেকে যারা শিক্ষা লাভ করেন, তাদের বেশির ভাগই কোরিয়ান প্রজাতন্ত্রের সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। উচ্চপর্যায়ের গবেষণার জন্যও এই বিশ্ববিদ্যালয় বিখ্যাত। একবিংশ শতকে এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য শিক্ষার্থী এবং পন্ডিতদের সমন্বয়ে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ তৈরি করা, যারা যৌথভাবে ভবিষ্যৎ রচনা করবে।

১০) সুঙ্কিয়াংকন ইউনিভার্সিটি, দক্ষিণ কোরিয়া: উচ্চশিক্ষার জন্য সুঙ্কিয়াংকন বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বমানের। ৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে আসা এই প্রতিষ্ঠান এশিয়ার মধ্যে দশম স্থানে এবং বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ৮২তম স্থানে রয়েছে। রাজকীয় কনফুসিয়ান অ্যাকাডেমি হিসেবে ১৩৯৮ সালে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। জসিওন রাজবংশের রাজত্বকালে (১৩৯২-১৯১০) এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শক্তিশালী নেতৃত্বের স্থান দখল করেছিল। পরে অবশ্য এই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে এশিয়া এবং বিশ্ব প্রেক্ষাপটে নিজেকে আরও বিস্তৃত পরিসরে উন্মুক্ত করে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির নামের একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে। ‘সুঙ্কিয়াংকন’ মানে এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা আলোকিত মনুষ্য প্রবৃত্তিগুলোর মাধ্যমে একটি সুসংবদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠা করে। অতীতের মতো বর্তমানের প্রযুক্তি এবং অগ্রসর সমাজের জন্যও এই দর্শনটি এখনো কার্যকর। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ১ হাজার ৪০০-এরও বেশি অনুষদ রয়েছে, যেগুলো যুগোপযোগী শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য নিবেদিত। শিক্ষার্থীর বুদ্ধিবৃত্তিক এবং ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটানোই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য। দক্ষিণ কোরিয়া তো বটেই, পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সুঙ্কিয়াংকন থেকে অজানাসংখ্যক শিক্ষার্থী স্নাতক হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে আরও সুদৃঢ় করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

দয়া, ন্যায়পরায়ণতা, সংগতি ও জ্ঞান চারটি মূলনীতিকে সামনে রেখে শিক্ষাকার্যক্রমের জাল বিছিয়েছে এশিয়ায় দশম এবং বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ৮২তম স্থানে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয়।