Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পুলিশ যার ফাঁসি চায় স্থানীয় আ.লীগ তার মুক্তি চায়

feni-newsফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

কারাবন্দি সভাপতি রুহুল আমিনের মুক্তির দাবিতে সোনাগাজীসহ ফেনীর আদালতপাড়া এলাকায় পোস্টার টাঙানো হয়েছে। পোস্টারে সয়লাব এসব এলাকা। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে এসব পোস্টার টাঙানো হলেও এর সঙ্গে দলীয় নেতাদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

chardike-ad

‘সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি চাই’ লেখা সংবলিত পোস্টারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি ছাপা হয়েছে।

সোমবার রাতে এসব পোস্টার উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ জেলার আদালতপাড়া এলাকায় টাঙানো হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়েও এসব পোস্টার টাঙানো হয়েছে বলে দলীয় একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

এর আগে ২৭ মে উপজেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে ইফতার ও দোয়া মাহফিলে কারাবন্দি সভাপতি রুহুল আমিনের মুক্তির দাবি জানান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

এদিকে রুহুল আমিনের মুক্তির দাবিতে পোস্টার টাঙানোর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নুসরাত হত্যা মামলার বাদী ও নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।

তিনি বলেন, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যে ১৬ জনের নামে চার্জশিট দিয়েছে তাতে রুহুল আমিনের নাম আছে। এরই মধ্যে তার মুক্তির দাবিতে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ জেলার আদালতপাড়া এলাকায় পোস্টার টাঙানো হয়েছে। এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে ন্যায়বিচার ব্যাহত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মফিজুল হক, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন, যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক হিরন ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ভূট্টো জানান, এ ধরনের পোস্টার টাঙানোর সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি কাউকে এ বিষয়ে কোনো দায়িত্ব দেয়া হয়নি।

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকম বলেন, রুহুল আমিনের মুক্তির দাবিতে পোস্টার টাঙানোর সঙ্গে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। কে বা কারা এটি করেছে এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।

মাদসারাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে ৩০ মে রুহুল আমিনসহ ১৬ জনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম।

চার্জশিটে রুহুল আমিন ছাড়াও সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২) ও মাদরাসার সাবেক সহসভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীমের (২০) নাম রয়েছে।

এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।

এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আট আসামিসহ ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।

সৌজন্যে- জাগো নিউজ