Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মধ্যপ্রাচ্যে কান্নার আওয়াজ

omanসুলতান কাবুস ওমানের জনগণের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন এবং তার হাতেই ছিল সম্পূর্ণ রাজতন্ত্র। আধুনিক ওমানের নেপথ্যের স্থপতি হিসেবে পরিচিত দেশটির সুলতান কাবুস বিন সাইদ আল সাইদের মৃত্যুতে সারাবিশ্বে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আরব বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতাসীন এই রাষ্ট্রনায়কের মৃত্যুতে দেশটিতে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত এই সুলতানের মৃত্যুতে দেশের সাধারণ জনগণের মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র-নেতারাও শোকাহত।

সুলতান কাবুসের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীও শোক প্রকাশ করেছেন তার মৃত্যুতে। শনিবার ভারত ও পাকিস্তানের দুই প্রধানমন্ত্রী যথাক্রমে নরেন্দ্র মোদী ও ইমরান খান সুলতান কাবুসের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম টুইটারে শোক জানিয়েছেন।

chardike-ad

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী: একাধিক টুইটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, সুলতান কাবুস বিন সাইদ আল সাইদের মৃত্যুর খবরে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক; যিনি ওমানকে আধুনিক এবং সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তর করেছেন। তিনি আমাদের এই অঞ্চল এবং বিশ্বের জন্য শান্তির আলোকবর্তিকা ছিলেন। ওমানের এই রাষ্ট্রনায়ককে ভারতের একজন সত্যিকারের বন্ধু বলে অভিহিত করেন নরেন্দ্র মোদী। ভারত এবং ওমানের গতিশীল কৌশলগত অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে সুলতান কাবুস শক্তিশালী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। মোদী বলেন, আমি তার কাছে থেকে উষ্ণতা ও স্নেহ পেয়েছি তার সব সময় লালন করব। তার আত্মা শান্তিতে থাকুক।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান: টুইটারে দেয়া শোক বার্তায় ইমরান খান ওমানের প্রয়াত সুলতানকে স্বপ্নদ্রষ্টা নেতা হিসেবে অভিহিত করেন। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিকে আধুনিক ও গতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে রূপান্তরে তার অবদানের কথা তুলে ধরেন পাক প্রধানমন্ত্রী। ইমরান খান বলেন, ওমান এক প্রিয় নেতাকে আর পাকিস্তান একজন ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত বন্ধুকে হারাল। তার আত্মা চিরশান্তিতে থাকুক।

লেবাননের রাষ্ট্রপতি মিশেল আউন: সুলতান কাবুসের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, সুলতান কাবুস লেবাননের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, আমরা একজন ঘনিষ্ঠ ভাইকে হারালাম। আমরা তাকে একজন ভালো বন্ধু হিসেবে স্মরণ করলেও বিশ্ব একজন ভালো নেতা হিসেবে তাকে স্মরণ করবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান : আজ আমরা একজন ব্যতিক্রমী নেতার শোক প্রকাশ করছি যিনি আরব ও ইসলামিক বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা। আমরা ওমানের ভ্রাতৃ সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাতে চাই। সুলতান কাবুসের মৃত্যুতে তিন দিনের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়।

সৌদি আরব: পবিত্র মসজিদের রক্ষক সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ এবং সৌদি আরবের বাদশাহ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান দুঃখের সাথে ভারাক্রান্ত মনে সুলতান কাবুস বিন সাইদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সুলতান কাবুসের কৃতিত্বের কথা এবং ওমানে তিনি যে মহান নবজাগরণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার প্রশংসা করে বাদশাহ সালমান এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান পুনরায় নিশ্চিত করেছেন যে সৌদি রাজ্য ওমানের ভ্রাতৃত্বপ্রতিম মানুষের দুঃখের অনুভূতি প্রকাশ করে, তাদের এই বিশাল ক্ষতি সহ্য করার জন্য ধৈর্য কামনা করি।

কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল আহমদ আল জাবির আল সাবাহ : প্রয়াত সুলতান কাবুস বিন সাইদের মৃত্যুতে তিনি ভ্রাতৃ-প্রতিম ওমানি জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, সুলতান কাবুস অগাধ গুণাবলীর একজন মানুষ ছিলেন। সুলতান কাবুসকে বাস্তবে পুরো বিশ্ব স্মরণ করবে।

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি: শেখ তামিম সুলতান কাবুসকে সংযমের একটি চিত্র হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি এই সত্যকে মূল্যবান করে বলেছিলেন যে, সুলতান কাবুস দেশগুলির মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করার একটি উপায় হিসাবে শান্তিপূর্ণ সংলাপের মানদণ্ড স্থাপন করেছিলেন। তিনি ওমানের ভ্রাতৃ সম্প্রদায়ের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে কাতারে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন।

বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ইসা আল খলিফা: সুলতান কাবুসকে হারিয়ে ওমান নাগরিকদের দুঃখের মুহূর্তে বাহরাইনের রাজ্য ওমানের পাশে রয়েছে। এ উপলক্ষে এক বিবৃতিতে প্রিন্স সালমান বিন হামাদ আল-খলিফা, ক্রাউন প্রিন্স এবং ডেপুটি কমান্ডার, প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী বাহরাইনে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা দেন। সেইসাথে তিনি বাহরাইন কিংডম এবং বিদেশে এর মিশনগুলিতে পতাকা অর্ধ নমিত রাখার নির্দেশ দেন।

জর্ডানের রাজা আব্দুল্লাহ: সুলতান কাবুসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দেয়েছেন দ্বিতীয় রাজা আবদুল্লাহ, শনিবার থেকে জর্ডানের হাশেমাইট কিংডমে তিনদিনের শোক জারি করেছেন।

মিশরীয় প্রেসিডেন্সি অফিস: মিশরীয় বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি আবদিলফাত্তাহ আল-সিসি ওমানের ভ্রাতৃ সম্প্রদায়ের প্রতি মিশরের জনগণের প্রতি তার সমবেদনা এবং শোক প্রকাশ করেছেন। সুলতান কাবুসকে একজন ‘জ্ঞানী’ বলে বর্ণনা করেছেন যিনি তার দেশ ও তার মানুষের সেবা করার জন্য তার পূর্ণ জীবন দান করেছিলেন। তিনি একজন আরব নেতা, যার নাম ইতিহাসের গ্রন্থে শক্তি এবং ঐক্যের প্রতীক হিসাবে খোদাই করা হবে। ৫০ বছরের সময়কালে তিনি তার দেশের জন্য একটি বিশিষ্ট স্থান অর্জন করেছিলেন। মহিমান্বিত সুলতান কাবুসকে কখনই ভুলতে পারবে না মিশর।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে: সুলতান কাবুস সুলতানাতের টেকসই উন্নয়ন অর্জনে অবদান রেখেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা উপলব্ধিতে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন এবং তিনি এমন এক নেতা ছিলেন যিনি পুরো বিশ্বের সম্মান অর্জন করেছিলেন। যিনি প্রজ্ঞা ও দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি উপভোগ করেছিলেন। তার মৃত্যুতে শুধুমাত্র ওমানি নাগরিকই নয় সমগ্র বিশ্ববাসী বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হলো। আমি সংহতি প্রকাশ করতে চাই ওমানি জনগণের সাথে জাপানের এই অত্যন্ত দুঃখজনক মুহূর্তগুলি কাটিয়ে উঠতে পারে।

গত শুক্রবার (১০-জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে ৭৯ বছর বয়সী ওমানের সুলতান কাবুস বিন সাইদ আল সাইদ মৃত্যুবরণ করেন। আরব বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে থাকা রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে গোটা ওমানে নেমে এসেছে শোঁকের ছায়া। চারদিকেই শুধু কান্নার আওয়াজ। জানা গেছে, ওমানের এই নেতা প্রায়ই নিজে গাড়ি চালিয়ে চলে যেতেন দেশের কোনো প্রান্তে। সেখানে গিয়ে তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনা করতেন; শুনতেন তাদের সমস্যা, সম্ভাবনার কথা।

আব্দুল্লাহ বিন হামাদ আল হার্থি নামে দেশটির এক নাগরিক টুইটারে লিখেছেন, মহান সুলতান কাবুসের মৃত্যুর খবরটি আমি প্রথমে পেয়েছি আমার কান্নারত মায়ের কাছ থেকে। এতিম, অনাথ, নিপীড়িত-সহ সব মানুষের পিতা মারা গেছেন। বার্তা-সংস্থা রয়টার্স বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক বিভিন্ন শক্তির লড়াইয়ে সবসময় নিজ দেশকে নিরপেক্ষ অবস্থানে রাখতেন তিনি।

আরব বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শাসক ওমানের সুলতান কাবুস বিন সাইদ আল সাইদ সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। ১৯৭০ সালে ব্রিটিশদের সহায়তা নিয়ে তিনি তার পিতাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে নিজে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরপর দেশটির তেল সম্পদকে কাজে লাগিয়ে তিনি ওমানকে উন্নয়নের পথে আনেন।