ওমানে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অপরাধে মার্চের প্রথম সপ্তাহে দুই শতাধিক প্রবাসীকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। ২০২০ সালের ১লা মার্চ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত এই সাতদিনে মাস্কাটে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে ২০৭ জন প্রবাসীকে আটক করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার ওমানের জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আটকদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে তা জানা যায়নি।
তবে স্থানীয় প্রবাসীদের ধারণা, আটকদের মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশি রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওমানে বসবাসরত সকল প্রবাসীদেরকে দেশটির শ্রম আইন মেনে চলতে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
এর আগে, ওমানের নতুন সুলতান হাইথাম বিন তারেক ক্ষমতা গ্রহণের পর নতুন বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যা ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে প্রধান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা এই নিষেধাজ্ঞায় পড়েন।
ওমান প্রবাসীদের জন্য ৩৭টি বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। দেশটির নাগরিকদের আরও বেশি চাকরির সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যেই মূলত এসব পেশায় প্রবাসীকর্মী নিয়োগে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।
অনুবাদ/টাইপ স্টোর, ফটোকপি পরিষেবা, সেলাই, লন্ড্রি, যানবাহন, মোটরগাড়ি মেরামত, নৌপরিবহন, বিক্রয়, জনশক্তি এবং নিয়োগ পরিষেবাদি, হেয়ারড্রেসিং/সেলুন, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী এবং এতিমদের জন্য ট্যাক্সি অপারেশন, মাছধরা এবং পুনর্বাসন ঘরসহ আরও বেশকিছু ব্যবসা প্রবাসীদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়।
ওমানের জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা ভ্রমণ ও পর্যটন, লজিস্টিক ও শিল্প খাতে বিশেষায়িত সংস্থাগুলোকে প্রশিক্ষণের সুযোগ-সুবিধা ও কর্মসংস্থান প্রদান করব। আমরা প্রবাসী কর্মীদের জন্য কিছু পেশায় অস্থায়ী কাজের লাইসেন্স প্রদান করব, তবে তা ওমানীদের তুলনায় ২০ শতাংশের বেশি হবে না।
ওমানের জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশটির পর্যটন খাতে ওমানীকরণের হার ছিল ৪১.১ শতাংশ। ২০১৮ সালে ৪২.২ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৪৩.১ শতাংশ এবং আগামী ২০২০ সালে এসে এর পরিমাণ এক শতাংশ বেড়ে ৪৪.১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
সেইসাথে লজিস্টিক সেক্টরে ২০১৭ সালে ওমানীকরণ ছিল ১৪ শতাংশ, ২০১৮ সালে ১৬ শতাংশ, ২০১৯ সালে ১৮ শতাংশ এবং আগামী ২০২০ সালে দুই শতাংশ বেড়ে এর পরিমাণ ধরা হয়েছে ২০ শতাংশ।
এদিকে দেশটির শিল্পখাতে ২০১৭ সালে ৩২. ৫ শতাংশ ছিল, ২০১৮ সালে ৩৩ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৩৪ শতাংশ এবং আগামী ২০২০ সালে এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ শতাংশ।
দেশটির এমন ওমানীকরণ নীতির জন্য দিনেদিনে কমে আসছে প্রবাসীদের কর্মক্ষেত্র। চলতি বছরে প্রায় ৯০টি পেশায় ওমানীকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত ধরপাকড় ও নানা নিয়ম-নীতির কারণে দিনেদিনে ওমান ছাড়ছেন অনেক প্রবাসী।
ওমানের জাতীয় পরিসংখ্যান ও তথ্য কেন্দ্রের (এনসিএসআই) তথ্য অনুযায়ী ওমান থেকে গত এক বছরে অভিবাসীর সংখ্যা কমেছে ১৭ শতাংশ। সূত্রের হিসাব অনুযায়ী গত এক বছরে ৭০ হাজার ৭৮১ জন অভিবাসী ওমান থেকে তাদের নিজ দেশে চলে গেছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ওমানে সবমিলিয়ে অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৯৭৫ জন, আর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এসে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৩০ হাজার ১৯৪ জন। যার অর্থ, গত এক বছরে ওমান ছেড়েছেন ৭০ হাজার ৭৮১ জন। ওমানে গত দুই বছরে নির্মাণ খাতে কর্মরত মোট প্রবাসীর সংখ্যা ১৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়া এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে দেশটির সরকার এমন ওমানীকরণ নীতিতে ঝুঁকছে।