Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

করোনাভাইরাস ঠেকাতে দক্ষিণ কোরিয়া যেভাবে বিশ্বের রোলমডেল

corona-koreaকরোনাভাইরাস ঠেকাতে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার অনেক কম। আর এর মূলে রয়েছে সবচেয়ে কম সময়ে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ এবং আগের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো। এ জন্য বিশ্বের কাছে দক্ষিণ কোরিয়া পরিণত হয়েছে রোলমডেলে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা মোকাবিলার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে শনাক্ত করা হয় করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে। আর সে জন্য খুব অল্প সময়ের মধ্যে ওই ব্যক্তিকে আলাদা করে রাখা ও চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম থাকে।

chardike-ad

এরই মধ্যে সরকারি ও বেসরকারিভাবে করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য ৯৬টি পরীক্ষাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে দেশটিতে। এর ফলে বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় কম সময়ে সবচেয়ে বেশি মানুষের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। এমন প্রচেষ্টার ফলে জীবন বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করছেন দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

korea-coronaবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, অন্যান্য দেশের তুলনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম। যেখানে সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনায় মৃত্যুর হার মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। দেশটিতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সাত হাজার ৮৬৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৬৬ জনের।

দক্ষিণ কোরিয়ায় পরীক্ষাগারগুলোতে বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ে করোনা শনাক্তের প্রক্রিয়ায় রাতদিন ব্যস্ত থাকছেন কর্মীরা। এই প্রক্রিয়া হলো পলিমারেস চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর)। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে।

ল্যাবরেটরি মেডিসিন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক গিয়ে কিয়ল কোউন এই প্রক্রিয়াটিকে ‘বালি বালি’ বলে সম্বোধন করেছেন। কোরিয়ায় ‘বালি’ শব্দটির অর্থ ‘দ্রুত’। প্রক্রিয়াটিকে ‘বালি’ বলার কারণ, দক্ষিণ কোরিয়া দ্রুত করোনা শনাক্তের জন্য দেশটির পরীক্ষাগারগুলোর সঙ্গে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।

তবে এমন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। এর আগে মার্স ভাইরাসে দেশটির ৩৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এর পর থেকেই নতুন কোনো ভাইরাস আক্রমণ করলে তা থেকে রক্ষার যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখে দক্ষিণ কোরিয়া। আর সেটিই এখন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কাজে লাগাচ্ছে দেশটি। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য বিশেষ একটি বিভাগও তৈরি করে রেখেছে দক্ষিণ কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। এরই মধ্যে এই বিভাগের সব ধরনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানানো হয়।

corona-koreaঅধ্যাপক কোউন বলেন, ‘আমি মনে করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে আলাদা করে রাখার মাধ্যমে আমরা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমাতে পারছি। এর ফলে দক্ষিণ কোরিয়া সারা বিশ্বের জন্য একটি রোলমডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’

দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা শনাক্তের জন্য সরঞ্জামের স্বল্পতা নেই। সেখানে এসব সরঞ্জাম তৈরির জন্য চারটি কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সপ্তাহে দেশটিতে এক লাখ ৪০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব।

দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কিম ইওন-জা বলেন, ‘আমাদের পক্ষে সব রোগীকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা ও চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। যাদের অবস্থা গুরুতর নয়, তাদের বাসায় থেকে চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া উচিত।’

ডা. কিম আরো বলেন, ‘আমরা এ ধরনের ভাইরাস মোকাবিলায় নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করেছি। ইতালির মতো অন্যান্য যেসব দেশে করোনাভাইরাস অনেক বেশি সংক্রমিত হয়েছে, তাদেরও উচিত কৌশল পরিবর্তন করা।’

সৌজন্যে- এনটিভিবিডি