Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

উওনের মানের ঊর্ধ্বগতিতে ঝুঁকিতে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি

২৪ জুন ২০১৪:

ডলারের বিপরীতে দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা ওনের মান ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। চলতি মাসে তা রেকর্ড গড়েছে, যা ২০০৮ সালে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের পর সর্বোচ্চ। দেশটির শিল্প-কারখানাগুলোর জন্য সহায়ক মাত্রার অনেক উপরে ওনের এই বিনিময় হার। এতে করে দেশটির অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। খবর নিক্কেই।

chardike-ad

Korean-Won-Notes-and-Changeগত শুক্রবার ডলারের বিপরীতে ওনের মান সবচেয়ে বেড়েছে। সিউলে প্রতি ডলার ১ হাজার ২০ ওনের কিছু বেশিতে লেনদেন হয়েছে; যা গত ১১ জুনের ডলারপ্রতি ১ হাজার ১৫ ওনের চেয়ে সামান্য কম। ঐ দর গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

হুন্দাই রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক হং জুন পিও এ প্রসঙ্গে বলেন, ওনের সাম্প্রতিক এ উত্থান বর্ধনশীল বিদেশী বিনিয়োগের কারণে। এমনিতেই চলতি হিসাবে নিরবচ্ছিন্ন উদ্বৃত্তের কারণে বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়াকে নিরাপদ হিসেবে দেখে আসছেন বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা এখানকার শেয়ারে অর্থলগ্নি করছেন।

মূলত রফতানি ভালো হওয়ার সুবাদে গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত রেকর্ড ৫৭ শতাংশ বেড়ে ৭৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে তা আগের বছরের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেড়েছে।

বর্তমানে ডলারের বিপরীতে ওনের মান যেভাবে বাড়ছে তাতে রফতানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রফতানিকে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলা হয়। এতে যদি কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তার মাশুল দিতে হবে গোটা অর্থনীতিকেই।

রফতানিকারকদের ওপর কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের (কেআইটিএ) এক জরিপে দেখা যায়, ডলারের বিপরীতে গড়ে ১ হাজার ৭৩ ওনকে সহায়ক হিসেবে দেখা হয়। যদিও টেক্সটাইল, রাবার ও প্লাস্টিক শিল্পের ক্ষেত্রে তা ১ হাজার ৭৬ ওন। তবে নিজেদের ব্র্যান্ডের সুপরিচিতি ও প্রতিযোগিতামূলকভাবে দাম হ্রাসের কারণে প্রথম সারির কোম্পানিগুলো এখনো মুদ্রার এ উত্থান থেকে নিজেদের কিছুটা সুরক্ষিত রাখতে পেরেছে। কিন্তু ওনের এ বিনিময় হার ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের কোম্পানিগুলোর কাছে এরই মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত হয়ে উঠেছে।

ওনের মান শক্তিশালী হওয়ায় যেসব কোম্পানি শঙ্কিত তার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলো অন্যতম। জাপানের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এদের প্রতিযোগিতা করতে হয় বলে পরিস্থিতি তাদের জন্য আরো কঠিন হয়ে পড়ছে। কোরিয়ার অটোমোটিভ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ডলারের বিপরীতে ১০ ওন মান বাড়লে গোটা কোরীয় গাড়ি শিল্পের বছরে ক্ষতি হয় ৪২০ বিলিয়ন ওন। ইলেকট্রনিক পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর তুলনায় কোরীয় গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলো স্থানীয়ভাবে উত্পাদন বেশি করে। ফলে ওনের মান বেশি হলে তাদের প্রভাবিত হওয়ার মাত্রাও থাকে উপরের দিকে।

কোরীয় এক্সচেঞ্জের প্রতিবেদন অনুসারে, এখানে নিবন্ধিত ৫০২টি কোম্পানি যাদের অর্থবছর শেষ হয়েছে ডিসেম্বরে, তাদের পরিচালন মুনাফা কমেছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কোম্পানিগুলোর এ মুনাফা কমে।

দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধারণা করছে, চলতি বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪ শতাংশ। তবে ওনের মান বাড়লে তা আরো কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
এদিকে সরকার মুদ্রা বিনিময় বাজারে বারবার হস্তক্ষেপ ও নিজেদের উদ্যোগে ডলার ক্রয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। যদিও মুদ্রাবাজারে হস্তক্ষেপের বিষয়টি সোজা চোখে দেখছে না যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ।