Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ফ্রান্স-জার্মানী ম্যাচঃ ইতিহাস জার্মানদের পক্ষে

৪ জুলাই ২০১৪:

জার্মানি, ফ্রান্স ইউরোপের দুই পাওয়ার হাউস; কিন্তু শুক্রবার তাদের মধ্যে একটি দেশকে ব্রাজিল বিশ্বকাপকে বিদায় জানাতে হবে। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে শুক্রবার রাত ১০টায় মুখোমুখি হবে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। অল-ইউরোপিয়ান ম্যাচে ক্ল্যাসিক লড়াইয়ের আশা করছে সবাই। তবে বিশ্বকাপে জার্মানি-ফ্রান্স লড়াইয়ের ইতিহাস অনেক পুরনো। শুক্রবারের বিশ্বকাপে তারা চতুর্থবার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। এর আগে তিনবার সাক্ষাতের দুইবারই জিতেছে জার্মানি। আরও উল্লেখ করে বললে, শেষ দুইবারই জয়ীর আসনে রয়েছে জার্মানরা। দুটি প্রীতি ম্যাচে অবশ্য দুদল সমানে সমান। দুদলের লড়াইয়ের অতীত ইতিহাস তাই জার্মান শিবিরিকেই ছায়া দিচ্ছে।

chardike-ad

France-Germany-Match-Forecastsবিশ্বকাপে দুদলের লড়াইয়ের গৌরবগাথা শুরু হয়েছিল ১৯৫৮ সালে। সুইডেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ ছিল সেটি। গটেনবার্গে ২৮ জুনের ম্যাচে ফ্রান্স অবশ্য বিধ্বস্ত করেছিল পশ্চিম জার্মানিকে। ওই একবারই জিতেছিল ফ্রান্স। ৬-৩ গোলের বড় জয় পেয়েছিল ফরাসিরা। সেমিফাইনালে স্বাগতিক সুইডেনের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল জার্মানি। আর পেলের ব্রাজিলের কাছে ৫-২ গোলে হেরেছিল ফ্রান্স। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে নিজেদের বিশ্বকাপকে আলোকিত করেই ব্লুজরা ঘরে ফিরেছিল। ম্যাচে জার্মানদের জালে চারবার বল পাঠিয়েছিলেন ফরাসি কিংবদন্তি জো ফন্টেইন। বাকি দুই গোল করেছিলেন রেমন্ড কোপা ও ডুইস। জার্মানির তিন গোলদাতা হলেন সিসলারজিক, রান, শাফার। ওই আসরেই ফন্টেইন ১৩ গোল করেছিলেন। যা বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড হয়ে এখনও অক্ষত রয়েছে।

বিশ্বকাপে ফ্রান্স-জার্মানির দ্বিতীয় সাক্ষািট ক্ল্যাসিক লড়াইয়ের উদাহরণ। বিশ্বকাপের সর্বকালের ক্ল্যাসিক ম্যাচের কাতারে এই ম্যাচ ঠাঁই পায় এখনও। ১৯৮২ বিশ্বকাপে স্পেনের মাটিতে দুদলের ম্যাচটি ফুটবলপ্রেমীদের মন ভরিয়ে দিয়েছিল। সেভিলায় ৮ জুলাই, নির্ধারিত ১২০ মিনিট সময়ের ম্যাচ ৩-৩ গোলে ড্র ছিল। পরে টাইব্রেকারে কপাল পোড়ে ফরাসিদের। ৫-৪ গোলে হেরে বিদায় নেয় ফ্রান্স। ৯০ মিনিট ১-১ গোলে ড্র হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচ। ৯৮ মিনিটের মাঝেই ট্রেসর ও গিরেসির গোলে ৩-১ এ এগিয়ে যায় ফ্রান্স। কিন্তু নাটক তখনও বাকি ছিল। ৬ মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে ম্যাচে সমতা নিয়ে আসে জার্মানি। টাইব্রেকারে সিক্স ও বসসিস গোল করতে ব্যর্থ হলে হূদয়ভাঙে ফ্রান্সের।

কাকতলীয়ভাবে ১৯৮২ বিশ্বকাপের চার বছর পর আবারও মুখোমুখি হয় দুই ইউরোপিয়ান। এবারও মেক্সিকো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে দেখা হয় দুদলের। গোয়াডালাজারায় ২৫ জুনের ম্যাচে অতীতের মতো জার্মানদের সামনে দুর্গ গড়তে সক্ষম হয়নি ফ্রান্স। বরং একপেশে ম্যাচে পশ্চিম জার্মানি ফাইনালের টিকিট কেটেছিল। ব্রিমির ফ্রি কিক থেকে করা গোলে ৯ মিনিটের মাথায় ১-০তে এগিয়ে যায় জার্মানি। ৮৯ মিনিটে ভোলার দলের পক্ষে দ্বিতীয় গোলটি করেন। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ফ্রান্স ৪-২ গোলে হারিয়েছিল বেলজিয়ামকে। আর ফাইনালে ওঠা জার্মানিকে কান্নায় ভাসিয়েছিলেন ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। ফাইনালে ৩-২ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর্জেন্টিনা।

১৯৭৭ সাল, বিশ্বকাপজয়ী পশ্চিম জার্মানি প্রীতি ম্যাচ খেলতে প্যারিসে গিয়েছিল; কিন্তু বেকেনবাওয়ারের দলকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল ফ্রান্স। ২০১৩ সালে সর্বশেষ প্রীতি ম্যাচ দুদলের। এবার প্যারিসে শেষ হাসি জার্মানির দখলে। ৩-১ গোলে স্বাগতিকদের হারিয়েছে জার্মানরা। ভালবুয়েনার গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। মুলার সমতা আনেন ম্যাচে। সামি খেদিরা জার্মানদের পক্ষে করেন জয়সূচক গোল।

বিশ্বকাপে জার্মানি-ফ্রান্সের লড়াইয়ের চতুর্থ পর্ব আজই মঞ্চস্থ হবে। দুদলই দুর্দান্ত ছন্দে রয়েছে। অভিজ্ঞ-তারুণ্যের মিশেলে গড়া ফরাসিদের দলটি সৌরভ ছড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বকাপে। দ্বিতীয় রাউন্ডে নাইজেরিয়ার বাধাও টপকে গেছে তারা। জার্মানিও পিছিয়ে নেই। আলজেরিয়াকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে তারা। জোয়াকিম লোর দলের বড় প্লাস পয়েন্ট তাদের অভিজ্ঞতা, বল পায়ে দুরন্ত গতি। অতীতে চোখ রাখলে ফ্রান্সকে ম্রিয়মাণ মনে হবে ফলের বিচারে। তবে ম্যাচের ভিতরে দৃষ্টি দিলেই বোঝা যাবে ফরাসিরাও শেষ বিন্দু দিয়ে লড়েছে। চলমান বিশ্বকাপে দুদলের সার্বিক অবস্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে— আজ আরেকটি সেয়ানে-সেয়ানে লড়াই দেখবে ফুটবলবিশ্ব।