ওসি আল আমিনের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলছেন স্বজনরা

 

chardike-ad

গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে জাজিরা থানা ভবনের দ্বিতীয় তলার নিজ কক্ষ থেকে ওসি আল আমিনের (৪৫) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তার এভাবে মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। সালমা আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যেভাবে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে আত্মহত্যা করেনি। আর কেনই বা আত্মহত্যা করবে? যারা বলেছে, আত্মহত্যা করেছে তারা আসল কারণটা আমাদের জানাক। তাকে হত্যার পর ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। এজন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, ভাইয়ের মৃত্যুর আসল রহস্য তদন্ত করে বের করার।’

আল আমিনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বরিশালের মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের কাজীরচর গ্রামের মৃত বেলায়েত হোসেন ব্যাপারীর ছেলে আল আমিন। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ছিলেন সবার ছোট। তার স্ত্রীর নাম শরিফুন্নেছা। এই দম্পতির রাদিয়া ও রাফিয়া নামে যমজ দুই কন্যা রয়েছে। তারা রাজধানীর ভিকারুন্নেছা নূন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর জাজিরা থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন। চাকরি হওয়ার পর খুব একটা গ্রামে না এলেও ফোনে আত্মীয়-স্বজন, ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগযোগ করতেন। সবার বিপদে সাহায্য করতেন।

ওই দিন লাশ উদ্ধারের পর শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আল আমিন আত্মহত্যা করেছেন।’

একই দিন শরীয়তপুর পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘ওসি আল আমিনের গলায় গামছা প্যাঁচানো ছিল। তার শরীরে অন্য কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।’

আল আমিন মানসিক চাপে কিংবা কোনও বিষয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন কিনা তা কারও সঙ্গে শেয়ার করেনি জানিয়ে আল আমিন এর মেজো ভাই আবুল কালাম  বলেন, ‘এসব বিষয়ে স্ত্রী-সন্তানকেও বলেনি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আমরা কিছু বলতে চাই না। শুধু এইটুকু বলবো, এটি হত্যাকাণ্ড। লাশ যেভাবে পাওয়া গেছে, আত্মহত্যা করার কোনও নমুনা সেখানে আমি দেখিনি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আমার অনুরোধ, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে কোনোভাবেই যেন কোনও অদৃশ্য শক্তির হাত না পড়ে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রতিবেদন হলে যদি আত্মহত্যা হয়ে থাকে তাহলে আমরা মেনে নেবো। এজন্য স্বচ্ছ সঠিক একটা প্রতিবেদন হোক।’

স্বামীর মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ স্ত্রী শরিফুন্নেছা। দুই সন্তানকে নিয়ে এখনও বাকরুদ্ধ অবস্থায় আছেন। এর ফাঁকে কেঁদে কেঁদে বলেছেন, ‘আল আমিন আত্মহত্যা করেনি। তার মুত্যু কীভাবে হয়েছে, সে রহস্য আমি পুলিশের দায়িত্বশীলদের কাছে জানতে চাই। এজন্য সরকার এবং পুলিশ বিভাগের সহায়তা চাই। এর সঠিক তদন্ত হোক। আমার দুই অবুঝ সন্তানের দিকে তাকিয়ে হলেও এই মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করুক পুলিশ।’

এ ব্যাপারে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ওসি আল আমিনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার বড় ভাই একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। এ ছাড়া ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করার জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পেলে তার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘অধিকতর তদন্তের জন্য সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে ফরেনসিক বিভাগ। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে আমরা নিশ্চিত হবো, কীভাবে মৃত্যু হয়েছে।’