রবিবার । জুন ১৫, ২০২৫ । ৯:৩৪ অপরাহ্ন
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক খেলা ১৩ মে ২০২৫, ৬:০৭ অপরাহ্ন
শেয়ার

বিরাট কোহলির অবসর নেওয়ার পেছনে পরিবারকে সময় দেয়াই কারণ


কোহলির অবসর নেওয়ার পেছনে পরিবারকে সময় দেয়াই কারণ

টেস্ট ক্রিকেট থেকে গতকাল বিরাট কোহলির অবসর ঘোষণায় অবাক হয়েছেন অনেকেই। আগামী মাসে টেস্ট সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড সফরে যাবে ভারত। অথচ তার আগে কিনা এ সংস্করণ থেকে সরে দাঁড়ালেন কিংবদন্তি।

ইংল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান কেভিন পিটারসেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বিরাট’ লিখে পাশে প্রশ্ন ও বিস্ময়বোধক চিহ্ন বসিয়ে বুঝিয়েছেন তাঁর অবসরের এ সিদ্ধান্তে তিনি অবাক। ভারতের সাবেক স্পিনার হরভজন সিং সরাসরি লিখেছেন, ‘কেন অবসরের সিদ্ধান্ত?’

এমন প্রশ্ন তুলেছেন আরও অনেকেই। কিন্তু অবসরের সিদ্ধান্ত নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে গতকাল জানানোর পর কোহলি আর এ নিয়ে মুখ খোলেননি।

তাই ৩৬ বছর বয়সী ক্রিকেটারকে নিয়ে ভক্তদের মুখে মুখে ঘুরে ফেরা একটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। প্রশ্নটি হলো—কেন টেস্ট ছাড়লেন কোহলি?

সংবাদমাধ্যমটি নিজেদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত মাসের প্রথম সপ্তাহে বিসিসিআইয়ের প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকার এবং ভারতীয় ক্রিকেটের ক্ষমতাবান এক প্রশাসক কোহলির একটি খুদে বার্তা পান। সেই খুদে বার্তায় কোহলি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ইচ্ছা জানানোর পাশাপাশি ওয়ানডে চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন।

পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানোর ইচ্ছা টেস্ট থেকে কোহলির সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, বিসিসিআই কোহলির টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য প্রস্তুত ছিল না। বিশেষ করে যখন ইংল্যান্ড সফর দোরগোড়ায়।

আগারকার এবং বোর্ড কর্তারা কোহলিকে অনুরোধ করেছিলেন, তাড়াহুড়া করে এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে। কোহলিকে আরেকটু সময় নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু কোহলি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলেন ও বিসিসিআই কর্তারাও তাঁকে সেখান থেকে সরাতে পারেননি।

গত ৭ মে কোহলি আবারও বিসিসিআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি তাঁদের জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবসরের ঘোষণা দিতে চান। বিসিসিআই থেকে তখন তাঁকে আবারও বলা হয়, জনসমক্ষে ঘোষণাটি দেওয়ার আগে কিছুদিন সময় নিতে। তখন ভারত-পাকিস্তান সংঘাতও চলছিল।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পর কোহলি বিসিসিআইয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং নির্বাচকদের জানান, টেস্ট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত তিনি সবাইকে জানাবেন এবং এ বিষয়ে ঘোষণাটা দেবেন সোমবার (গতকাল)। অনেকের কাছে এই সিদ্ধান্ত বিস্ময় হয়ে এলেও কোহলি চেয়েছেন পরিবারকে আরও বেশি সময় দিতে। সে জন্যই সরে দাঁড়ালেন টেস্ট থেকে।

নিজের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম উপলক্ষে গত বছর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে খেলতে পারেননি কোহলি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে জরুরি চিকিৎসার কারণে ইংল্যান্ডেও উড়াল দিয়েছিলেন। একটু সময় পেলেই পরিবারের সঙ্গে কাটাতে কোহলি উড়াল দিয়েছেন ইংল্যান্ডে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজে গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর বিশেষ ফ্লাইটে করে ভারতে পৌঁছান কোহলি। মুম্বাইয়ে শিরোপাজয় উদ্‌যাপনে বাস-প্যারেডেও অংশ নেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সেদিন রাতেই ইংল্যান্ডে উড়াল দেন কোহলি।

গত বছর নভেম্বর থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ হারে ভারত। বিসিসিআই থেকে এরপর নির্দেশনা দেওয়া হয়, দীর্ঘমেয়াদি সফরে খেলোয়াড়েরা পরিবারের সঙ্গে ১৪ দিনের বেশি সময় কাটাতে পারবেন না। বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত কোহলি ভালোভাবে নেননি বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

আইপিএলে নিজ দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ইনোভেশন ল্যাব সামিটে কোহলি এ নিয়ে বলেছিলেন, ‘মানুষের কাছে পরিবারের ভূমিকা বোঝানো খুব কঠিন…এটা খুব মৌলিক ব্যাপার যে তীব্র অনুভূতির কারণেই আমরা বারবার পরিবারের কাছে ফিরে যাই। পরিবারের কী মূল্য, আমার মনে হয় না লোকে সেটা বোঝে।’

কোহলি এরপর যোগ করেন, ‘আমি নিজের কামরায় একাকী মুখ গোমড়া করে থাকতে চাই না। আমি স্বাভাবিক থাকতে চাই। এটা হলে আপনি সত্যি সত্যিই নিজের খেলাটাকে দায়িত্ব হিসেবে দেখতে পারবেন। এটা কোনো অস্পষ্ট ধারণা নয়, সত্যিকার অর্থেই আপনি (মাঠে) নিজের দায়িত্ব সেরে বাসায় ফিরবেন ও পরিবারের সঙ্গে জীবনটাও স্বাভাবিক লাগবে। আমার কাছে এমন একটি দিন কাটানোর আনন্দ অপরিমেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর কোনো সুযোগই আমি হাতছাড়া করতে চাই না। তাই এটা (বিসিসিআইয়ের নির্দেশনা) নিয়ে আমি হতাশ। কারণ যা কিছু ঘটছে, সেসবের ওপর যাদের কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই, তাদের (পরিবার) এই আলোচনায় টেনে আনা হয়েছে এবং সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাদের এসবের বাইরে রাখা প্রয়োজন।’