শনিবার । জুন ২১, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক তথ্যপ্রযুক্তি ১৫ মে ২০২৫, ৬:১৩ অপরাহ্ন
শেয়ার

প্রযুক্তি কেড়ে নিচ্ছে পারিবারিক ঘনিষ্ঠতা!


প্রযুক্তি কেড়ে নিচ্ছে পারিবারিক ঘনিষ্ঠতা

একটা সময় পরিবার মানে ছিল একসঙ্গে বসে খাওয়া, গল্প করা, আড্ডা কিংবা ছুটির দিনে কোথাও বেড়াতে যাওয়া। কিন্তু এখন সেই দৃশ্যপট অনেকটাই বদলে গেছে। প্রযুক্তির অগ্রগতিতে জীবন হয়েছে গতিশীল, কিন্তু সেই গতির চাপে একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবারের ঘনিষ্ঠতা। বিশেষ করে হারাতে বসেছে বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যে আন্তরিক যোগাযোগ। আজ, আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসে এমন এক বাস্তবতার দিকে তাকানো জরুরি, যেখানে প্রযুক্তির ছায়া পড়েছে পরিবার নামক সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধনটির ওপর।

দৈনন্দিন জীবনে শহর কিংবা গ্রামে, সর্বত্র দেখা যায় শিশুদের হাতে মোবাইল, ট্যাব বা ল্যাপটপ। পড়াশোনার কারণে যাত্রা শুরু হলেও তা গেমস, ইউটিউব কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় গিয়ে ঠেকে। অন্যদিকে, বাবা-মায়েরা‌ও প্রযুক্তির ভিন্ন রূপে বন্দী। কেউ অফিসের কাজে ব্যস্ত, কেউবা ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ চেক করতে করতে ভুলে যাচ্ছেন সন্তানের দিকে তাকাতে। একই ছাদের নিচে থেকে যেন সবাই ভিন্ন জগতে বাস করছে। এই অবস্থাকে আমরা বলতে পারি ‘ডিজিটাল ডিসকানেকশন’।

এই বিচ্ছিন্নতার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে শিশুর মানসিক ও আবেগগত বিকাশে। যোগাযোগের অভাবে শিশুরা হয়ে পড়ছে অন্তর্মুখী, ভুগছে হীনমন্যতায়, অথবা করছে অস্বাভাবিক আচরণ। পরিবার যেখানে একটি নিরাপদ শান্তির আশ্রয় হওয়া উচিত, সেখানে আজ অনেক শিশুই তাদের অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ হারাচ্ছে। শিশুরা তখন নিজের দুনিয়া তৈরি করে নিচ্ছে ভার্চুয়াল জগতে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠতে পারে।

তবে দোষ প্রযুক্তির নয়, বরং আমরা কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি সেটাই মূল বিষয়। সময় ও সম্পর্কের বদলে যদি প্রযুক্তি অগ্রাধিকার পায়, তাহলে পরিবারে যোগাযোগ দুর্বল হবেই। কিন্তু সঠিক নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তি সম্পর্ককে দূরে সরিয়ে দেয় না, বরং কাছে আনার সুযোগও তৈরি করে। যেমন ভিডিও কলে দূরে থাকা পরিবারের সঙ্গে সংযোগ, সন্তানের অনলাইন পড়ালেখায় সাহায্য করা ইত্যাদি। তাই মূল বিষয়টি হল ভারসাম্য বজায় রাখা।

তাই আমাদের সচেতন হ‌ওয়া প্রয়োজন। যেখানে বাবা-মা বুঝবেন, সন্তানের সঙ্গে মানসম্পন্ন সময় কাটানো মানে শুধু পাশে বসে থাকা নয়, বরং মনোযোগ দিয়ে কথা বলা, তাদের অনুভূতির মূল্য দেওয়া। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ‘ডিভাইস ছাড়া সময়’ কাটানো যেতে পারে শুধুমাত্র সন্তানের সঙ্গে। গল্প বলা, একসঙ্গে খেলা, রান্নাঘরে সাহায্য নেওয়া কিংবা পার্কে হাঁটতে যাওয়া এগুলো ছোট ছোট কাজ হলেও সম্পর্ককে মজবুত করতে পারে।

আবার আমাদের পরিবার চাইলেই প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে দারুণ উপায়ে। চাইলেই কেউ সপ্তাহে একদিন ‘ডিজিটাল ফ্রি ডে’ পালন করতে পারেন, কেউ রাতে খাওয়ার সময় মোবাইল নিষিদ্ধ করতে পারেন। এছাড়াও শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারিবারিক পাঠচক্র চালু করা যেতে পারে। এসব উদ্যোগ বাবা-মা-সন্তানের সম্পর্কের মাঝে হারিয়ে যাওয়া উষ্ণতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।

পরিবার হচ্ছে একমাত্র জায়গা, যেখানে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও নির্ভরতার জায়গা তৈরি হয়। প্রযুক্তির যুগে আমরা যদি সেই সম্পর্ককে অগ্রাধিকার না দিই, তাহলে ভবিষ্যতের সমাজ হবে আবেগশূন্য ও বিচ্ছিন্ন। আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসে তাই আমাদের ভাবতে হবে – সন্তানের হাতে মোবাইল দেওয়ার আগে, আমরা তাদের মনোজগতে প্রবেশ করতে কতটা সময় দিচ্ছি?

শুধু খাবার, জামা কিংবা স্কুল ফি দিলেই অভিভাবকের দায়িত্ব শেষ হয় না। সন্তানের জন্য সময় দেওয়া, কথা শোনা, হাসা, খেলা করা এসবই সবচেয়ে জরুরি। প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে যদি আমরা হৃদয়ের সেতু গড়ে তুলতে পারি, তবেই পরিবার থাকবে জীবন্ত, সম্পর্ক হবে মজবুত।

খবর: জাগো নিউজ