Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিশ্বের বৃহত্তম ‘অনাবাসী’ হোটেল

সাদা বালির সুদৃশ্য বেলাভূমিতে একের পর এক আছড়ে পড়ছে ঘন নীল সমুদ্রের ঢেউ। পাড় ঘেঁসে সবুজের সমারোহ। এখানে নীলের সঙ্গে সবুজের মিশেল ঘটেছে এক অদ্ভুত সৌন্দর্যে। এমনই এক নৈসর্গিক স্থানে সমুদ্রের তীর বরাবর বিলাসবহুল হোটেল। তবু পর্যটক নেই একজনও। সমুদ্রের ভেজা হাওয়ায় দীর্ঘশ্বাস মিশিয়ে ৭০ বছর ধরে শূন্য পড়ে রয়েছে বিশ্বের এই বৃহত্তম হোটেল।

image_92628_0জার্মানিতে তখন চলছে নাৎসি-রাজ। নির্বিচার হত্যা ও বিতাড়নের মধ্যে দিয়ে দুঃস্বপ্নের অধ্যায় কাটছে ইহুদিদের। বিশ্বজুড়ে ছিছিক্কার উঠেছে হিটলার ও তার সাঙ্গপাঙ্গের নামে। এরকমই এক সময়ে একটু অন্যরকম কিছু করার কথা ভাবলেন অ্যাডলফ হিটলার। জার্মানদের জন্য আরও একটু আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা আর নাত্সি-নাম ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রকাণ্ড এক হোটেল তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। জার্মানির রুয়েগেনে ব্যাল্টিক সাগরের ধারে তিন মাইলের থেকেও দীর্ঘ হোটেল প্রোরা তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯৩৬-এ। ৯ হাজার কর্মী তিন বছর ধরে এই হোটেল তৈরির কাজ করেন।

হোটেলে ঘরের সংখ্যা ১০ হাজার। যা এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বের নিরিখে প্রথম স্থানে। কিন্তু এক দিনের জন্যেও এখানে ঘর ভাড়া নেননি কোনো পর্যটক। এই হোটেলের সবকটি ঘরকেই সমান আকর্ষণীয় করতে প্রতিটি ঘরই সমুদ্রের দিকে মুখ করে রয়েছে। লম্বাটে এই হোটেলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আটটি একই রকম দেখতে বিল্ডিং। ২০ হাজার শয্যাবিশিষ্ট এই হোটেলের প্রতিটি ঘরই দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে ৫ বাই ২.৫ মিটার। রয়েছে দুটি করে খাট, একটি ওয়ার্ডরোব ও একটি সিংক। প্রতি ফ্লোরে রয়েছে বলরুম। যুদ্ধবাজ হিটলার কিন্তু এই হোটেলকেও নিছক পর্যটনের জন্য ভাবেননি। তাই একটি মিলিটারি হাসপাতালও রয়েছে এখানে।

এই হোটেল নিয়ে আরও অনেক চিন্তভাবনা ছিল হিটলারের। এমন এক সি-রিসর্ট গড়ে সারা বিশ্বকে চমকে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।

এর সঙ্গে এখানে সিনেমা হল, অনুষ্ঠান পালনের জন্য আলাদা হলঘর, সুইমিং পুল রাখার পরিকল্পনাও ছিল। এছাড়া সমুদ্রে প্রমোদতরী ভাসানোর জন্য আলাদা জেটির ব্যবস্থা করার কথাও চিন্তা করা হয়। ১৯৩৬ থেকে শুরু করে তিন বছর চলে এই হোটেল নির্মাণের কাজ। ৩৯ সালে বাধে যুদ্ধ। আর পর্যটন থেকে অস্ত্রশস্ত্রের দিকে মুখ ফেরান হিটলার। হোটেল নির্মাণ কর্মীদের যুক্ত করা অস্ত্র তৈরির কাজে। যুদ্ধের সময় সেনাদের থাকার জন্য এখানকার কয়েকটি ঘর ব্যবহার করা হয়।

বর্তমানে এখানকার একটি অংশ ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বেশিরভাগটাই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তবে হোটেল প্রোরাকে আধুনিক ভাবে সাজিয়ে ফের পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জার্মান সরকার।– ওয়েবসাইট।