গণঅভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের যেমন অর্থনৈতিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিল, বর্তমান সরকারের মধ্যেও তা রয়ে গেছে বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষ বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান- সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টচার্য।
আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) রাতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এনটিভি এবং ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) যৌথভাবে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘পতিত সরকারের চেয়ে কাঠামোগত কী পরিবর্তন এলো এই সরকারের সময়? কোথায় স্বচ্ছতা? পতিত সরকারের মত কোন স্বচ্ছতা দিলেন না। মেগা প্রজেক্ট যে অতিমূল্যায়িত ছিল, সেটা এখনো রয়ে গেছে।’
অস্বচ্ছতার সাম্প্রতিক উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পৃথকীকরণের মতো এত ভালো একটি উদ্যোগ আলোচনা ছাড়া করতে যাওয়ার পরিণতি এর বড় উদাহরণ, এমনই হবে।’
তিনি বলেন, ‘এনবিআর সেপারেশন আমাদের হোয়াইট পেপারেও (অর্থনীতির শ্বেতপত্রেও) ছিল। রাজস্ব সংস্কার কমিটির সুপারিশেও ছিল। … কিন্তু মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া, আলোচনার দ্বার খোলা না রেখে এই কাজ করলে, ভালো কাজও করা যায় না।’
অর্থনীতির রোডম্যাপ কোথায়? – এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘যারা বিনিয়োগ করবেন, তারা কি ছয় মাসের কথা মাথায় রেখে বিনিয়োগ করবেন?’
‘এই সরকার বৈধ সরকার, নির্বাচিত সরকার তো নয়। পরবর্তী সরকার এলে— তারা যে এর ধারাবাহিকতা রাখবে, তার নিশ্চয়তা কী?’ –বলেন তিনি।
ব্যাংক, জ্বালানি খাতকে অর্থনীতির ফুসফুস আখ্যায়িত করে তিনি এ দুটিকে ঠিক করার ওপর গুরুত্ব দেন।
‘কোনও কর্মসংস্থানের আলোচনা তো দেখছি না। কী বৈষম্যবিরোধী অবস্থান? এই সরকারকে প্রমাণ করতে হবে, গত সরকারের চেয়ে ভিন্ন কী তারা করলো’- তিনি আরও বলেন।
‘কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক ওই বাজেট আলোচনার আয়োজন যৌথভাবে করে এনটিটি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন ও অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি ইমরান হাসান বলেন, ‘বলা হয় বৈষম্য কমেছে। আসলে বৈষম্য আরো বেড়েছে। প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা কীভাবে ধসে যাচ্ছে, অন্যদিকে কর্পোরেটদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে— তারা দেশের বাইরে টাকা নিয়ে যাচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী সরকার যে কিছু সংস্কার বাস্তবায়নে বাধার মুখে পড়ছে, বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংকটের সময় সংস্কার করা আরও কঠিন — বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে। যারা সংস্কারের বিরোধিতা করছে, তারা ভালোভাবে সংগঠিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের আর কোথায় সরকারি কর্মচারীদের এমনভাবে ধর্মঘট করতে দেখা যায়? এমনকি এখানে একটি ‘জনতার প্ল্যাটফর্ম’ পর্যন্ত গড়ে উঠেছে। এটাই বাস্তবতা, আমাদের এদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে।’
আলোচনাটি পরিচালনা করেন এনটিভির বার্তা প্রধান জহিরুল আলম।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এবং সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ।