জাতীয় বাজেট ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবে অপ্রদর্শিত আয় বা কালোটাকা বৈধ বা সাদা করার সুযোগ রাখায় কড়া সমালোচনা করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তাদের মতে, এই প্রস্তাব বৈষম্য বাড়াবে এবং সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করবে।
আজ (৩ জুন) ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি গতকাল (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টার উপস্থাপিত ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব বিশ্লেষণ করেন বিশ্লেষকরা। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এ বাজেটের বিষয়ে বলেন, ‘এটি বৈষম্য আরও বাড়াবে।’
বাজেটের ওই বিধান অনুযায়ী, নির্ধারিত হারে বিশেষ কর পরিশোধের মাধ্যমে ব্যক্তি তার অপ্রদর্শিত আয় আবাসন বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করে বৈধ করার সুযোগ পাবেন।
যদিও গত বছরের তুলনায় এই করহার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে, তবু দীর্ঘদিন ধরে সিপিডি এই ব্যবস্থার বিরোধিতা করে আসছে।
বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এ ধরনের সুযোগ কর আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে। বরং কর কর্তৃপক্ষের উচিত হবে আইন-নিয়ম কঠোরভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে কর আদায় নিশ্চিত করা।
সিপিডির ভাষ্য, যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবৈধ অর্থ, অবৈধভাবে অর্থ পাচার ও কালোটাকার বিরুদ্ধে কাজ করছে, তখন এমন একটি বিধান উল্টো বার্তা দিচ্ছে।
সিপিডি বলেছে, ‘এটি জুলাই স্পিরিটের পরিপন্থি।’
ফাহমিদা খাতুন এ বিষয়ে বলেন, “বাজেটে অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বৈষম্যবিহীন স্পিরিটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কালো টাকা সাদা করাসহ অনেক সুযোগও রাখা হয়েছে যেগুলো স্পিরিটের বিপরীত। আমরা আশা করবো, অর্থ উপদেষ্টা এগুলো রিভাইস করে ব্যবস্থা নেবেন।”
বাজেটে প্রস্তাবিত শুল্ক কমানোর বিষয়েও মন্তব্য করেছে সিপিডি। এর মধ্যে ১১০টি পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, ৯টি পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাতিল এবং আরও ৫০৭টি পণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাসের কথা রয়েছে।
সিপিডির মতে, এসব পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আনা হয়েছে।
যদিও কৌশলগতভাবে এগোনোর জন্য এসবের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে সিপিডি সতর্ক করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো নির্দিষ্ট কোনো দেশকে অগ্রাধিকার দিলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ’ (এমএফএন) নীতির লঙ্ঘন হতে পারে এবং ভবিষ্যতের বাণিজ্য আলোচনায় বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হতে পারে।
ড. ফাহমিদা বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্কে ছাড় দেওয়া হয়, তাহলে অন্য দেশকেও দিতে হবে। নইলে ডব্লিউটিও-এর নিয়ম লঙ্ঘন হবে। পাশাপাশি এনবিআরের রাজস্ব আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে আগেভাগেই শুল্ক ছাড় দেওয়া হলে সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) বাংলাদেশের দরকষাকষির ক্ষমতাও হ্রাস পাবে।
এই বিশ্লেষণ সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের নেতৃত্বে প্রস্তুত করা হয়, যেখানে প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং অন্যান্য জ্যেষ্ঠ ও গবেষকরা অবদান রাখেন।