জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা বজায় থাকলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২১০০ সাল নাগাদ প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি ৯ শতাংশ সংকুচিত হবে। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা করা হয়। খবর সিনহুয়া।
‘অ্যাসেসিং দ্য কস্টস অব ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডাপ্টেশন ইন সাউথ এশিয়া’নামের এ প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তায় ২১০০ সাল নাগাদ বার্ষিক ক্ষতি সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ হতে পারে।
এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বিন্দু লোহানি এ প্রসঙ্গে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি এখন মারাত্মক হুমকির সামনে দাঁড়িয়ে। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চলে বসবাসরত লাখো মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর জীবনও এ কারণে হুমকির মধ্যে রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মালদ্বীপ ও নেপাল। ২১০০ সাল নাগাদ প্রতি বছর দেশ দুটির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যথাক্রমে ১২ দশমিক ৬ এবং ৯ দশমিক ৯ শতাংশ করে। এছাড়া বাংলাদেশ ৯ দশমিক ৪, ভারত ৮ দশমিক ৭, ভুটান ৬ দশমিক ৬ এবং শ্রীলংকার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাড়ে ৬ শতাংশ।
এ সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো উদ্যোগ নেয়া না হলে তাপমাত্রা বাড়ার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে খাদ্য উৎপাদনে তা মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। ফলাফল হিসেবে ২০৮০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলংকায় চাল উৎপাদন ২৩ শতাংশ কমবে।
পাশাপাশি তাপমাত্রা বাড়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বৃদ্ধি পাবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি ১ মিটার বাড়ে, তাহলে সাড়ে নয় কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে জলোচ্ছ্বাস বাড়লে ভুক্তভোগীর তালিকায় ১০ কোটি মানুষ যোগ হবে। বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন হলে এ অঞ্চলে জ্বালানি ও পানির চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়বে। এর ফলে ডেঙ্গু ও ডায়রিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে।
এডিবির মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা হ্রাস এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে এখনই উপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। কোপেনহেগেন-কানকুন চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে পারলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে। ম্যানিলাভিত্তিক দাতা সংস্থাটি আশা করছে, এ ধরনের উদ্যোগ নিতে সফল হলে ক্ষতির পরিমাণ ২০৫০ সাল নাগাদ বছরে ১ দশমিক ৩ এবং ২১০০ সাল নাগাদ তা আড়াই শতাংশ হারে কমানো সম্ভব হবে। বণিকবার্তা।