জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নতুন পরিকল্পনায় এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ প্রবাসী ভোটারের জন্য ভোটাধিকার কার্যকর করতে আপাতত আইটি-ভিত্তিক পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সংস্থাটি। ‘প্রক্সি পদ্ধতি’র প্রস্তাব রাজনীতিকদের কাছে সাড়া না পেয়ে তা থেকে সরে এসেছে ইসি।
বর্তমানে প্রবাসীদের ভোটগ্রহণে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির কার্যকারিতা এবং সম্ভাব্য খরচ যাচাই করছে ইসি। ডাক ও বেসরকারি কুরিয়ার সংস্থাগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ডাক বিভাগের হিসাবে, এক ব্যালট পাঠাতে ও ফেরত আনতে ৪০০–৫৫০ টাকা খরচ হতে পারে। বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসাবে খরচ গড়ে প্রায় ৫ হাজার টাকা (৪০–৪৫ ডলার)।
ইতোমধ্যে ইসি পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইন ভোটদান ব্যবস্থা চালুর জন্য ‘পাইলট প্রকল্প’ চালুর পরিকল্পনা করছে। তবে জাতীয় নির্বাচনে তা এখনই চালু সম্ভব নয়, বলছেন নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ।
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, দেশ গঠনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই তাদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।
এই ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিষয়টি বাস্তবায়নে সক্রিয় হয়ে ওঠে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রবাসীদের ভোটগ্রহণ পদ্ধতি নির্ধারণে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে সংস্থাটি। প্রথমে ৮ এপ্রিল একটি কর্মশালা এবং পরে ২৯ এপ্রিল একটি সেমিনার আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেয় ২৪টি রাজনৈতিক দল।
তবে এই আলোচনায় দেখা যায়, প্রস্তাবিত ‘প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতি’ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। মাত্র ৮টি দল প্রক্সি পদ্ধতির পক্ষে মত দেয়, যা গ্রহণযোগ্য সমর্থনের জন্য যথেষ্ট নয়। এর বিপরীতে অনলাইন ও পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির পক্ষে বেশিরভাগ দল মতামত দেয়। ১৮টি দল অনলাইনের পক্ষে এবং ১৫টি দল পোস্টাল ব্যালটের পক্ষে অবস্থান নেয়।
এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন প্রবাসীদের ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি ও আইটি-ভিত্তিক অনলাইন রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতির ওপর জোর দিচ্ছে। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার কার্যকর করতে হলে এই দুই পদ্ধতির বাস্তবায়নযোগ্যতা ও ব্যয় সম্ভাবনা যাচাই করা হচ্ছে।
বর্তমানে সীমিত পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলটিং) অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি চালুর সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে ইসি। এতে করে একদিকে যেমন প্রবাসীদের জন্য ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে এই নতুন উদ্যোগ বাংলাদেশকে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।


































