Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মুজিবের খুনিরাই শেখ হাসিনার নেতা-মন্ত্রী: তারেক

৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের  ক্ষেত্র প্রস্ততকারীরা বা হত্যাকারীরাই  শেখ হাসিনার নেতা বা তার নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

রোববার লন্ডনের কুইন মেরী ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত ‘স্ট্র্যাটেজি ফর এ প্রসপারাস বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক  সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

chardike-ad

তারেক রহমান বলেন, ‘যারা ১৫ আগস্ট শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র তৈরী করেছিলেন, মুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানাতে চেয়েছিলেন, মিডিয়ায় সাক্ষাতকার দিয়ে বলেছিলেন-শেখ মুজিব ছিলেন স্বৈরাচারী, যারা মুশতাক মন্ত্রীসভার শপথে গিয়েছিলেন, শপথ পরিচালনা করেছিলেন, সেইসব লোকরাই এখন শেখ হাসিনার নেতা-মন্ত্রী। ক্ষমতালোভী শেখ হাসিনা ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে তার পিতার হত্যাকারী কিংবা হত্যার  ক্ষেত্র প্রস্তুতকারীদের সঙ্গে  রেখেছেন।’

tarek photo_48918আর ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য ‘কাউকে দোষারোপ করার আগে মুজিব হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য সেই সময় ইনু বাহিনীর ভুমিকা কি ছিলো সেটি তদন্ত করা প্রয়োজন।’ মন্তব্য তারেকের।

তারেক রহমান বলেন, ‘মুজিব হত্যাকাণ্ডের সময়কার ঘটনা দেখা এবং জানার মানুষের সংখ্যা এখনও অনেক।’

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে শেখ মুজিবের জ্ঞাতসারেই তিনটি ট্যাংক ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাজপথে বেরিয়ে এসেছিলো। ইনু বাহিনীর হাত থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতেই এইসব ট্যাংক নামাতে বাধ্য হয়েছিলেন শেখ মুজিব। কারণ ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিলো।’

‘রাজপথে ট্যাংক নামানোর মতো এই পরিস্থিতি তৈরী করলো কারা? কোন দল? কোন বাহিনী?’ প্রশ্ন তারেক রহমানের।

তারেক রহমান বলেন, “মুজিব হত্যার পর আওয়ামী লীগ নেতা মুশতাক রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক সমাবেশে বলেছেন, ‘মুশতাক আওয়ামী লীগের কুলাঙ্গার।’ কিন্তু সেই সময় শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের  প্রেক্ষাপট যারা তৈরী করেছিলেন  তারাই এখন হাসিনার দলে ও অবৈধ সরকারে। তাহলে তো বলাই যায়, আওয়ামী লীগ আসলে কুলাঙ্গারদেরই দল। এই কুলাঙ্গাররাই এখন নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে জিয়া পরিবারকে টার্গেট করেছে। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান এবং তার পরিবার সম্পর্কে  মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগনকে বিভ্রান্ত করছেন।”

দুই পর্বে দেওয়া প্রায় দুই ঘণ্টার বক্তৃতায় তারেক রহমান প্রথম পর্বে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রসঙ্গ, শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর পরিস্থিতি এবং ২১ আগষ্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলা নিয়ে কথা বলেন।

বক্তৃতার দ্বিতীয় পর্বে তিনি একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ইউকে আয়োজিত এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর কে এম এ মালিক। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডক্টর এম আব্দুল মুমিন চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কলামিস্ট জগলুল হুসাইন, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরুদ্দিন আহমেদ অসীম, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, পরিষদের সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার ব্যারিস্টার তারেক বিন আজিজ এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং তারেক রহমানের নবনিযুক্ত  শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক উপদেষ্টা মাহদি আমীন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন পরিষদের প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক ছাত্রদলের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ।

 আওয়ামী লীগই বিচারবহির্ভূত ক্রসফায়ার চালু করেছিল

সেমিনারে তারেক রহমান বলেন, “বাংলাদেশে শেখ মুজিবের পরিবার খুনি পরিবার। শেখ মুজিব পাকিস্তান আমলে সংসদের তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীকে সংসদ কক্ষে চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছিল।  স্বাধীনতার পর ৩০ হাজার মানুষকে হত্যার জন্য দায়ী শেখ মুজিব। ১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগই বিচারবহির্ভূত ক্রসফায়ার চালু করেছিল। ক্রসফায়ারে ভিন্নমতাবলম্বী  সিরাজ সিকদারকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর শেখ মুজিব সংসদে দাঁড়িয়ে আইন আদালতের তোয়াক্কা না করেই বলেছিলেন-কোথায় আজ সেই সিরাজ সিকদার?”

মার্কিন মাসিক রিডার্স ডাইজেস্ট ১৯৭৫-এর মে মাসের একটি প্রতিবেদনের উদ্বৃতি দিয়ে শেখ মুজিব সম্পর্কে  তারেক রহমান বলেন, “পত্রিকটি লিখেছিলো- ‘শেখ মুজিব দু’টি বেসামরিক সংগঠনের ওপর নির্ভরশীল। একটি হচ্ছে তার ভাগ্নে শেখ মনির এক লাখ সশস্ত্র একগুঁয়ে যুবকের সংগঠন যুবলীগ, আর একটি হলো নিষ্ঠুর রক্ষীবাহিনী।”

তারেক রহমান আরো বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হলের সামনে সাত খুনের জন্য দায়ী শেখ মুজিবের ছেলে  শেখ কামাল। বাংলাদেশ ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায়ও শেখ কামালের নাম ইতিহাসে লেখা।’

তিনি বলেন, ‘পিতার মতো শেখ হাসিনাও মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছে। বিডিআর বিদ্রোহের নামে পিলখানায় সামরিক বাহিনীর ৫৭ জন মেধাবী অফিসারসহ ৫৪ জনের হত্যার পেছনে শেখ হাসিনা জড়িত। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় শেখ হাসিনা হাসাহাসি করতে করতে পা বিস্কুট খাচ্ছিলেন এ কথা জানিয়েছেন তৎকালীন সেনাপ্রধান শেখ হাসিনার প্রিয় মঈন।’

তারেক রহমান বলেন, ‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার খায়েশ পূরনের জন্য লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।’

তারেক রহমান অভিযোগ করেন, ‘শেখ হাসিনার নির্দেশে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গুম-খুন-অপহরণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিবের পরিবার শুধু খুনিই নন বাংলাদেশের জনগণের জন্য এটি একটি অভিশপ্ত পরিবার। কারণ, এই পরিবারের প্রধান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে। তার আমলে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে বটমলেস বাস্কেট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলো। তার কন্যা শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ বিশ্বে দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রের কলঙ্কজনক তালিকায় প্রথম হয়েছিলো। দ্বিতীয়বার পদ্মাসেতু প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা চুরি করতে গিয়ে বিশ্বব্যাংকের হাতে ধরা পড়ে বাংলাদেশের ইমেজ বিশ্বে কলঙ্কিত করেছে। আর এখন অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে এরইমধ্যে বিদেশে অবৈধভাবে টাকা পাচারকারী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘যারা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল  তোলেন তাদের জানা উচিত, মুজিব হত্যাকাণ্ডের সময় বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানও রাজনীতিতে ছিলেন না। শেখ মুজিব হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেননি। ক্ষমতায় এসেছিলো আওয়ামী লীগ  নেতা মুশতাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগই। এরপর মুশতাকের পতন ঘটে সেটিও ছিলো আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দখলের লড়াই। এই অবস্থায় দেশ বাঁচাতে ৭ নভেম্বর সংগঠিত হয় সিপাহী জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব। বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে সিপাহী জনতা সেনানিবাসে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে আনেন।’

তারেক রহমান বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, ৭৫ এর ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের সকল ক্রান্তিলঘ্নে জিয়াউর রহমানই সাহসিকতার সঙ্গে দেশ ও জনগণের নেতৃত্ব দিয়েছেন।’

২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলার ব্যপারে তারেক রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে মুক্তাঙ্গনে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ না করে দেড় ঘণ্টার নোটিশে কি উদ্দেশ্যে দলীয় সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করেছিল? এটি প্রমাণ করে শেখ হাসিনা ওইদিনের হামলার ঘটনা সম্পর্কে জানতেন। তিনি ২১ আগষ্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।’

সেমিনারের দ্বিতীয় পর্বে তারেক রহমান বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গ নিয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। জাতিসংঘ পরিচালিত ই-গভর্ণমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স-ইজিডিআই এর একটি জরিপ তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের এই সুবর্ণ সময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের অবস্থান ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৪৮তম।’ তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে শেখ হাসিনা দেশে বিদেশে পারিবারিক ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছে কিনা সেই হিসেব নেওয়ার অধিকার জনগণের রয়েছে।’

বক্তৃতায় তারেক রহমান উন্নয়ন পরিকল্পনায় শিক্ষা, যোগাযোগ প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ পর্যটন এবং কৃষিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা অপরিকল্পিত নগরায়ন। দেশের প্রধান দু’টি শহর ঢাকা ও চট্টগ্রামকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের আদলে মেট্রোপলিটন এরিয়া গড়ে তোলা যায়। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর এই তিনটি জেলা নিয়ে গঠিত হতে পারে ঢাকা মেট্রোপলিটন এরিয়া। এবং চট্টগ্রাম  জেলাজুড়ে গঠিত হতে পারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এরিয়া কিংবা স্মার্ট সিটি।’

তিনি বলেন, ‘মেধাবী শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরিতে সুযোগ করে দিতে হবে। এজন্য কোটা পদ্ধতি শতকরা পাঁচ ভাগে নামিয়ে আনা যেতে পারে। এর মাধ্যমে মেধাপাচারও রোধ করা সম্ভব হবে। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমবে। কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। কৃষিকে করতে হবে প্রযুক্তিনির্ভর। গড়ে তুলতে হবে ইন্ডাষ্ট্র্রিয়াল পার্ক। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সকল সাশ্রয়ী ও বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উৎস গার্মেন্টস খাতের ক্ষেত্রে একটি সামগ্রিক ও কাঠামোগত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। স্থাপন করতে হবে সাবমেরিন ক্যাবল। রেল য়োগাযোগ ব্যবস্থাকে দ্রুত ও আধুনিক করা এখন সময়ের দাবি।’

তারেক রহমান বলেন, ‘একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠনে এখন সবচেয়ে বড় বাধা বর্তমান অবৈধ সরকার। তাই বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এই অবৈধ সকোরের পতন ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে।’