Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

‘স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রকাশ্যে কাউকে কিছু বলেননি’

“স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রকাশ্যে কাউকে কিছু বলেননি বলেই আমি জানি। অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ রাতে এক হাবিলদারের মারফত চিরকুট পাঠিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আবার বলা হয়, বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতা জহুর আহমেদ চৌধুরীকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার জন্য সংবাদ পাঠিয়েছিলেন। কোথাও কোথাও এমনও উল্লেখিত হয়েছে যে বঙ্গবন্ধু ইপিআরের বেতারযন্ত্রে বা ডাক ও তার বিভাগের টেলিগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণার বার্তাটি প্রচার করেন। এগুলোর কোনো যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ আমি কোথাও পাইনি। আর যা প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয় তার বিশ্বাসযোগ্যতা খুঁজে পাইনি।”

Mujib1মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার বীর উত্তম তার সদ্য প্রকাশিত ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ গ্রন্থে এ কথা লিখেছেন।দৈনিক প্রথম আলোর প্রকাশনা প্রথমা প্রকাশন থেকে আগস্টের শেষ সপ্তাহে এই বইটি প্রকাশিত হয়েছে।

chardike-ad

এ কে খন্দকার লিখেছেন:

কোন যুক্তিতে বঙ্গবন্ধু চিরকুট পাঠাবেন, যেখানে প্রকাশ্যে স্বাধীনতা ঘোষণায় তার কোনো বাধাই ছিল না? বলতে গেলে মার্চ মাসের শুরু থেকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই দেশ চলেছে। ২৩ মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় দিবসেও সারা দেশে দু-চারটা সরকারি ভবন ছাড়া কোথাও পাকিস্তানি পতাকা ওড়েনি, বরং সবাই স্বাধীন বাংলার পতাকা অথবা  কালো পতাকা উড়িয়েছে। এ ধরনের অনুকুল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু কেন গোপনে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে যাবেন? স্বাধীনতা ঘোষণা করতে চাইলে তিনি তো জনগণের পাশে থেকেই তা করতে পারতেন। তার মতো সাহসী এবং ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় নেতার স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে রাতের অন্ধকারের প্রয়োজন হয় না। আমরা যত দিন যুদ্ধ করেছি, তত দিন পর্যন্ত এই চিরকুট পাঠানোর কথা শোনা যায়নি। বরং আমরা সবাই আলোচনা করতাম যে বঙ্গবন্ধু কেন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গেলেন না, দিলে কী ক্ষতি হতো ইত্যাদি। স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আমি যতটুকু জানি, আমার স্মৃতিতে যতটুকু আছে এবং যুদ্ধের সময় যা ঘটেছে তা নিচে উল্লেখ করলাম।

২৫ মার্চ সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যখন ঢাকা ছেড়ে চলে যান, তখন একটা চরম সংকটপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়। সবাই ভাবতে থাকেন, এখন আমাদের কী করণীয়। এ সময় তাজউদ্দীন আহমদসহ আরও কিছু নেতা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে সমবেত ছিলেন। সেখানে এক ফাঁকে তাজউদ্দীন আহমদ একটি টেপ-রেকর্ডার এবং স্বাধীনতা ঘোষণার একটা খসড়া বঙ্গবন্ধুকে দেন এবং তাকে তা পড়তে বলেন। কিন্তু তিনি তা পড়েননি। এ ঘটনা স্বয়ং তাজউদ্দীন আহমদ সাংবাদিক ও লেখক মঈদুল হাসানকে বলেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি মে মাসে ভারতে যান। পরে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের স্পেশাল এইড হিসেবে বিশেষ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকবার দিল্লি যান। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করতেন। মঈদুল হাসান যখন কলকাতায় থাকতেন তখন প্রতিদিন সকালে তাজউদ্দীন সাহেবের সঙ্গে আলোচনায় বসতেন। তার নির্দেশে অন্যান্য নানা বিষয়েও কাজ করতেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহের জন্য তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে দেখা করেন। তাজউদ্দীন আহমদের কথাগুলো তখন তার ডায়েরিতে তিনি লিখে রেখেছিলেন। সেইসময় তাদের মধ্যে স্বাধীনতার ঘোষণা ও ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্ত নিয়ে যে কথোপকথন হয়েছিল তা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য বলেই প্রতীয়মান হয়।

কোনো মাধ্যমে বা চিরকুট পাঠিয়ে বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, ২৫ মার্চ রাতে তার ঘনিষ্ঠ নেতা-কর্মীরা প্রায় শেষ সময় পর্যন্ত তার সঙ্গে ছিলেন। অথচ তারা কেউ কিছু আঁচ করতে পারবেন না বা জানতে পারবেন না, এটা তো হয় না। তবে কি তিনি তাদের বিশ্বাস করতে পারেননি? এটা তো আরও অবিশ্বাস্য। বঙ্গবন্ধু যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেনই, তবে তিনি ৩২ নম্বর সড়কের বাসায় থাকবেনই বা কেন। মুক্তিযুদ্ধকালে আমিও একদিন তাজউদ্দীন আহমদকে ২৫ মার্চের রাতের ঘটনা নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তাজউদ্দীন আহমদ স্বীকার করেছিলেন, সেই খসড়া ঘোষণাটি তার নিজের লেখা ছিল এবং তিনি বঙ্গবন্ধুকে খসড়া ঘোষণাটি পাঠ করার প্রস্তাব করেছিলেন। লেখাটা ছিল সম্ভবত এই রকম : ‘পাকিস্তানি সেনারা আমাদের আক্রমণ করেছে অতর্কিতভাবে। তারা সর্বত্র দমননীতি শুরু করেছে। এই অবস্থায় আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এবং আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলাম।’ তাজউদ্দীন সাহেব আরও বলেন, এই খসড়া ঘোষণাটা শেখ মুজিবুর রহমানকে দেওয়ার পর সেটা তিনি পড়ে কোনো কিছুই বললেন না, নিরুত্তর রইলেন। অনেকটা এড়িয়ে গেলেন।

পরবর্তী সময়ে মঈদুল হাসানের কাছ থেকে জানতে পারি, তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘মুজিব ভাই, এটা আপনাকে বলে যেতেই হবে। কেননা কালকে কী হবে, যদি আমাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়? তাহলে কেউ জানবে না যে আমাদের কী করতে হবে? এই ঘোষণা কোনো গোপন জায়গায় সংরক্ষিত থাকলে পরে আমরা ঘোষণাটি প্রচার করতে পারব। যদি বেতার মারফত কিছু করা যায়, তাহলে সেটাও করা হবে।’ বঙ্গবন্ধু তখন প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে একটা দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের বিচার করতে পারবে।’ এ কথায় তাজউদ্দীন আহমদ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে সম্ভবত রাত নয়টার পরপরই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ছেড়ে চলে যান। পরবর্তীকালে মঈদুল হাসান এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুল মোমিনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনিও ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। আবদুল মোমিন বলেন, তিনি যখন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢুকছিলেন, তখন দেখেন যে তাজউদ্দীন আহমদ খুব রাগান্বিত চেহারায় ফাইলপত্র বগলে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবদুল মোমিন তাজউদ্দীনের হাত ধরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি রেগে চলে যাও কেন?’ তখন তাজউদ্দীন আহমদ  তার কাছে আগের ঘটনাটি বর্ণনা করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একটু ঝুঁকিও নিতে রাজি নন। অথচ আমাদের ওপর একটা আঘাত বা আক্রমণ আসছেই।’

২৫ মার্চ রাতের ওই ঘটনার পর বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে তাজউদ্দীন আহমদ তার বাড়িতে ফিরে যান। রাত ১০টার পর ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যান। বঙ্গবন্ধু তাদের তৎক্ষণাৎ সরে যেতে বলেন। বঙ্গবন্ধু নিজে কী করবেন, সেটা তাদের বলেননি। তারা দুজন যখন ওখান থেকে তাজউদ্দীন আহমদের বাড়িতে গেলেন, তখন রাত বোধ হয় ১১টা। ওখানে কামাল হোসেন ও আমীর-উল-ইসলাম আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন, তাজউদ্দীনকে নিয়ে তারা দুজন অন্য কোথাও চলে যাবেন।

১৯৭২ সালে তাজউদ্দীন আহমদ কথোপকথনের সময় মঈদুল হাসানকে বলেন, ‘আমীর-উল-ইসলাম ও কামাল হোসেন যখন এসে বলল যে বাড়ি থেকে এখনই সরে যাওয়া দরকার, তখন আমি ওদের বলিনি, তবে আমার মনে হয়েছিল, আমার কোথাও যাওয়া উচিত নয়।’ তাজউদ্দীন আহমদ মনে প্রচণ্ড ক্ষোভ নিয়ে সম্ভবত কথাগুলো বলেছিলেন। বিষয়টি তাজউদ্দীন আহমদ পরে ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘যেখানে আন্দোলনের সর্বোচ্চ নেতা, যাকে এতবার করে বলেছি, আজকে সন্ধ্যাতেও বলেছি, তিনি কোথাও যেতে চাইলেন না এবং তাকে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য যে সংক্ষিপ্ত একটা বার্তা টেপ-রেকর্ডে ধারণ বা ওই কাগজে স্বাক্ষর করার জন্য বলায়, তিনি বললেন, এটাতে পাকিস্তানিরা তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করতে পারবে! উনি এতটুকুও যখন করতে রাজি নন, তখন এ আন্দোলনের কী-ই বা ভবিষ্যৎ?’ তাজউদ্দীন আহমদ, আমীর-উল-ইসলাম ও কামাল হোসেনের মধ্যে এরকম আলাপ শেষ না হতেই চারদিকের নানা শব্দ থেকে বোঝা গেল, পাকিস্তানি সৈন্যরা সেনানিবাস থেকে বের হয়ে আক্রমণ শুরু করেছে। এরকম একটি মুহূর্তে কামাল হোসেন ধানমন্ডি ১৪ নম্বর সড়কের দিকে এক অজ্ঞাত উদ্দেশ্যে চলে গেলেন। অন্যদিকে আমীর-উল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে তাজউদ্দীন যান লালমাটিয়ায়। এই কথাগুলো মঈদুল হাসান মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর: কথোপকথন গ্রন্থে বলেছেন।

অবাক করার বিষয় হলো, পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা ঘোষণার সেই ছোট্ট খসড়াটি, যা তাজউদ্দীন আহমদ তৈরি করেছিলেন, তার প্রায় হুবহু একটি নকল বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চের ঘোষণা হিসেবে প্রচার হতে দেখি। ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রকাশিত পত্রপত্রিকাতেও তাজউদ্দীনের সেই খসড়া ঘোষণার কথাগুলো ছাড়া হয়েছিল। ২৫ মার্চ রাতে যখন পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের আক্রমণ করে, সেই রাতেই শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্বাধীনতার ঘোষণাটি জনসমক্ষে কীভাবে এল? ২৬ মার্চ তারিখে তো সারাদেশেই সান্ধ্য আইন ছিল। আওয়ামী লীগের তরুণ কর্মী এবং ছাত্রলীগের নেতারা স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য বঙ্গবন্ধুকে মার্চ মাসে বেশ চাপ দিচ্ছিল। ধারণা করা যায়, সেই সময় তাজউদ্দীন আহমদ তার খসড়াটি তাদের দিয়েছিলেন এবং এদের মাধ্যমে যদি এটা স্বাধীনতার ঘোষণা হিসেবে প্রচারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমি বিস্মিত হব না।

পরবর্তী সময়ে ঘটনার প্রায় এক বছর পর আরেকটা কথা প্রচার করা হয় যে, ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হওয়ার ঠিক আগে শেখ সাহেব ইপিআরের বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরীর কোছে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন। এই তথ্যটি মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রথমত, সামরিক বাহিনীতে থাকার ফলে আমি জানি যে সিগন্যাল সেন্টার বা বার্তাকেন্দ্র সব সময় অত্যন্ত বিশ্বাসী লোক দ্বারা পরিচালনা করা হয়। সিগন্যালই কোনো বাহিনীর প্রতিরক্ষা ও আক্রমণের মূল যোগাযোগমাধ্যম। সেখানে তো বিশ্বাসীদের বাদ দিয়ে সন্দেহের পাত্র বাঙালিদের হাতে সিগন্যাল-ব্যবস্থা থাকতে পারে না। বাস্তবেও পাকিস্তানি বাহিনী আগে থেকেই পিলখানায় ইপিআরের বেতারকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রেখেছিল। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, বঙ্গবন্ধু তার মারফত এই ঘোষণা ইপিআরের বার্তাকেন্দ্রে পাঠিয়েছিলেন, সেই ব্যক্তি স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও জনসমক্ষে এলেন না কেন। বঙ্গবন্ধুও তার জীবদ্দশায় কখনো সেই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেননি কেন। একইভাবে চট্টগ্রামের ইপিআর বেতার কেন্দ্র থেকে কে, কীভাবে জহুর আহমেদকে বার্তাটি পাঠালেন, তা রহস্যাবৃত্তই থেকে গেছে। কাজেই ইপিআরের বার্তাকেন্দ্র ব্যবহার করে শেখ সাহেব স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন- এটা সম্ভবত বাস্তব নয়।

দ্বিতীয়ত, জহুর আহমেদ চৌধুরীর কাছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এমন কোনো সংবাদ আমরা শুনিনি। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের নেতারা স্বীকৃতিদানের প্রশ্নে ভারত সরকারকে বেশ চাপ দেওয়া শুরু করেন। ভারত সরকার বাংলাদেশ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও অন্য প্রধান নেতাদের জিজ্ঞেস করে, শেখ মুজিবুর রহমান কি স্বাধীনতার প্রশ্নে কাউকে কিছু বলে গেছেন? তারা আরও জানতে চায় যে স্বাধীনতা ঘোষণার কোনো প্রমাণ, কোনো দলিল, কোনো জীবিত সাক্ষ্য আমাদের কাছে আছে কি না? এ সময় জহুর আহমেদ চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেকেই বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু কাউকেই স্বাধীনতা ঘোষণার কথা বলে যাননি। জহুর আহমেদ চৌধুরী নিজে তাজউদ্দীনকে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু তাকে কিছু বলে যাননি।

ইপিআরের বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠান- এ দাবিটির প্রচার শুরু হয় ১৯৭২ সালে। এর আগে এটি শোনা যায়নি। অথচ ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১২টায় টেলিযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে শেখ মুজিব চাইলে শুধু একটি ফোন করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (এখন রূপসী বাংলা) ভিড় করা যেকোনো বিদেশি সাংবাদিককে স্বাধীনতা ঘোষণার কথা জানাতে পারতেন। তাহলে মুহূর্তের মধ্যে সেটি সারা পৃথিবীতে প্রচার পেয়ে যেত।

বেশ পরে স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়ে আরেকটি তথ্য প্রকাশ পায়। এতে বলা হয় যে বঙ্গবন্ধু টেলিগ্রামের মাধ্যমে কাউকে কাউকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন। সেই ঘোষণার একটি কপি কিছুদিন আগে পত্রিকায় ছাপানো হয়। এই ঘোষণায় পাওয়া বিবৃতি আগের ঘোষণা থেকে পৃথক। ঘোষণা-সংবলিত টেলিগ্রামটি হাতে লেখা এবং প্রাপকের স্ত্রী দাবি করেছেন যে এটি বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে লেখা। মিথ্যা প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় সাধারণ বিবেচনা বা জ্ঞানও রহিত হয়ে যায়। টেলিগ্রাম যে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে পাঠানো হয় এবং এখানে প্রেরকের হাতের লেখা প্রাপকের কাছে যায় না, তা তারা ভুলে যান। নতুনবার্তা।