Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বন্ধুত্ব জোরদারের আশাবাদে ঢাকা ছাড়লেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী

বন্ধুত্ব আরও জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বাইশ ঘণ্টার সফর শেষে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় আবে ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিশেষ বিমানটি হযরত শাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তাঁদেরকে বিদায় জানান। তাঁর দেড়শ সফরসঙ্গীর মধ্যে জাপানের প্রথম সারির কোম্পানিগুলোর ২২ জন প্রধান নির্বাহী ছিলেন।

ঢাকায় অবস্থানকালে আবে বলেছেন, এই বছরটি বাংলাদেশ ও জাপানের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হল। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে আগামী ৪-৫ বছরে  প্রায় ৬০০ কোটি ডলার সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণেরও আশ্বাস দেন আবে। অন্যদিকে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদে নির্বাচনে জাপানকে সমর্থন করে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিনজো আবে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

chardike-ad

07_Japan-Prime-Minister_Shinzo-Abe_060914_00321শনিবার দুই দেশের শীর্ষ বৈঠকের পর ১০ পৃষ্ঠার এক যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন হাসিনা ও আবে। বিবৃতিতে বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো দৃঢ়, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে পরস্পরের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখতে সহযোগিতা সম্প্রসারণ, দুই দেশের নাগরিকদের যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয়েছে।

দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে দুই দেশের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এতে বাংলাদেশি কূটনীতিকদের জাপানে ভিসা ছাড়াই যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে।

গত মে মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর টোকিও সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে যে ‘সমন্বিত অংশীদারিত্বের’ সূচনা হয়েছিল তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও জাপানের অংশীদারিত্ব অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনা।

এর আগে গতকাল শনিবার সকালে ঢাকায় অবতরণের পর লাল গালিচা সংবর্ধনায় বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে শিনজো আবে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। সেখান থেকে তিনি ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।

বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে শিনজো আবে রাজধানীর একটি হোটেলে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আয়োজিত জাপান-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে যোগ দেন। শীর্ষ বৈঠক শেষে তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

এরপর জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার হোটেল স্যুটে প্রথমে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং পরে সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। দু’টি বৈঠকই ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়নি। রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন শিনজো আবে।

শনিবার বিকেলে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে দুই প্রধানমন্ত্রী প্রথমে একান্তে ১৫ মিনিট আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে প্রায় এক ঘণ্টার আনুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ নেন তারা। এরপর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের হাতে উপহার হিসেবে দেওয়া রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ছবিযুক্ত দু’টি অ্যালবাম তুলে দেন। এ সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ সময় সে দেশের বিশেষ মুদ্রা উপহার-স্মারক হিসেবে তুলে দেন, যে মুদ্রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি খচিত রয়েছে।

শনিবার দুপুরে সোনারগাঁ হোটেলে দেওয়া বক্তৃতায় শিনজো আবে জাপানের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করবেন বলে জানান। বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ককে ভাই-বোনের সম্পর্ক উল্লেখ করে শিনজো আরও বলেন, বাণিজ্য বাড়াতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদেরই ভূমিকা রাখতে হবে। জাপানের অর্থনীতিকে চাঙা করতে তার ‘আবেনোমিকস’ প্রয়োগে বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বঙ্গোপসাগরের তীরে বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা (বে অফ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট-বিগ বি) প্রতিষ্ঠাই বাংলাদেশকে সহযোগিতার অগ্রাধিকারে থাকবে বলে জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে একযোগে কাজ করার গুরুত্ব দিয়ে এক্ষেত্রে নিজের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া সামুদ্রিক সম্পদ টেকসই উপায়ে ব্যবহারেও সম্মত হয়েছেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী। এ প্রেক্ষাপটে ব্লু -ইকোনমি বা সাগর অর্থনীতির বিকাশে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলা হয়।

সফরের শেষ দিনে রোববার সকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন। তিনি চারুকলার গ্যালারিতে একটি প্রদশর্নী ঘুরে দেখেন। যেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়।

উল্লেখ্য, ২০০০ সালে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিরো মোরির পর এটা জাপানের কোনো প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর। গত ২৫-২৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফর করেন।