রবিবার । ডিসেম্বর ২১, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ৮:৪৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

এবার জেলেনস্কি, ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠকের উদ্যোগ


Putin-Trump-Zelonoskiইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আগামী শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন। ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, তাঁর লক্ষ্য শুধু অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি নয়; বরং একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তি।

তবে জটিলতা তৈরি হয়েছে আলাস্কা বৈঠকে পুতিনের শর্তে। তিনি যুদ্ধ থামাতে চাইছেন, তবে বিনিময়ে ইউক্রেনকে পুরো দনবাস অঞ্চল (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) ছাড়তে হবে বলে দাবি তুলেছেন। জেলেনস্কি তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন, কারণ দোনেৎস্কের কয়েকটি কৌশলগত শহর ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গত শুক্রবার আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে প্রায় ৩ ঘণ্টার বৈঠকে মুখোমুখি হন ট্রাম্প ও পুতিন। ২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর এটিই ছিল দুই দেশের শীর্ষ নেতার প্রথম সাক্ষাৎ। বৈঠককে ট্রাম্প বলেছেন ‘উষ্ণ’, আর পুতিন বলেছেন ‘খোলামেলা ও ফলপ্রসূ’। বৈঠকের পরপরই ট্রাম্প ফোনে কথা বলেন জেলেনস্কির সঙ্গে এবং দ্রুত ত্রিপক্ষীয় আলোচনার প্রস্তাব দেন।

সূত্র জানায়, পুতিন বেশির ভাগ ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ থামাতে রাজি আছেন, তবে দনবাস সম্পূর্ণরূপে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে দিতে হবে—এটাই তাঁর শর্ত। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ দখল করেছে রাশিয়া, যার মধ্যে দনবাসের তিন-চতুর্থাংশ রয়েছে। জেলেনস্কি স্পষ্ট জানান, ইউক্রেন কোনো ভূখণ্ড ছাড়বে না এবং সংবিধান পরিবর্তনও সম্ভব নয়।

নিজের প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, “যুদ্ধ শেষ করার সর্বোত্তম পথ হলো সরাসরি একটি শান্তিচুক্তি, শুধু যুদ্ধবিরতি নয়। কারণ যুদ্ধবিরতি সাধারণত স্থায়ী হয় না।” ফক্স নিউজকে তিনি আরও বলেন, “জেলেনস্কিকে একটা সমঝোতায় যেতে হবে। রাশিয়া খুব বড় শক্তি, আর তোমরা তা নও।”

জেলেনস্কি পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছেন, “হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করাই যুদ্ধ থামানোর প্রথম শর্ত।” তিনি আজ ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে, যেখানে কয়েকজন ইউরোপীয় শীর্ষ নেতা যোগ দিতে পারেন। ইউরোপীয় দেশগুলো একদিকে ট্রাম্পের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে, অন্যদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছে।

আলাস্কা বৈঠকে বরাবরের মতোই তাদের শর্তগুলো পুনর্ব্যক্ত করেছেন পুতিন। শান্তিচুক্তির জন্য মস্কো চাইছে ইউক্রেন ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার আশা ত্যাগ করবে, সামরিক বাহিনীর আকার ছোট করবে এবং বর্তমানে রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা (ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া) অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। এই অঞ্চলগুলো ২০১৪ ও ২০২২ সালের গণভোটে রাশিয়ায় যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বলে দাবি মস্কোর।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক মস্কোর জন্য এক ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিমা বিশ্বে পুতিনকে একঘরে করা হয়েছিল। এবার সরাসরি আলোচনায় বসায় মস্কোর মর্যাদা ফের প্রতিষ্ঠিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ইউরোপ সতর্ক আছে—তাদের বক্তব্য, কোনো সমঝোতাই যেন ইউক্রেনের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বা ভবিষ্যৎ ন্যাটো সদস্যপদকে সীমাবদ্ধ না করে।