Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সাত শ্রেণির মানুষ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবে

bangladeshসাত ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভ করা যাবে। এমন বিধান রেখে নতুন করে তৈরি করা ‘বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন, ২০১৪‘-এর খসড়ার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছে সরকার।

বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন (অস্থায়ী বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭২ এবং আইন কশিনের ২০০৫ ও ২০১২ সালে দেওয়া পরামর্শের আলোকে এ খসড়া আইনটি তৈরি করা হয়েছে। এর বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা ও পরামর্শের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি আইনটি স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

chardike-ad

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কিছু বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশিদের বিয়ে করে নাগরিকত্ব লাভের বিষয়ে ন্যায়বিচার চাইতে হাইকোর্টে আবেদন করে। বিষয়টি নজরে আসার পর নতুন এই খসড়া তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।

নাগরিকত্ব বিষয়ে আইনটি কার্যকর হলে এ বিষয়ে বিভিন্ন বাধা ও জটিলতার অবসান হবে। নতুন খসড়া আইনে সাতটি শ্রেণিতে (ক্যাটাগরি) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভ করা যাবে।

এ শ্রেণিগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ, বাংলাদেশের কোনও দূতাবাস বা জাহাজ কিংবা বিমানে জন্মগ্রহণ, বাংলাদেশি নাগরিকদের সন্তান ও তাদের সন্তান, দ্বৈত নাগরিকত্ব, অর্জিত নাগরিকত্ব, বৈবাহিক সূত্র, নুতন সংযুক্ত ভূখণ্ডের অধিবাসী এবং বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কোনও দূতাবাস বা মিশনের কার্যালয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের সন্তান জন্মানোর দুই বছরের মধ্যে ওই দূতাবাস বা মিশনের কার্যালয়ে নাম নিবন্ধন করতে হবে। আর তা না হলে ওই সন্তান জন্মগ্রহণ সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিবেচ্য না।

অপরদিকে, কূটনৈতিক বা বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের সন্তান এ দেশে জন্ম নিলে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন না। দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কোনও নাগরিক অন্য দেশের নাগরিকত্ব লাভ করলে তার এ দেশের নাগরিকত্ব বাতিল হবে না। তিনি দ্বৈত নাগরিত হিসেবে বিবেচ্য হবেন। এজন্য ওই ব্যক্তিকে যথাযথ পদ্ধতি মেনে লিখিত আবেদন করতে হবে। কিন্তু যেসব দেশে নাগরিকত্ব পেতে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হয়েছিল বা হবে তাদের ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টি বিবেচ্য হবে না।

বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্ব লাভের আইন ও পদ্ধতি নিয়ে বলা আছে, যেসব ব্যক্তি বাংলাদেশি কোনও নাগরিককে বিয়ে করে বসবাসের অনুমতি নিয়েছেন বা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন তাদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে নথিবদ্ধ করা হবে। তবে এক্ষেত্রে আইনানুগভাবে বসবাসকারীদের আবেদন বিবেচনা করা হবে। কিন্তু এ শ্রেণিতে নাগরিকত্ব লাভের পাঁচ বছরের মধ্যে যেকোনও দেশে দুই বছরের বেশি সাজা পেলে বা টানা ১০ বছরের বেশি বাংলাদেশের বাইরে থাকলে তার নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে।

বয়সের বিষয়ে খসড়া আইনটিতে বলা হয়েছে, ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের নাবালক হিসেবে গণ্য করা হবে। এর বেশি বয়সীদের প্রাপ্তবয়স্ক বা সক্ষম হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

এছাড়া দেশের উন্নয়ন, বিজ্ঞান, দর্শন, শিল্প, সাহিত্য, শান্তি ও মানব উন্নয়নে অবদান রাখা ব্যক্তিদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকবে।

জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের বিষয় একটি আরেকটির সঙ্গে জড়িত। তাই এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, যেসব ব্যক্তি সামরিক বাহিনী বা আধা-সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে বা অন্য কোনও যুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে বা করছে, বাংলাদেশে তাদের নাগরিকত্ব লাভের জন্য তাদের করা আবেদন প্রত্যাখান করা হবে। এমনকি কোনও ব্যক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বীকার না করলে তার আবেদনও প্রত্যাখান করা হবে। এছাড়া যেসব নাগরিক এসময় শত্রুপক্ষকে সাহায্য করবে বা যোগসাজস থাকবে তাদের নাগরিকত্বও বাতিল করা হবে।

আবেদন করার বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথাযথ নিয়মকানুন অনুসরণ করে আবেদন করতে হবে। কর্তৃপক্ষ আবেদনে প্রদত্ত বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্তের সত্যতা যাচাই বাছাই ও বিচার বিবেচনা করে নাগরিক হিসেবে নথিবদ্ধ করবে বা নাগরিকত্বের সনদ প্রদান করবে। আবেদন যাচাই বাছাইয়ের সময় আবেদনকারী টানা ছয় মাস বিদেশে থাকতে পারবে না।

এক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও ভুল বা অসম্পূর্ণ কিংবা কোনও তথ্য গোপন করলে ওই ব্যক্তিকে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এর ধরনের ভুল পুণরায় করলে এ শাস্তির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা আইনের খসড়াটি পেয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আইনটি পরীক্ষা করে দেখছেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা আমাদের পরামর্শ পাঠিয়ে দেবো।