Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কোরিয়ায় ‘পলাতক’ কারাতেকা শামীম

এই গত মে মাসে নেপালে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক কারাতে প্রতিযোগিতায় একটি করে সোনা, রূপা ও ব্রোঞ্জ জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন। সেই তিনিই কিনা মাস পাঁচেকের ব্যবধানে দেশকে ডোবালেন অবর্ণনীয় লজ্জায়। সদ্য সমাপ্ত ইনছন এশিয়ান গেমস শেষে বাংলাদেশ দলের সবাই দেশে ফিরে এলেও ফেরেন নি কারাতেকা শামীম ওসমান। গেমসে বাংলাদেশ দলের ডেপুটি শেফ দ্য মিশন বাদল রায় গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

কোচ কাম ম্যানেজার এহসানুর রহমান (ডানে) সাথে 'পলাতক' কারাতেকা শামীম ওসমান (বাঁয়ে)।
কোচ কাম ম্যানেজার এহসানুর রহমানের (ডানে) সাথে ‘পলাতক’ কারাতেকা শামীম ওসমান (বাঁয়ে)।

খেলোয়াড় নিরুদ্দেশের বিষয়ে বাদল রায় সাংবাদিকদের বলেন, “শামীমের খেলা ছিল ২ অক্টোবর। কিন্তু গেমসের কারাতে ড্রেস কোডের সঙ্গে মেলেনি বলে সে খেলতে পারেনি। পরদিন সকাল থেকেই তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে আমরা আয়োজক কমিটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছি শামীম ওসমানের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি। পুলিশ এসেও তার সম্পর্কে জেনে গেছে।”

chardike-ad

গেমস ভিলেজ সূত্রে জানা গেছে, পোশাক ‘মানসম্পন্ন’ না হওয়ায় বাংলাদেশের দুই কারাতেকার কেউই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের উপযুক্ত ছিলেন না। ৩ অক্টোবর অপর প্রতিযোগী আশরাফুল কোরিয়ান একজনের কাছ থেকে পোশাক ধার করে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। কিন্তু ওইদিন সকাল থেকেই শামীমের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সতীর্থ আশরাফুল সাংবাদিকদের জানান, “কোরিয়ায় শামীমের আত্মীয় রয়েছে। ভিলেজ থেকে সে এক কাপড়েই বেরিয়ে গেছে।”

শামীমের পালিয়ে যাওয়ার সাথে কারাতে দলের ম্যানেজার কাম কোচ এহসানুর রহমান এহসানও জড়িত থাকতে পারেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গেমস সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ম্যানেজারের কাজ ছিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিযোগীর ওয়েট ক্যাটাগরিসহ নাম নিবন্ধন করা। কিন্তু ৩ অক্টোবর শামীমের পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে ভেন্যুতে উপস্থিত ছিলেন না তিনিও। এমনকি ওইদিন শামীম প্রতিযোগিতায় অংশ না নিলেও এহসান গেমস ভিলেজে গিয়ে প্রচার করেন যে শামীম ০-৮ ব্যবধানে হেরেছে। ওই খবরই প্রকাশিত হয়েছিল দৈনিক প্রথম আলোসহ বাংলাদেশের প্রথম সারির বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে।

মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এহসান শামীমকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে থাকতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ ধারণা করছেন। বুধবার দিনভর এহসানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।

এদিকে বাদল রায় বলছেন, শামীম কোরিয়া যাওয়ার আগেই বলে গিয়েছিল সে আর ফিরে আসবে না। বিষয়টি ফেডারেশনের অনেকেই জানলেও তাঁকে কেউ কিছু জানায় নি বলেও দাবী করেন তিনি।

কারাতে ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক শেখ আলী আহসান বাদল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে ম্যানেজারের (এহসান) সাথে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি তাকে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলেছেন। ম্যানেজার লিখিত দিলেই এ নিয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে বলে জানান ফেডারেশন সম্পাদক।

বিদেশে খেলতে গিয়ে ‘পালিয়ে’ যাওয়ার ইতিহাস বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়। এ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় গিয়ে আর দেশে ফেরেন নি এমন খেলোয়াড়ের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। খেলার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত পালিয়েছেন অন্তত ৪০ জন সাংবাদিক। ২০০২ সালের বুসান এশিয়ান গেমসে সরকারি কোটায় গিয়ে ফিরে আসেননি ক্রীড়া সাংবাদিক মেজবাহ চৌধুরী। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সাইক্লিংয়ের ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য দ. কোরিয়ার ইয়ংজুতে গিয়ে নিরুদ্দেশ হন দুই সাইক্লিস্ট কোচ।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পালিয়ে যাওয়ার এ হার বেশ অনেকটা কমে এসেছিল। মেধাবী ক্রীড়াবিদ শামীমের পলায়ন কলঙ্কের ইতিহাসে নতুন মাত্রাই যোগ করলো।