Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অনন্য উচ্চতায় মেসি

messiদিনকে দিন আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। আর এভাবেই এক এক করে তার সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হচ্ছে নতুন পালক। গত রাতে যুক্ত হল এমনই একটি পালক যা ৬০ বছর ধরে নিজের করে রেখেছিলেন অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ারে কিংবদন্তি খেলোয়াড় তেলমো জারা।

রোববার সেভিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার ২১ মিনিটে গোল করে লা লিগায় জারার করা ২৫১ গোলের রেকর্ড ছুঁলেন ফুটবলের খুঁদে জাদুকর মেসি। আর ৭২ মিনিটেই স্পেনিশ লীগের (লা লিগায়) সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার মালিকও হলেন তিনি। স্বপ্ন আর আশাকে এক বিন্দুতে মিলিয়ে ইতিহাস গড়লেন তিনি। আর এতে তিনি নিজে হাসলেন, হাসালেন সবাইকে।

chardike-ad

দুই গোল করে ক্ষ্যান্ত হননি তিনি। নিজের ক্যারিয়ারে আরেকটি হ্যাটট্রিক যোগ করলেন। দলকে জিতালেন ৫-১ গোলে।

প্রায় ৭৩ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে স্বাগতিক হিসেবে মাঠে নামেন আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি, ব্রাজিল তারকা নেইমার আর উরুগুয়ের তারকা সুয়ারেজ। এছাড়া লুইস এনরিকের শুরুর একাদশে ছিলেন ব্রাভো, আলভেজ, পিকে, ম্যাথিউ, আলবা, বাসকুয়েটস, রেকিটিক আর জাভি।

রেকর্ডের হাতছানির ম্যাচের সপ্তম মিনিটে মেসির একটি শট রুখে গোলের হাত থেকে বাঁচান অতিথি হিসেবে খেলতে আসা সেভিয়ার গোলরক্ষক বেতো। মেসি তার এই শটটি ডি বক্সের বাইরে থেকে নিয়েছিলেন। এর চার মিনিট পরেই গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন বার্সার নতুন তারকা সুয়ারেজ। কিন্তু ভালো ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল পাননি লিভারপুলের প্রাক্তন এ তারকা।

খেলার ২১তম মিনিটে মেসিকে ফাউল করায় ফ্রি-কিক লাভ করে বার্সা। সেভিয়ার ডি-বক্সের ঠিক বাইরে থেকে মেসি নিজেই ফ্রি কিক নেন। বাতাসে ভাসিয়ে মারা তার ফ্রি-কিকটি রুখে দিতে ব্যর্থ হন সেভিয়ার গোলরক্ষক বেতো। আর এ গোলের পরেই ২৫১তম গোল করে লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা জারার পাশে জায়গা করেন নেন মেসি।

ম্যাচের ৪৫তম মিনিটে পরপর দুইবার গোলের সুযোগ পায় কাতালানরা। প্রথম সুযোগে আলবা গোলের দেখা পাননি আর পরের সুযোগটিকে কাজে লাগাতে পারেননি নেইামার। ফলে প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা।

বিরতি থেকে ফিরে দুই মিনিট পেরুতে না পেরুতেই সমতায় ফেরে সেভিয়া। ম্যাচের ৪৭তম মিনিটে জরদি আলবার আত্মঘাতী গোলে ১-১ সমতা হয়। তবে, পরের মিনিটেই আবারো লিড নেয় বার্সা। ব্রাজিল অধিনায়ক নেইমারের গোলে এগিয়ে যায় কাতালানরা। জাভির ফ্রি-কিক থেকে বাতাসে ভেসে আসা বলে হেড করে সেভিয়ার জালে বল জড়িয়ে দেন নেইমার।

খেলার ৬৫তম মিনিটে গোল করে দলের লিড আরো বাড়িয়ে নেন ইভান রেকিটিক। মাঝমাঠ থেকে পাওয়া বলে সুয়ারেজ ঠান্ডা মাথায় পা লাগিয়ে ডি বক্সে দৌঁড়ে আসা রেকিটিককে বানিয়ে দেন। আর তা থেকে হেড করে গোল করেন রেকিটিক। ফলে, বার্সা এগিয়ে যায় ৩-১ গোলের ব্যবধানে।

এর তিন মিনিট পরেই আবারো পায়ের জাদু দেখান এ মৌসুমে নতুন আসা সুয়ারেজ। নিজে এখনও ক্লাবের হয়ে গোল না পেলেও প্রতিনিয়ত গোল করাচ্ছেন সতীর্থদের দিয়ে। এবারে তিনি আলবাকে বল বানিয়ে দেন। কিন্তু আলবার নেওয়া শটটি গোলবারের অনেক বাইরে দিয়ে চলে যায়।

ম্যাচের ৭২তম মিনিটে নিজের দ্বিতীয় আর দলের চর্তুথ গোল করে লাগ লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে রেকর্ডবুকে জায়গা করে নেন মেসি। নেইমারের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান পাস খেলে দুর্দান্ত গতিতে বল নিয়ে এগিয়ে যান বার্সার এ তারকা। নেইমারের সাহায্যে গোল করেন মেসি। এ গোলের পর সতীর্থরা মেসিকে কোলে তুলে তার প্রাপ্য সম্মানটি বুঝিয়ে দেয়।

ছয় মিনিট পরেই নিজের হ্যাটট্রিক আর দলের পঞ্চম গোল করেন মেসি। এবারেও মেসির গোলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেন নেইমার। সেভিয়ার ডিফেন্সকে একাই গুঁড়িয়ে দিয়ে নেইমারের ওয়ান টাচ নিয়ে বাম পায়ের জোড়ালো শটে হ্যাটট্রিক করেন অসাধারণ খেলতে থাকা মেসি।

৮৮ মিনিটের মাথায় আবারো গোলমুখে শট নিয়েছিলেন মেসি। তবে, তার এ শটটি রুখ দেন সেভিয়ার গোলরক্ষক।

ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে স্বাগতিক হিসেবে খেলতে নামা বার্সেলোনা। আর এ জয়ের ফলে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে চলে এলো বার্সা। ১২ ম্যাচে ৯ জয়, একটি ড্র আর ২টি পরাজয় নিয়ে বার্সার সংগ্রহ ২৮ পয়েন্ট।

মেসির ইতিহাস গড়ার দিনে গ্যালারির দর্শকরা যেমন আনন্দে ভাসলেন, তেমনটি নিজেরাও। একই সঙ্গে মেসিভক্ত যারা টেলিভিশনে খেলাটি উপভোগ করলেন তারাও ভাসলেন আনন্দে, স্বাক্ষী হলেন নতুন এক ইতিহাসের।

তথ্যসূত্র : বিবিসি, এএফপি।