Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

একনায়কদের আহার

autocracyআপনি কি আহার করেন তা দিয়েই আপনার পরিচয়। কিন্তু কিভাবে আহার করেন এবং কাদের সঙ্গে নিয়ে আহার করেন তাও কিন্তু বিবেচ্য বিষয়। বিশ শতকের কয়েকজন একনায়কের আহার পর্ব হয়তো তাদের মনোভাব, দৈহিক অবস্থা এবং বিশ্বের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে সাহায্য করবে।

একনায়কদের অনেকে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের খাবারের বিশুদ্ধতা নিয়ে বাড়াবাড়ির নজির রেখেছেন।  উত্তর কোরিয়ার কমরেড কিম ইল-সুং আহারের জন্য প্রতিটি চালের দানা বাছাই করাতেন। দীর্ঘায়ু হবার পথ খুঁজে বের করতে একটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাও করেছিলেন তিনি।

chardike-ad

রোমানিয়ার কম্যুনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতা কমরেড নিকোলাই চসেস্কু বিদেশ সফরে গেলে স্বাগতিক দেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়তো। কারণ, প্রয়োজনীয় সব খাবার-দাবার সঙ্গে নিয়েই সফরে বের হতেন চসেস্কু। প্রতিবেশি দেশ যুগোশ্লাভিয়া সফরকালে চসেস্কুকে কাঁচা সবজির জুস পান করতে দেখে অবাক হয়েছিলেন কমরেড মার্শাল টিটো। এ সফরকালে চসেস্কু সব তরল খাবার খেয়েছিলেন। তবে নিজ বাসায় আহারের সময় আস্ত মুরগির স্ট্যু পছন্দ করতেন চসেস্কু।

আর কমরেড মার্শাল টিটোর সবচেয়ে বেশি পছন্দ ছিল বিশেষভাবে রান্না করা শুয়োরের চর্বির গরম গরম চওড়া ফালি।

পর্তুগালের এ্যান্টনিও সালাজার পছন্দ করতেন তেলে বা টমেটোর সসে সংরক্ষণ করা ছোট ধরণের সারাডিন মাছ। এ মাছ তাকে তার ছোটবেলার দারিদ্রের কথা মনে করিয়ে দিত। ছোট বেলায় সহোদর ভাইয়ের সঙ্গে একটি সারাডিন মাছ ভাগ করে খেতেন সালাজার।

এডলফ হিটলার, মাও সেতুং এবং বেনিতো মুসোলিনি যে বিশাল দায়িত্বের ভার নিজ থেকেই কাঁধে নিয়েছিলেন তা তাদের পরিপাক প্রক্রিয়ায় বিশাল চাপের সৃষ্টি করতো। হিটলার অব্যাহতভাবে পেট-ফাঁপা সমস্যায় ভুগতেন। আর সে কারণে তিনি নিরামিষভোজী হয়ে উঠেছিলেন। হাতুড়ে ডাক্তার থিয়োডোর মোড়েল তাকে এ জন্য ২৮ পদের ওষুধ খাওয়াতেন।

তবে মুয়াম্মার গাদ্দাফি পেট-ফাঁপা সমস্যায় ভুগলেও তাকে রোগ-শোকে ভুগতে হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে এক নাজি ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মুসোলিনিকে দারুণভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য আক্রান্ত বলে ঘোষণা করেন।

কমরেড মাও সেতুং ছিলেন দারুণভাবে মাংসভোজী। আর পরিপাকের ব্যাপারেও ছিলেন দারুণ সন্তুষ্ট। শুরুর দিকে এক কমরেডকে তিনি লিখেছিলেন: ‘‘ আমি যেমন প্রচুর খাই, তেমনি প্রচুর মলত্যাগ করি।” তবে বেশ পরে স্ট্যালিনের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সোভিয়েত রাশিয়া সফরের সময় বিপাকে পড়েছিলেন তিনি। সেখানে তিনি মোটেও মলত্যাগ করতে পারছিলেন না। কারণ, উবু হয়ে বসার নীচু ধরণের যে টয়লেট তিনি ব্যবহার করতেন মস্কোতে তা তিনি পাচ্ছিলেন না।

কমরেড স্ট্যালিনের কঠোর নামের সঙ্গে তার ধাতের বেশ মিল ছিল। নিজের ক্ষমতা দেখাতে গ্রাম্য ধাঁচের বাড়ি ‘দাচা’য় খাবার টেবিলে জর্জিয়ার বিশেষ ধরণের উপাদেয় খাদ্য পরিবেশন করাতেন  তিনি। রাত এগারোটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত আয়োজিত এ ভোজসভায় আমন্ত্রিতদের আহারের পর নাচ-গানের সঙ্গে মদ পান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ছিল বাধ্যতামূলক।

কমরেড নিকিতা ক্রুশ্চেভের নৈশভোজ পর্ব অতিরিক্ত মদ পানে আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হবার মত অসংযমী পরিস্থিতি এবং নিষ্ঠুর রসিকতার মধ্যদিয়ে শেষ হতো। যুগোশ্লাভিয়ার কমরেড মার্শাল টিটো মদপান অব্যাহত রাখতেন আর নিজের জ্যাকেটের হাতা বমিতে ভরিয়ে ফেলতেন।

তবে ফিলিপাইনের ফার্ডিনান্ড ও ইমেলদা মার্কোস নিষ্ঠুরতার দিক দিয়ে স্ট্যালিনের চেয়ে খানিকটা কম ছিলেন। একবার স্বামীর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ফিলিপাইন সেনাবাহিনীর সব শীর্ষ কর্তাদের নারীর পোশাক পড়ে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন ইমেলদা।

নিরামিষভোজী হিটলার তার খাবার টেবিলে খাওয়ার ভাণ করার পাশাপাশি সঙ্গীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ইউক্রেনের কসাইখানার গল্প করতেন। বিষয়টি এমনই বিব্রতকর যে, তার মাংসভোজী আহার-সঙ্গীরা খাবার শেষ না করেই উঠে পড়তেন।

মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের জ্যাঁ বেডেল বোকাসা, উগান্ডার ইদি আমিন বা ইক্যুয়াটোরিয়াল গায়ানার ফ্রান্সিসকো নগুয়েমার ব্যাপারটা ধারণা করা কঠিন। তাদের সবাই নরমাংসভোজী ছিলেন বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা হয়। বোকাসার একজন সাবেক রাধুনীর বর্ণনায় মদে ভিজানো মরা মানুষের দেহের সঙ্গে চালে ভাপানো খাদ্য তালিকার কথা উঠে এসেছে।

নিষ্ঠুর ও ভ্রমগ্রস্ত একনায়কদের কাছে খাদ্য-পরীক্ষকরা ছিল অতি দামি। যুদ্ধকালীন সময়ে হিটলারের ছিল ১৫ সদস্যের খাদ্য-পরীক্ষকের একটি নারী বাহিনী। ওই নারী বাহিনীর সদস্যরা খাবার খেয়ে পরীক্ষা করার পর ৪৫ মিনিট পর্যন্ত জীবিত থাকলে তবে সে খাবার হিটলারের টেবিলে পরিবেশন করা হত।

বাবার এক খাদ্য-পরীক্ষককে হত্যার অপরাধে পিটুনী ও কারাদণ্ড পেয়েছিল সাদ্দাম হোসেনের ছেলে উদে হোসেন।

রোমানিয়ার কমরেড নিকোলাই চসেস্কু উচ্চ পদস্থ বিশেষ ধরণের নিরাপত্তা কর্মী ছাড়া কখনো সফরে বের হতেন না। এ বিশেষ নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন রসায়নবিদ এবং তার সঙ্গে ভ্রাম্যামাণ খাদ্য-পরীক্ষা যন্ত্র থাকতো।

কিন্তু এত এত খাদ্য-পরীক্ষক বা রসায়নবিদ বিশ্বের এসব খামখেয়ালী ও স্নায়বিক অস্থির লোকদের রক্ষা করতে পারেনি। অবশেষে তারা সবাই মারা গেছেন এবং কেউ কেউ মারা গেছেন অপঘাতে।-বিবিসি অনলাইন অবলম্বনে