Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

এটিএম আজহারের রায় মঙ্গলবার

azharজামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় মঙ্গলবার।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলাটি সিএভি (অপেক্ষমাণ) রাখেন। ট্রাইব্যুনাল অন্য সদস্য হলেন- বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। এর আগে এটিএম আজহারের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার ও শিশির মো. মুনির। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও তুরিন আফরোজ।

chardike-ad

যুক্তি উপস্থাপন শেষে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, “এ আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত সব কয়টি অভিযোগ প্রমাণে আমরা সক্ষম হয়েছি। আশা করছি তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে।”

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনীত একটি অভিযোগেরও কোনো ভিত্তি নেই। রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়ে তার অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আশা করি তিনি খালাস পাবেন।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে প্রসিকিউশনের ১৯তম এবং সর্বশেষ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) এম ইদ্রিস আলীর জেরার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণন শেষ হয় গত ৭ জুলাই।।

গত বছরের ৫ ডিসেম্বর আজহারের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলাম।

এর আগে ১২ নভেম্বর এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।

এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, অপহরণ, গুরুতর জখম ও অগ্নিসংযোগের ছয়টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতেও (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি।

গত বছরের ২৯ আগস্ট ও ৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলাম।

অন্যদিকে ২৪ সেপ্টেম্বর ও ১০ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে শুনানি করেন আজহারের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মুনির ও ইমরান এ সিদ্দিকী।

গত বছরের ২৫ জুলাই এটিএম আজহারুলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ১৮ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগটি দাখিল করেন প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর নুরজাহান বেগম মুক্তা। চারটি ভলিউমে ৩০০ পৃষ্ঠায় দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগে আজহারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে নয় ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়।

এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২৭ মার্চের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংঘটক, ভাসানী (ন্যাপ) নেতা ও বিশিষ্ট আইনজীবী এ ওয়াই মাহফুজ আলীসহ ১১ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন করা হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ১৬ এপ্রিল রংপুরের বদরগঞ্জ থানার ধাপপড়ায় ১৫ জন নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙ্গালীকে গুলি করে গণহত্যার সঙ্গে এ আসামি জড়িত ছিলেন।

তৃতীয় অভিযোগে হচ্ছে, এ আসামি একই বছরের ১৭ এপ্রিল রংপুরের বদরগঞ্জের ঝাড়ুয়ার বিল এলাকায় ১২শ’র বেশি নিরীহ লোককে ধরে নিয়ে গণহত্যা চালানোর সঙ্গে জড়িত।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, ১৭ এপ্রিল কারমাইকেল কলেজের চারজন অধ্যাপক ও একজন অধ্যাপক পত্মীকে ধরে দমদম ব্রিজের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যার সঙ্গে এ আসামি জড়িত।

পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে রংপুর শহর ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মহিলাদের ধরে এনে টাউন হলে আটকে রেখে ধর্ষণসহ শারীরিক নির্যাতনের সঙ্গে এ আসামি জড়িত। একইসঙ্গে তাদের হত্যা ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এ আসামি।

ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রংপুর শহরের গুপ্তাপাড়ায় একজনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়।

একই বছরের ১ ডিসেম্বর রংপুর শহরের বেতপট্টি হতে এজনকে অপহরণ করে রংপুর কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে নিয়ে আটক রেখে নির্যাতন করে গুরুতর জখম করার সঙ্গে এ আসামি জড়িত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদেশে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট আজহারের ঢাকার মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় এটিএম আজহারুল ইসলামকে। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।