Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ছয় সহস্রাধিক বিরোধী নেতাকর্মী গ্রেফতার

arrest

বিরোধী রাজনীতি দমনে দেশজুড়ে চলছে গণগ্রেফতার ও নির্মম নির্যাতন। সরকারবিরোধী আন্দোলন থামাতে ব্যবহার করা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের নামে দেশের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় চলছে সাঁড়াশি অভিযান। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় চলছে যৌথ অভিযান। এসব অভিযানে গত ১২ দিনে গ্রেফতার হয়েছেন ছয় সহস্রাধিক রাজনৈতিক নেতাকর্মী।

chardike-ad

এর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষও। গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকের ওপর নিয়ম বহির্ভূত অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ মিলেছে। আটকের পরে ‘ক্রসফায়ারের’ নামে নেতাকর্মীদের মেরে ফেলার অভিযোগও উঠেছে।

বিশেষ করে গুলি করে মারার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রকাশ্য ঘোষণা আশার পর থেকে মাঠপর্যায়ের সদস্যরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চলতি সপ্তাহেই এ অভিযানকে আরো তীব্রতর করে যৌথবাহিনী গঠন করে চিরুনি অভিযানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

দেশে সরকারবিরোধী শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেফতারের পাশাপাশি তৃণমূলপর্যায়ের নেতাকর্মীদের ওপর চলছে গ্রেফতার ও নির্যাতন। তাদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে নেয়া হচ্ছে রিমান্ডে। নিরাপত্তা হেফাজতেও তাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে অভিযান চালানো হচ্ছে। সন্ত্রাসী গ্রেফতারের নামে তাদের হাতে সাধারণ মানুষকেও নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অধিকাংশ এলাকায় ঘরবাড়িতে যেতে পারছেন না বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা। আত্মগোপনে থেকে কোনো মতে তারা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। গ্রেফতার হলেই নতুন নতুন মামলায় আসামি করা হচ্ছে তাদের।

গত ৬ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী টানা অবরোধ চলছে। অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি হরতাল কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। দেশের সব জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সরকারবিরোধী আন্দোলনের সাথে জড়িত নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে যৌথবাহিনী এবং স্থানীয় থানা পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় ৬ জানুয়ারির আগ থেকেই শুরু হয় গ্রেফতার। তবে ৬ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ১২ দিনে যে সংখ্যক গ্রেফতার হয়েছেন তার সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। বরিশাল মহানগর ও জেলায় গ্রেফতার হয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এ এলাকার বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী এখন আত্মগোপনে। ভোলায় গ্রেফতার হয়েছেন ৪৮ জন, এর মধ্যে সদর থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শফিউল্লাহ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক মীর রনি রয়েছেন। ঝালকাঠীতে গ্রেফতার হয়েছেন ১৬ জন। পিরোজপুরে ১৩ জন, পটুয়াখালীতে ৩৫ জন, লক্ষ্মীপুরে ২৮৮ জন, ফেনীতে ২১০ জন, নোয়াখালীতে ২৮৫ জন, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় সাড়ে তিন শতাধিক গ্রেফতার হয়েছেন। চট্টগ্রামে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম চৌধুরী ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি এনামুল হক রয়েছেন। কক্সবাজারে গ্রেফতার হয়েছেন ৩৫ জন, রাঙ্গামাটিতে আটজন, বান্দরবানে সাতজন, খাগড়াছড়িতে ১৫ জন, কুমিল্লায় ১৩০ জন, চাঁদপুরে সদর জামায়াত সাধারণ সম্পাদক মো: শাহজাহানসহ ১১৩ জন গ্রেফতার হয়েছেন। সিলেটে মহানগর জামায়াত সভাপতি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও মো: সোহেল আহমদ, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী ও সদস্যসচিব বদরুদ্দোজা সেলিমসহ শতাধিক গ্রেফতার হয়েছেন। মৌলভী বাজারে গ্রেফতার হয়েছেন অর্ধশতাধিক, বি.বাড়িয়ায় দেড় শতাধিক, হবিগঞ্জে ৯ জন, সুনামগঞ্জে ১৩২ জন, খুলনায় ১৪৬ জন, যশোরে ১২৯ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১৫ জন, মেহেরপুরে ৪৫ জন, বাগেরহাটে জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সরদার লিয়াকত ও পৌর জামায়াতের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদসহ দেড়শতাধিক, সাতক্ষীরায় সাড়ে তিন শতাধিক, ঝিনাইদহে ১৭৫ জন, কুষ্টিয়ায় ৪০ জন, নড়াইলে পৌরমেয়র ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলীসহ দেড়শতাধিক, নাটোরে ২৩ জন, পাবনায় জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুর রহিম, পৌর আমির আব্দুল লতিফসহ তিন শতাধিক, বগুড়ায় দুই শতাধিক, রাজশাহী মহানগর ও জেলায় দুই শতাধিক, নীলফামারীতে ২৩ জন, লালমনিরহাটে শতাধিক, রংপুরে ৭৪ জন, সিরাজগঞ্জে ৩০ জন, জয়পুরহাটে ১৫ জন, পঞ্চগড়ে ৩৭ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৩০ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাঁচ শতাধিক, গাজীপুরে ২০ জন, ময়মনসিংহে ৩৫ জন, মানিকগঞ্জে দুই শতাধিক, কিশোরগঞ্জে ১০ জন, নেত্রকোনায় দেড়শতাধিক, জামালপুরে ৯ জন, শেরপুরে পাঁচজন, টাঙ্গাইলে ২০ জন, মাদারীপুরে দু’জন, শরীয়তপুরে একজন, রাজবাড়ীতে ১৬ জন, সাভারে ছয়জন, মুন্সীগঞ্জে ২০ জন, নরসিংদীতে চারজন, দিনাজপুরে ৩০ জন, গাইবান্ধায় শতাধিক, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অর্ধশতাধিক ও নারায়ণগঞ্জে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকসহ প্রায় অর্ধশত গ্রেফতার হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তারা শুধু বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী। এর বাইরেও অনেক রয়েছেন যাদের সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঢাকা মহানগর ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোহন ব্যাপারীকে (৪৮) গ্রেফতারের পর পুলিশ নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবার। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে র‌্যাবের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন ছাত্রদল নেতা মতিউর। এ দিকে নিহতের পরিবার ও দলীয় সূত্র দাবি করেছে, মতিউরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারণ এলাকায় চলমান আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।

দেশের সব এলাকা থেকেই খবর পাওয়া গেছে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা বাসাবাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না। তাদের আটকের পর পুরনো মামলা ছাড়াও নতুন করে গাড়ি পোড়ানো মামলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকেরই কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের নথিতে অ্যান্ট্রি না দেখিয়ে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখা হচ্ছে। তাদের অনেকের পরিবারই তাদের গুম হওয়া স্বজনদের ফিরে না পাওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত।

এ দিকে গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশ কর্তারা বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ রয়েছে তাদেরই কেবল গ্রেফতার করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর এলাকায় গ্রেফতারকৃতদের ব্যাপারে মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাদেরই গ্রেফতারের আওতায় আনা হচ্ছে।

সূত্রঃ নয়াদিগন্ত