Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে জাতীয় সরকার

politicsদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে ত্রাণকর্তা হতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। তার নেতৃত্বে সবদলের সমন্বয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের অধীনে হবে আগামী নির্বাচন। সংকট সমাধানে কূটনীতিকরা এমন ফর্মুলা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন। এ ফর্মুলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মনোভাব ইতিবাচক বলে জানা গেলেও প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব এখনো জানা যায়নি। তার পক্ষ থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত পেলেই ফর্মুলা বাস্তবায়নে কাজ শুরু হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারক এবং কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ১৬ দেশের রাষ্ট্রদূত গত ৩ মার্চ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠকে তিনটি সমাধান সূত্র বা ফর্মুলা দেয়। এই সব ফর্মুলার মধ্যে একটির বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন। কূটনীতিকরা এখন এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জবাবের অপেক্ষায় রয়েছেন।

কূটনীতিকরা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে যে তিনটি সমাধান সূত্র দিয়েছেন সেগুলো হচ্ছে- (এক) শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে সবগুলো দলের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন এক জাতীয় সরকারের অধীন নির্বাচন। (দুই) প্রেসিডেন্টের অধীনে সবগুলো দলের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। (তিন) আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা হচ্ছে তা বন্ধ করে সংলাপ শুরুর পরিবেশ তৈরীর নিশ্চয়তা।

chardike-ad

কূটনীতিকদের দেয়া এ তিনটি সূত্রের মধ্যে দ্বিতীয় সূত্রে সমাধানের বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তিনি প্রেসিডেন্টের অধীনে সবগুলো দলের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচনের সূত্র মেনে নিয়েছেন। কূটনীতিকরা এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোন উত্তর তারা এখনো পায়নি। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী দু’তিনদিনের মধ্যে সরকারের তথা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জবাব পাওয়া যাবে। সে জবাব ইতিবাচক হবে এমনটাই তারা প্রত্যাশা করছেন।

কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মতে, দেশের চলমান সংকট সমাধানের বিষয়টি এখন সম্পূর্ণরূপে প্রধানমন্ত্রীর উপর নির্ভর করছে। তার উদারতা এবং আন্তরিকতাই দেশকে এই ভয়াবহ সংকট থেকে উদ্ধার করতে পারে।

এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবীর ইনকিলাবকে জানান, কূটনীতিকদের উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক। সংকট সমাধানে তারা কি আলোচনা করছেন তা তো বলা যায় না। তবে তাদের আলোচনায় বিভিন্ন ফর্মুলার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে এবং গ্রহণযোগ্য সমাধানের মধ্য দিয়ে সংকট থেকে বেরিয়ে আসা যায় সেটা অবশ্যই জাতির জন্য ভাল। জনগণ এসব আর দেখতে চায় না। তিনি বলেন, উভয় পক্ষ চাইলে সমাধান যে কোন ফর্মুলাতেই হতে পারে। দু’পক্ষের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ফর্মুলা হলেই দ্রুত সমাধান বেরিয়ে আসবে।

জাতিসংঘের কসভো মিশনের সাবেক প্রধান অ্যাম্বাসেডর এস এম রাশেদ আহমেদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, সত্যিকারভাবেই যদি কোন সমাধানের দিকে দেশ এগিয়ে থাকে। তা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। বাংলাদেশ একটি মুসলিম মেজরিটি দেশ হিসেবে কূটনীতিকদের কাছে শান্তিপূর্ণ সমাধানই বাঞ্ছনীয়। কারণ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে যতই নাশকতা, বোমা হামলা ইত্যাদির অভিযোগ তোলা হোক না কেন, সরকার চাইলে এগুলো নিরসন করতে পারে। তিনি আরো বলেন, পাশ্চাত্য দেশসমূহের ভয় হলো, যদি বাংলাদেশের সমস্যা গণতান্ত্রিকভাবে সমাধান না হয় এবং এখানে গণতন্ত্র বিপন্ন হয় তবে তাদের ধারণা এখানে জঙ্গীবাদের জন্ম হতে পারে। এজন্য তারা তৎপর যেন এখানে কোন জঙ্গীবাদ তৈরী না হয়। আর শক্তি ব্যবহার করে কোন দেশেই সরকার জনগণকে বা কোন আন্দোলনকে দমাতে পারেনি। এজন্য রাজনৈতিক সমাধান হলো ভালো উপায়। আমি কসভোতে জাতিসংঘের পক্ষে দায়িত্ব পালন করেছি। সেখানেও অস্ত্র বা শক্তি প্রয়োগ করে কোন সমাধান হয়নি। বরং আলোচনাতেই সমাধান হয়েছিল। বাংলাদেশেও এ ধরনের কোন উদ্যোগেই সমাধান হবে। আমি মনে করি কূটনীতিকরা যদি উভয়পক্ষের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ফর্মুলা নিয়ে সংকটের সমাধান করতে পারে তাহলে এটি একটি পজিটিভ বিষয়। কারণ আমাদের বন্ধু দেশগুলো এখন আর নাক গলাবার কথা বলে না। তারা এখন বলে অংশীদার হিসেবে সমস্যার সমাধানে সহযোগিতা করার কথা। আর ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোদীও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে সাক্ষাতের পর বাংলাদেশে গণতন্ত্র দেখতে চায়। এগুলো সবই ভালো লক্ষণ। যেহেতু আমাদের দেশের সমস্যাটি রাজনৈতিক, তাই এ সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবেই হতে হবে।

কূটনীতিকদের নতুন ফর্মুলার বিষয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ ফোরাম স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশ আজ এক গভীর সংকটে। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আমরা বার বারই আলোচনার কথা বলছি। কূটনীতিকরা যদি গ্রহণযোগ্য কোন ফর্মুলা নিয়ে সংকটের সমাধান করতে চায় তাহলে বিএনপি এবং ২০দলীয় জোট তাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাবে। স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, চেয়ারপার্সনের সাথে কূটনীতিকদের কি আলোচনা হয়েছে তা এখনো আমি জানিনা। কারণ আমাদের স্থায়ী কমিটির বৈঠক করার কোন সুযোগ নেই। তবে যতটুকু জেনেছি তাতে একটা ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছি। বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০দলীয় জোট নেত্রীও তার প্রস্তাব কূটনীতিকদের জানিয়েছেন। এখন সরকার প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রী চাইলেই সংকটের সমাধান হতে পারে বলে আমি মনে করি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ময়দানে সংলাপ বা আলোচনা হবে না এমন বক্তব্য দিলেও ভিতরে ভিতরে তারাও সংকট উত্তরণে সম্মানজনক সমঝোতার কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের গত কয়েকদিনের আচরণ এমনই ইঙ্গিত বহন করে।

বাংলাদেশের চলমান সংকট নিয়ে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সার্বক্ষণিক নজরদারি সরকার কিছুতেই এড়িয়ে যেতে পারছেনা। কূটনৈতিক চাপ সরকারকে বার বার ভাবনায় ফেলেছে। সর্বশেষ সদ্য সফর করে যাওয়া ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের মনোভাবের ফলে সরকার কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব তাদের পররাষ্ট্রনীতি যে আগের মতো চলবে না তার ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। এর ফলে সরকার বর্তমান সংকট নিরসনের ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। সরকারের এই ইতিবাচক ভাবনার প্রতিফলন যত দ্রুত ঘটবে জনমনে স্বস্তি এবং দেশে শান্তি শৃংখলা তত দ্রুত ফিরে আসবে এমনটাই বিশ্লেষকদের ধারণা।  ইনকিলাব থেকে নেওয়া।