Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ঝুলে গেল ১৪ লাখ মানুষের ভাগ্য

malaysiaমালয়েশিয়ায় বছরে এক লাখের বেশি কর্মী পাঠানোর কথা থাকলেও দুই বছরে মাত্র সাত হাজার পাঠাতে সক্ষম হয়েছে সরকার। এ ধীরগতির কারণে হতাশায় ভুগছেন মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু ১৪ লাখ নিবন্ধনকারী। অনেকে আশা ছেড়ে দিয়েছেন, কেউ আবার আশায় ভর করে স্বাভাবিক কাজকর্মও ছেড়ে দিয়েছেন।

নিবন্ধনকারীদের অভিযোগ, সরকার একদিকে কম খরচে বিদেশ নেয়ার আশ্বাস দিয়ে বেসরকারিভাবে যাওয়ার পথকে বন্ধ করে দিয়েছেন। অন্যদিকে নিবন্ধন করে বছরের পর বছর বসিয়ে রেখেছে।

chardike-ad

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মালয়েশিয়া বিষয়ক সেল সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১০ লাখ লোকের চাহিদাপত্র পাঠিয়ে তা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারলে ক্রমান্বয়ে আরও ৫ লাখ লোক নেয়ার আশ্বাস দেয় মালয়েশিয়ান সরকার। এজন্য ২০১৩ সালে নিবন্ধন করেন ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৭৭৬ জন। নিবন্ধনকারীদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৩৬ হাজার ৩৮ জনকে নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচিতদের তিন ভাগে ভাগ করে ২৩ জানুয়ারি প্রথম দফায় পাঠানোর জন্য লটারিতে ১১ হাজার ৭৫৮ জনের যাবতীয় কাগজপত্র তৈরি করা হয়। এরপর আরও দুই ধাপে ২৪ হাজার ২৪০ জনের কাগজপত্র তৈরি করে মালয়েশিয়া পাঠায় বিএমইটি।

প্রথম দফায় কাগজপত্র পাঠানো লোকদের মধ্যে ওই বছরের এপ্রিলে ১৯৮ জন শ্রমিককে মালয়েশিয়া পাঠানোর মাধ্যমে শুরু হয় দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি। এরপরই শুরু হয় ধীরে চলো নীতি। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চাপ দিলে দুই বছরে মাত্র সাড়ে ৭ হাজার ভিসা দেয় তারা। তবে ২০১৩ সালের এপ্রিলে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হলেও ২০১৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সর্বমোট ৭ হাজার ১৬৬ জন কর্মী নিয়েছে তারা।

বিএমইটির মালয়েশিয়া বিষয়ক সেলের প্রধান (উপ-পরিচালক, বিএমইটি) নজরুল ইসলাম খানের কাছে লোকপাঠানোর এই ধীর গতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘প্রতিবেশী অন্যান্য দেশে ভিসা বিক্রি করে লোক পাওয়ার কারণে বাংলাদেশ থেকে বিনা টাকায় লোক নিতে আগ্রহী হচ্ছে না মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো। মালয়েশিয়ার সরকার বাংলাদেশ থেকে লোক নেয়ার কথা বললেও কোম্পানিগুলোর চাহিদা না থাকায় পর্যাপ্ত লোক নিতে পারছে না তারা।’

তিনি জানান, কোম্পানিগুলো ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়া থেকে টাকাসহ লোক পাচ্ছে। আর বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি থাকায় উল্টো টাকা খরচ করে নিতে হচ্ছে। তাই কোম্পানিগুলো পর্যাপ্ত চাহিদাপত্র দিচ্ছে না। যার ফলে মালয়েশিয়ার লোক নেয়ার প্রক্রিয়ায়টা এখন একটু ধীর গতিতেই চলছে। তবে তিনি আশা করছেন, এ সমস্যা বেশি থাকবে না। কাগজপত্র তৈরি করে মালয়েশিয়া পাঠানো হয়েছে। এখন শুধু ভিসা দেয়ার প্রক্রিয়া বাকি।

এদিকে কম খরচে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আশায় অন্য দেশে যাওয়ার চিন্তাও বাদ দিয়েছে বিদেশ গমনেচ্ছু নিবন্ধনকারী চট্টগ্রামের রবিউল ইসলাম। কাগজপত্র মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কারণে ভিসা পাওয়ার আশায় নতুন করে কোনো কাজে হাত না দিয়ে হতাশায় ভেঙে পড়ছেন প্রথম ধাপে মালয়েশিয়া কাগজপত্র পাঠানো এই নিবন্ধনকারী।

তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট, মেডিকেল চেকআপ, ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে দুই বছর হলো। আজ কাল করে আশা দেয়া হচ্ছে মন্ত্রণালয় থেকে। এখানে ঝুলে থাকায় অন্য দেশের জন্য চেষ্টাও করছি না। যে কোনো সময় হবে বলে আশ্বাস দিচ্ছে তারা। এজন্য কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যও করা যাচ্ছে না। আর এভাবে ২ বছর ধরে বেকার বসে আছি এক প্রকার হতাশা নিয়ে।’

তার মতো আরো অনেক নিবন্ধনকারী আশায় বুক বেঁধে হাতপা গুটিয়ে বসে আছেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ কূটনৈতিক যোগাযোগের পর ২০১২ সালে ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে দেশটি। একই বছরের ২৬ নভেম্বর দুই দেশের সরকারের মধ্যে সরকারিভাবে লোক নিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

স্বাক্ষর শেষে ঢাকা ফিরে সংবাদ সম্মেলন করে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, মালয়েশিয়া বনায়ন (প্লান্টেশন) খাতে কর্মী নিতে ১০ হাজার চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। এরপর প্রতিমাসেই তারা ১০ হাজারের বেশি লোক নেবে এ খাতে। এ জন্য মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহীদের একটি তথ্যভাণ্ডার করা হবে।

মন্ত্রীর এ ঘোষণায় ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে আগ্রহীদের নিবন্ধন শুরু হয় সারা দেশে। যাতে নিবন্ধন করেন ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৭৭৬ জন। আর এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মোট খচর হয় প্রায় ৭ কোটি টাকা।

সুত্রঃ বাংলামেইল২৪ডটকম