Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কামারুজ্জামানের সঙ্গে কারাগারে স্বজনদের শেষ সাক্ষাৎ

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দন্ড পাওয়া জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন স্বজনরা কারাগারে শেষ সাক্ষাৎ করেছেন। আজ রাতে ফাসিঁ কার্যকর করার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় সাক্ষাৎ শেষে সাড়ে ৫টা ২০ মিনিটের দিকে কারাগার থেকে বেরিয়ে যান কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা। এ সময় তারা গণমাধ্যমের সাথে কোন কথা বলেননি। বের হয়ে চলে যাওয়ার সময় কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের মধ্যে কেউ কেউ ভি চিহ্ন দেখান। আবার কারো চোখে পানিও দেখা যায়।

chardike-ad

দুটি গাড়িতে করে বিকাল ৪টার দিকে কামারুজ্জামানের স্ত্রী নুরুন্নাহার, ভাই কামরুল ইসলাম, শ্যালক রুম্মান, ছেলে হাসান ইমাম ও হাসান ইকবাল, মেয়ে আতিয়া নূর ও দুই শিশুসহ ২৪ জন সদস্য কারাগারে প্রবেশ করেন। এর আগে কামারুজ্জামানের সঙ্গে তার স্বজনদের বিকাল ৪ টা থেকে ৫ টার মধ্যে কারাগারে দেখা করতে কারা কর্তৃপক্ষ আজ দুপুরে শেষ বারের মতো অনুমতি দেয় বলে জানান তার ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী।

সূত্র জানায়, কামারুজ্জামানের ফাঁসির দন্ড কার্যকরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ও আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের হাতে পৌছাঁছে। আজ রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে ফাঁসি কার্যকর করার সম্ভাবনা রয়েছে।

kamaruzzaman-sptরায় কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করা হয়েছে। কারাগার ও আশপাশের এলাকায় নেয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা।
কামারুজ্জামানের সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার আইনজীবীরা ৮ এপ্রিল সাক্ষাত করেন। প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না সে বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কি-না, এ প্রশ্নের জবাবে কামারুজ্জামানের আইনজীবী এডভোকেট শিশির মনির সাক্ষাত শেষে ওইদিন সাংবাদিকদের বলেন,“তিনি আমাদের কাছে আইনের প্রভিশনগুলো জানতে চেয়েছেন, দেশে কী নজির রয়েছে তা জানতে চেয়েছেন। আমরা তাকে সাধ্যমতো জানিয়েছি। বাকি বিষয়গুলো নিতান্তই তার সিদ্ধান্তের বিষয়। তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না সে বিষয়ে ভেবে-চিন্তে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে আমাদের জানান।”

কামরুজ্জামানের প্রাণভিক্ষার বিষয় জানতে কেন্দ্রীয় কারাগারে গতকাল দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট কারাগারে গিয়েছিলেন। ম্যাজিস্ট্র্যাট তানভীর মোহাম্মদ আজিম ও মাহবুব জামিল কারাগারে যান। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন, ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দার ও সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী। কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষা চাননি।

কামারুজ্জামানের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজ করে ৬ এপ্রিল রায় দেয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ।

গত ৮ এপ্রিল ওই রায়ে স্বাক্ষর করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও বেঞ্চের তিন বিচারপতি। তিন বিচারপতি হলেন-বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। রিভিউ খারিজ করে দেয়া রায়ের কপি ওইদিনই ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করে সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা। পরে ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্টার আফতাব-উজ-জামান রায়ের কপি কেন্দ্রিয় কারাগার কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট জায়গায় ওইদিন বিকেলে পৌছেঁ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ রায়ের কপি পাওয়ার পরপরই তা আসামি কামারুজ্জামানকে পড়ে শুনায় বলে কারা সূত্র জানায়।

গত ৫ মার্চ কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদনটি দাখিল করা হয়েছিল। গত বছরের ৩ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি) সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ কামারুজ্জামানকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রেখে রায় দেয়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ৫৭৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আসামিপক্ষের রিভিউ আবেদনের সূযোগ থাকায় সে অনুযায়ি তারা আবেদন দাখিল করেছিল।

একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়। সে থেকে তিনি কারাগারে আছেন।