Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

২৪ বছর পর হারিয়ে যাওয়া শিশু ফিরে পেল পিতাকে

lost-sonকারো মন এতটা পাথরতো ছিলনা যে, তখন তারা চোখের পানি ধরে রাখতে পারে। চার বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া শিশু ২৪ বছর পর যখন আপন পিতার বুকে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন তখন উপস্থিত সবার চোখ ভিজে গেছে।

চীনের সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী চেংদুর একটি বাজারে সানের বাবা শাকসব্জি বিক্রি করত। সে ১৯৯১ সালের কথা। একদিন সকালে সানের বাবা সানকে নিয়ে গেলেন তার সব্জির দোকেন। তখন সানকে চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। সানকে ২৫০ পাউন্ড দামে বিক্রি করে দেয় এক হাজার মাইল দূরের এক নি:সন্তান দম্পতির কাছে। সানের বাবা এবং মা সানকে সারা চীনের কত জায়গায় কতভাবে খুঁজেছে। কিন্তু পেলনা। সানের শোকে অসুস্থ হয়ে মারা গেল সানের মা ।

chardike-ad

সানের বাবা কু জানান, আমি সেদিন বাজারে আমার এক কাস্টমারের সাথে কথা বলছিলাম। সান দোকানের পাশেই দাড়ানো ছিল। একটু পর দেখি সে নেই। সান যখন হারিয়ে যায় তখন তার বয়স মাত্রা ৪ বছর ১৫ দিন ছিল।

সান জানায় তারা আমাকে যত্নের সাথেই লালন পালন করেছে। কিন্তু আমার মনে সবসময় ইচ্ছা ছিল আমাকে আমার আসল মা-বাবাকে খুঁজে বের করতে হবে। আমি যখন আমার আসল মা-বাবার সন্ধান শুরু করলমা তা আমি তাদের কাছে বলিনি কারণ তারা তাহলে অস্থির হয়ে পড়তে পারে। সান জানায় আমি ২০১০ সাল থেকে খোঁজা শুরু করি এবং সরকারির কর্তৃপক্ষের কাছে আমার ডিএনএ নমুনা জমা দেই যাতে তারা সরকারি ভান্ডারে রক্ষিত অন্যান্য নাগরিকদের নমুনার সাথে আমার নমুনা ম্যাচ হয় কি-না তা মিলিয়ে দেখতে পারে।

সানের ভাগ্য খুবই ভাল এবং এটা একটা বিরল ঘটনা হয়ে গেল কারণ সানের ডিএনএ নমুনার সাথে একজনের নমুনার মিল পায় কর্তৃপক্ষ।

সানের বাবা-কু জানান, আমি আর সানের মা মিলে সানের সন্ধানে সারা চীনে কত জায়গায় চার বছর ধরে ঘুরে বেড়িয়েছে । কিন্তু তার কোন খোঁজ পেলামনা। অবশেষে ১৯৯৫ সালে তাকে খোঁজা বন্ধ করে দেই। কারণ তখন আমাদের ঘরে একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। সন্তান গর্ভে আসায় সানের মা আর চলাফেরা করতে পারতনা।

তাছাড়া নতুন মেয়েটি জন্মানোর পর তাকেও আমাদের দেখাশোনা করতে হত।
সানকে হারানোর পর থেকেই তার মা অসুস্থ হয়ে পড়ে। দীর্ঘ শোকে সে অনেক কাতর হয়ে পড়ে। সানের অভাবে সে কখনো স্বাভাবিক আর হাসিখুসী জীবন যাপন করতে পারেনি। কোনমতে বেঁচে থেকে জীবনকে চালিয়ে নেয়া যাকে বলে সেরকম ছিল তার জীবন। এভাবে সানের শোকে আর দু:খে ধীরে ধীরে অসুস্থ হতে হতে অবশেষে ২০১১ সালে সে মারা গেল।

সানের পিতা জানান, সান নিখোঁজ হবার চারদিন আগে একটি ছবি তোলা হয়েছিল। ছবিতে দেখা যায় তিনি সানকে তার কোলের মাঝে দাড় করানো অবস্থায় ধরে আছেন তাদের বাড়ির সামনে। আর পেছনে দাড়িয়ে তা দেখছেন সানের মা লো। কু জানান, ছবিটি আজো আমি সংরক্ষন করে রেখেছি।

তার আর কোন স্মৃতি আমার কাছে ছিলনা শুধু এই চার বছর ১৫ দিন বয়সের ছবিটি ছাড়া।

কু জানান আমরা যখন সানের সন্ধান করছিলাম তখন একটি সন্ধান আমাদেরকে আরেকটি সন্ধানের দিকে টেনে নিয়ে যেত। তাকে ফিরে পাবার আশাই আমাদেরকে একের পর এক খোঁজার কাজে লিপ্ত রাখত। আমরা মনে করতাম হয়ত ওখানে গিয়ে খুঁজলে পাওয়া যাবে। এভাবে খোঁজার একটি অধ্যায় আমাদেরকে ক্রমে আশান্বিত করে অন্য আরেকটি অধ্যায়ে নিয়ে যেত। আমরা অনেক অসহায় ছেলের সন্ধান পেয়েছি কিন্তু সানকে কোথাও পেলামনা।

অবশেষে একদিন চেংদু পুলিশ আমাকে ফোন দিয়ে বলল আমার সানকে খুঁজে পাওয়া গেছে।
আপন পিতা এবং বোনের সাথে মিলিত হয়ে সান আবেগ আপ্লুত। কিন্তু সে চায়না তাকে লালনকারী মা-বাবার কোন শাস্তি হোক। সে দুই পরিবারকেই দেখা শুনা করতে চায়।

পিতার সাথে মিলিত হবার পর সান ছুটে যায় তার মায়ের কবরের কাছে। সেখানে গিয়ে কান্নায় কবরের সামনে লুটিয়ে পড়ে সান। হাটু গেড়ে মাটিতে বসে অনেক্ষন অঝোরে মায়ের জন্য কাঁদলেন সান।