Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন মোড়?

modi-nawazদুই দেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটি ফোনালাপ আর একটি বৈঠক। সেখান থেকেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের বরফ-শীতল বাস্তবতা নিরসনের সম্ভাবনা খুঁজছে চিরবৈরী ওই দুই দেশের মানুষ। খুঁজছে স্থিতিশীল সম্পর্কের পাটাতন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণে নওয়াজ শরীফের আগমনের মধ্য দিয়ে চির বৈরি দুই দেশ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের খানিকটা ইঙ্গিত মিললেও পরবর্তীতে হতাশই হতে হয় সবাইকে। ২০১৪ সালের ১৬ই আগস্ট জম্মু-কাশ্মিরের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুরিয়তের সঙ্গে পাকিস্তানি দূতের বৈঠকের জেরে স্থগিত হয়ে যায় দুদেশের পররাষ্ট্র সচিবদের মধ্যে নির্ধারিত বৈঠক। সেই শীতলতার সূত্র ধরে ২০১৪ সালের ২৮ শে নভেম্বর নেপালের ধূলিখেলে সার্ক সম্মেলনে কেবল করমর্দনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন মোদি-নওয়াজ।

chardike-ad

তবে এরপরে পেশাওয়ারের স্কুলে জঙ্গি হামলা, নেপাল আর বিহারের ভূমিকম্পকে কেন্দ্র করে দুদেশের প্রধানমন্ত্রী পরস্পরকে ফোন দিলেও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার নিয়ে আলোচনা হয়নি কখনো। সম্প্রতি রমজানের শুরুতে আবার টেলিফোনে সৌজন্য কথন হয় মোদি-নওয়াজের। ধারণা করা হচ্ছে হয়তো সে আলাপে মোদি-নওয়াজের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের সূচনা হয়েছিল যার হাত ধরে সম্প্রতি রাশিয়ার উফা শহরে মুখোমুখি আলোচনায় বসেন তারা।

এদিকে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত ঘণ্টাখানেকের ওই একান্ত বৈঠকে সার্ক সম্মেলন উপলক্ষে আগামী বছর পাকিস্তান যাওয়ার ঘোষণা দেন নরেন্দ্র মোদি। তার আগে নয়াদিল্লিতে সন্ত্রাস নিয়ে বৈঠকে বসবেন দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। ২৬/১১-র হামলার বিচার দ্রুত শেষ করার পথ খোঁজার যৌথ অঙ্গীকারও করেন তারা।

যৌথ বিবৃতিতে ভারত-পাকিস্তান দু’পক্ষই দক্ষিণ এশিয়া থেকে সন্ত্রাসকে উপড়ে ফেলার ডাক দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গোটা অঞ্চলে ‘শান্তি বজায় রাখা’ এবং ‘উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায়’ দু’দেশের ‘যৌথ দায়িত্ব’ রয়েছে। নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠকের পর দু’দেশের ডিজি (মিলিটারি অপারেশনস) এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ডিজি’-রাও বৈঠকে বসবেন বলে জানানো হয়।

বাংলাদেশে এসে ‘পাকিস্তান উপদ্রব সৃষ্টি করছে এবং সন্ত্রাসবাদকে মদদ দিয়ে প্রতিনিয়ত ভারতকে বিপদে ফেলতে চাইছে’ বলে মোদির মন্তব্যের পর এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় পাকিস্তান। সেসময় ভারত থেকেও পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যকার এ ধরনের উত্তেজনা উদ্বেগ ছড়িয়েছিল গোটা দক্ষিণ এশিয়ায়। তবে এবার দুদেশের মধ্যকার সম্পর্কের উষ্ণতাকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব।

এরইমধ্যে মোদি-শরিফের বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপ-মুখপাত্র মার্ক টোনার বলেন ‘নরেন্দ্র মোদি আর নওয়াজ শরীফের মধ্যে যে বৈঠকটি হয়েছে এবং ভারত-পাকিস্তান ভবিষ্যতে নিজেদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের যে ঘোষণা দিয়েছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই।’ দুদেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অচল থাকা আলোচনা নতুন করে শুরু করতে এবং মুম্বাই হামলা মামলার বিচার কাজ দ্রুততর করতে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে তারও প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র।

আর জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেন, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতি গোটা অঞ্চলের শান্তির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশ্ব নেতারা মোদি-শরীফের বৈঠককে বেশ ভালোভাবে নিলেও শেষ পর্যন্ত যৌথ বিবৃতিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ইসলামাবাদ মানবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের মতে, এমন প্রতিশ্রুতি আগেও পাওয়া গেছে, তবে তা বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যদিকে মোদির সঙ্গে আলোচনায় কাশ্মির ইস্যুটি না তোলায় নিজ দেশে ক্ষোভের মুখে পড়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফও।

ফাহমিদা উর্ণি