Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মালয়েশিয়ার ক্যাসিনোর গেইমের ফাঁদে বাংলাদেশিরা সর্বহারা

malaysia-casinoমালয়েশিয়ায় কুয়ালালামপুর ক্যাসিনোর গেইম সপ এর এক পাশে বসে চোখ মুছছিলেন বাংলাদেশী নির্মাণ শ্রমিক মোঃ মনির আহমেদ। দুই মাস কষ্ট করে দেশে পাঠানোর জন্য জমিয়েছিলেন ৬০০০ রিঙ্গিত। মাত্র ২ ঘণ্টার জুয়ায় সব শেষ। ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবার রাতের।

মোঃ মনির আহমেদের ভাষায়, ‘বহুবার প্রতিজ্ঞা করেছি, আর ক্যাসিনো গেইম নয়। কিন্তু হাতে অর্থ এলেই চলে আসি। সব খুইয়ে ঘরে ফিরতে হয়। মাঝে মধ্যে জিতলেও তা নগণ্য। তিন বছর ধরে লোকসান ওঠানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সফল হইনি। বরং লোকসানের অঙ্কই কেবল বেড়েছে। গত তিন বছরে ৬০ হাজার রিঙ্গিত ক্যাসিনোর গেইম খুইয়েছি।’ মোঃ মনির আহমেদ একাই নন। ক্যাসিনোর গেইম দোকানে প্রতিদিন আসছেন শতাধিক বাংলাদেশী। ক্যাসিনোর ফাঁদে পড়ে প্রতিদিন হারাচ্ছেন তাদের কষ্টার্জিত অর্থ।

chardike-ad

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছর ৩ বিলিয়ন ডলারের মুনাফা করে ক্যাসিনোর গেইম এর মালিকগন। এর মধ্যে কম করে হলেও ৫০০ কোটি টাকা যাচ্ছে বাংলাদেশীদের পকেট থেকে। প্রবাসীদের পাশাপাশি বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরাও নিয়মিত ক্যাসিনোয় এসে অর্থ দিয়ে যাচ্ছেন। বড় শিল্পপতিরাও এখানে এসে টাকা উড়িয়ে দেশে ফেরেন।

মালয়েশিয়া গেইম সপ, বিভিন্ন টেবিল ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ টেবিলে প্রতিবার বেটে ১০০ রিঙ্গিত নিচে খেলার সুযোগ নেই। তবে লাখ রিঙ্গিত বেটেরও সুযোগ রয়েছে। তবে শ্লট মেশিনে ৫-১০ সেন্ট দিয়েও খেলার সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ রিঙ্গিত মেশিনে জমা দিয়ে খেলা শুরু করতে হবে।

অতিথিদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে মালয়েশিয়ায় ক্যাসিনো গেইম। এখানে প্রতিদিন ১ লাখ ১০ হাজার অতিথি আসেন। এর মধ্যে চীনা, ভারতীয়, মালয়েশীয়, ইন্দোনেশীয় ও বাংলাদেশীই বেশি। এদের কারণেই মূলত টিকে আছে ক্যাসিনোর গেইম সপগুলো। মালয়েশিয়ায় লক্ষাধিক বাংলাদেশীর মধ্যে নিয়মিত ক্যাসিনোয় যাতায়াত করেন ৭০ হাজারের মতো। তাদের সবার উপস্থিতিতেই জমে ওঠে জুয়ার আড্ডা।

মালয়েশিয়া প্রবাসী ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মোঃ দেলোয়ার মিয়া বলেন, ক্যাসিনো এখন বাংলাদেশী কমিউনিটির অন্যতম সামাজিক সমস্যা। কোনো কোনো কোম্পানি শ্রমিকদের মালয়েশিয়া গেইম সপে যাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কারণ ক্যাসিনোগামী শ্রমিকদের কাজে মনোযোগ থাকে না। তারা ঘন ঘন কাজে অনুপস্থিত থাকেন।

মোঃ দেলোয়ার আরো মিয়া বলেন, মালয়েশিয়া সহস্রাধিক বাংলাদেশী রয়েছেন, যারা বছরের পর বছর মালয়েশিয়া থাকলেও বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। সারা বছর কাজ করলেও টাকার অভাবে দেশে যেতে পারেন না তারা। কাজ করেন মূলত ক্যাসিনোর জন্য। জানা গেছে, প্রতিদিন কয়েক হাজার বাংলাদেশী বড়লোক হওয়ার আশায় ক্যাসিনো গেইম খেলার জন্য আসেন। বেশির ভাগই অর্থ হারিয়ে ঘরে ফেরেন। মাসের ১০ তারিখের পর সংখ্যা আরো বাড়ে। বেতন পেয়ে পুরো মাসের অর্থই গেইম সপে দিয়ে আসেন। গেইম সপের প্রতি আসক্তির কারণে সর্বস্বাস্ত হয়ে পড়ছেন হাজারো প্রবাসী।

গেইম সপ এ কথা হয় ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সুহেল, কুমিল্লার ডালিম ও নারায়ণগন্জের আতাউরের সঙ্গে। তারা বলেন, বাংলাদেশী নির্মাণ শ্রমিকদের ৫০ শতাংশ নিয়মিত গেইম সপ আসে। জুয়ায় হেরে বেশির ভাগই মন খারাপ করে ঘরে ফেরে। কেবল নির্মাণ শ্রমিক নন, বাংলাদেশী নামিদামি ব্যবসায়ীও মালয়েশিয়া ক্যাসিনোর গেইম খেলার জন্য আসেন। হাজার হাজার রিঙ্গিত দিয়ে যান। এছাড়া মালয়েশিয়া বাংলাদেশী পেশাজীবী যারা ভালো রোজগার করেন,তারাও নিয়মিত ক্যাসিনোয় ঢুঁ মারেন। ছুটির দিনে নির্মাণ শ্রমিকরাও চলে আসেন জোয়া খেলার টানে।

ক্যাসিনোর মালয়েশিয়ায় গেইম সপ এ পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত আসেন ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মোঃ মনির হোসেন। তিনি বলেন, আগে সপ্তাহে একদিন আসতাম। এখন নিয়মিত আসি। পকেটে ১০০ রিঙ্গিত থাকলেই এখানে চলে আসি। বেশির ভাগ দিন হেরে ঘরে ফিরি। যেদিন ভাগ্য ভালো হয়, ১০০-৫০০ রিঙ্গিত পকেটে ওঠে। কিন্তু এমনটা মাসে দু-একবারের বেশি ঘটে না। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোটা মালয়েশিয়ায় গেইম সপ রয়েছে প্রায় ৫ লক্ষের মত। প্রতিটা দোকানে গেমিং মেশিন রয়েছে ৭০টা।