Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সাকা-মুজাহিদের রিভিউ আবেদন দাখিল

saka-mujahidফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ চূড়ান্ত রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন। সাকা চৌধুরীর পক্ষে অ্যাডভোকেট হুজ্জাতুল ইসলাম খান আল ফেসানী এবং মুজাহিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট শিশির মুহম্মদ মুনীর গতকাল বুধবার পৃথকভাবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন দাখিল করেন। এসব রিভিউ আবেদনে যুক্তি তুলে ধরে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পর্যালোচনা করে খালাস দেওয়ার আর্জি জানানো হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীর পক্ষে ১০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে মূল দশটি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের পক্ষে ৩৮ পৃষ্ঠার মূল ‘রিভিউ’ আবেদনে ৩২টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুই আসামির পক্ষে রিভিউ আবেদন দুটির ওপর শুনানি করবেন প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। বর্তমান অবকাশকালীন সময়ে রিভিউ আবেদনের শুনানি হবে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার সম্পূর্ণ প্রধান বিচারপতির। আগামী ১ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষ হবে।

chardike-ad

নিয়ম অনুযায়ী, রিভিউ নিষ্পত্তির আগে তাদের দ কার্যকর করা যাবে না। আর রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে সেই রায়ের অনুলিপি কারাগারে যাবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করবে।

রাষ্ট্রপক্ষ :পৃথক দুটি রিভিউ আবেদন দাখিলের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আশা প্রকাশ করে বলেন, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ াদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় পুনর্বিবেচনায় (রিভিউ) মৃত্যুদ বহাল থাকবে। তিনি বলেন, ফৌজদারি মামলার অভিজ্ঞতার আলোকে একজন আইনজীবী হিসেবে বলতে পারি, রিভিউতে তাদের মৃত্যুদ বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তিনি বলেন, এসব রিভিউ আবেদনের শুনানি যেন দ্রুত করা হয়, সে জন্য আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা আবেদন করব। ২০ অক্টোবর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত শুনানির জন্য দিন ধার্য করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মুজাহিদ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মুজাহিদ আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন, একাত্তরের ওই সময়ের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। পাকিস্তানিদের দোসর হয়ে তিনি এসব অপরাধ করেছেন। এ ছাড়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে ছিলেন না বলে তার আইনজীবীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সাকা চৌধুরী পাকিস্তানে ছিলেন এ বিষয়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত তারা আদালতে দেখাতে পারেননি; বরং তার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হয়েছে, তা আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি।

আসামিপক্ষ :অপরদিকে দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, রিভিউ শুনানিতে যদি সাক্ষ্য-প্রমাণের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে মুজাহিদের মৃত্যুদ হয়তো টিকবে না।

সাকা চৌধুরীর বিষয়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, তিনি স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় দেশে ছিলেন না। ওই সময় তিনি পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন। রিভিউ আবেদনে এটাই যুক্তি সহকারে তুলে ধরা হয়েছে। এ কারণে তিনিও খালাস পাবেন বলে আশা করছি।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ দুই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। পরদিন রায়ের কপি বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হলে বিচারকদের স্বাক্ষর শেষে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়। এ দুটি মৃত্যু পরোয়ানার কপি (ডেথ ওয়ারেন্ট) লাল-সালুতে মুড়িয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং গাজীপুর কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে পৌছার পর দুই ফাঁসির আসামিকে মৃত্যুর পরোয়ানা পড়ে শোনায় জেল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের ত্রাস সাকা চৌধুরী এবং একাত্তরে বদরবাহিনীর প্রধান মুজাহিদের দ কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৬৬ বছর বয়সী সাকা চৌধুরী কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে এবং ৬৭ বছর বয়সী মুজাহিদ বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।