Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

চোখের জলে পঁয়ষট্টি বছর…

ছে হি ইয়াংয়ের জন্ম ১৯৫০ সালে। এমন এক সময়ে পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন যখন তাঁর জন্মভূমি ঘোর অমানিশার অন্ধকারে হারাতে বসেছে। কোরিয়া উপদ্বীপ উত্তর-দক্ষিণে ভাগ হয়ে নেমেছে অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধে। ইয়াংয়ের জীবনের প্রথম চারটে বছর কেটে গেলো সে মৃত্যুর উৎসবেই। একদিন যুদ্ধ শেষ হল, দক্ষিণ কোরিয়া আর উত্তর কোরিয়া নামে জন্ম নিল দুটো আলাদা রাষ্ট্র। সুবিশাল সব কাঁটাতারের বেড়া চিরে গেলো কোরিয়ার বুক, দু’পাশে প্রহরায় নিয়োগ হল সশস্ত্র বাহিনী। এই সীমান্ত, এই কাঁটাতার অনির্দিষ্টকালের জন্য পৃথক করে দিল অগুনিত পরিবার; মা এপারে তো ছেলে ওপারে, বাবা দক্ষিণে আর মেয়ে উত্তরে, স্বামী কেসংয়ে তো স্ত্রী পাজুতে। রাষ্ট্র, আইন, সীমান্ত, সংবিধান এসব ভারী ভারী শব্দ বোঝে নি কিংবা বুঝতে চায় নি স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার কষ্ট। বহু কোরিয়ান জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আর প্রিয়জনের দেখাই পান নি, নিষ্ঠুর পৃথিবীর বুকে শেষ নিঃশ্বাস ছেড়েছেন কি নিদারুণ আক্ষেপ আর প্রচণ্ড অভিমান নিয়ে।

হি ইয়াংকে অবশ্য ওই কষ্ট চেপে রেখেই পৃথিবী ত্যাগ করতে হচ্ছে না। জন্মের ৬৫ বছর, হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন পঁয়ষট্টি বছর পর জন্মদাতা বাবা ছে হুন সিকের মুখদর্শন হয়েছে তাঁর! এই পুরো সময়টায় একটাবার ফোনেও কথা বলার সুযোগ হয় নি, ইমেইল-ইন্টারনেট তো ‘দূর কি বাত’। জীবনের এতোগুলো বছর বাবা-ছেলে কাটিয়ে দিলেন একে-অপরকে না দেখে, স্রেফ একটা ‘ডিমিলিটারাইজড জোন’-এর দূরত্বে! ভাবতে পারেন ৬৫ বছরের আপনি ৮৮ বছর বয়সী আপনার বাবাকে জীবনে প্রথমবার দেখে পরিচয় দিচ্ছেন, “বাবা, আমি তোমার ছেলে!” বাপ-ব্যাটা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি আর আটকে রাখতে পারলেন না। একের আনন্দাশ্রুতে ভিজলো অন্যের গ্রীবা আর হাতের রুমাল।

chardike-ad

এই পিতা-পুত্রের মতো কয়েকশ’ কোরিয়ান নাগরিক আজ থেকে ৬৫ বছর আগে হারিয়ে ফেলা প্রিয়জনদের সান্নিধ্য উপভোগ করছেন। যুদ্ধের সময় পৃথক হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোকে মিলিত করতে দুই কোরিয়ার ধারাবাহিক আয়োজনের অংশ হিসেবে এই সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরা।

AEN20151020006652315_02_i

উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূল সংলগ্ন কুমগাং পাহাড়ে দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্যোগে গড়ে তোলা অবকাশযাপন কেন্দ্র ‘ডায়মন্ড মাউন্টেন রিসোর্ট’-এ চলছে এই পুনর্মিলনী। গত প্রায় পৌনে দু’ বছরের মধ্যে এ ধরণের আয়োজন এটাই প্রথম। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালে ৯৬টি পরিবারের ৩৮৯ জন দক্ষিণ কোরিয়ান ১৬টি বাসে করে পূর্ব সীমান্ত পাড়ি দিয়ে উত্তর কোরিয়া পৌঁছেন। সেখানে তাঁদের সাথে মিলিত হচ্ছেন ওসব পরিবারের ১৪১ জন উত্তর কোরিয়ান সদস্য। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছয়টি ভাগে এসব পরিবারকে মিলিত হবার সুযোগ দেয়া হবে। একটি পরিবার সাকুল্যে ১২ ঘন্টা করে একত্রে সময় কাটাবে।

reunion1 (Custom)

দ্বিতীয় দফায় আগামী শনি থেকে সোমবার ৯০টি পরিবারের আড়াইশ’ দক্ষিণ কোরিয়ান একই রিসোর্টে তাঁদের উত্তর কোরিয়ান স্বজনদের সাথে মিলিত হবেন। এ পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩০ হাজার দক্ষিণ কোরিয়ান নাগরিক উত্তরে তাঁদের স্বজনদের সাথে দেখা করার আবেদন করেছেন। তবে এঁদের মধ্যে অর্ধেকই ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রিয়জনের মুখদর্শনের আশায় এখনও বেঁচে আছেন ৬৬ হাজারের মতো আবেদনকারী।

২০০০ সালে প্রথমবারের মতো শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ২০ দফায় এ ধরণের পুনর্মিলনী আয়োজিত হয়েছে। এছাড়া সাতটি ভিডিও সংলাপেও স্বজনদের দেখা পেয়েছেন পৃথক হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যরা।