স্বপ্নের কখনও সীমা থাকতে নেই। মাশরাফি বিন মর্তুজাদেরও নেই। স্বপ্নের মত একটি মৌসুম কাটানোর পর সেই স্বপ্নটা আরও প্রলম্বিত। টানা ৫টি সিরিজ জয়ের পর সফরকারী জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডোবানো। মুস্তাফিজুর রহমান যেমন সেই স্বপ্নের কথা জানিয়ে গেলেন, তেমনি দেশের প্রতিটি ক্রিকেট প্রেমীই চায়, হোয়াইটওয়াশের মধ্য দিয়েই যেন বছরটা শেষ করুক টিম বাংলাদেশ।
নিজ দেশেই আফগানিস্তানের মত দলের কাছে নাকানি-চুবানি খেয়ে এসেছে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশে আসার পর তারা চেয়েছিল, হতাশা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো; কিন্তু ঘূরে দাঁড়ানো তো সম্ভব হয়’ইনি। বরং, টানা দুই ম্যাচ হারিয়ে সিরিজে পরাজিত এখন তারা।
এখন শেষ ম্যাচটায় কোনমতে জিততে পারলে সম্মান রক্ষা। সম্মান রক্ষা হোক কিংবা, স্বান্তনার ম্যাচ হোক, শেষ ম্যাচে জয়ের খোঁজে রয়েছে জিম্বাবুয়ে। এমনই এক সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে সিরিজের শেষ ওয়ানডে। বুধবার দুপুর ১টায় মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে এই ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ এবং জিম্বাবুয়ে। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও গাজী টেলিভিশন।
পরপর দুই ওয়ানডেতে টানা জয়ে সিরিজ জেতার পর বাংলাদেশের সামনে ঘুরে ফিরেই আসছে সেই ‘হোয়াইটওয়াশ’। প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করা বাংলাদেশ এখন যেন রীতি বানিয়ে ফেলেছে। বুধবার জিতলেই আরেকটি ৩-০। প্রথম ম্যাচে ১৪৫ রানে, সাকিব বিহীন দ্বিতীয় ম্যাচে ৫৮ রানের জয়। তৃতীয় ম্যাচের ব্যবধানটা কী হবে?
এখন দাপট দেখিয়ে শেষ ম্যাচে জিততে পারলেই পূর্ণতা পাবে সিরিজ। এমনকি পরীক্ষা-নীরিক্ষার সুযোগটাও আজ জয়ের কাছে গুরুত্বহীন। জয়ের জন্য টাইগাররা কতটা ক্ষুদার্থ তা জানিয়েই মাশরাফির বক্তব্য ছিল, ‘দলের ১৪ জনই সেরা ক্রিকেটার, সবাই খেলতে পারে। আর এই জার্সি গায়ে নেমে টানা একশটি ম্যাচ জেতার পরও নিশ্চয়ই চাইবেন না হারতে। আমার বিশ্বাস, সবার নিবেদনটা একইরকম থাকবে। শেষ ম্যাচটাও জয়ের জন্য আমরা মরিয়া হয়ে খেলব।’
তবে মাশরাফির ভয় ব্যাটিং নিয়ে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সিরিজে প্রতি ম্যাচেই আমরা ৩-৪ উইকেট হারিয়েছি শুরুতে। এটা দলের ওপর চাপ বাড়িয়ে দেয়। একটু সাবধান থাকতে হবে ব্যাটসম্যানদের।’ দ্বিতীয় ওয়ানডে শেষে মাশরাফি জানিয়েছিলেন, সাকিব আল হাসানকে ছাড়া দল গঠন করা খুবই কঠিন। সাকিব থাকলে একাদশ সাজানোর ক্ষেত্রে একজন ব্যাটসম্যান ও বোলার হিসেব ধরেই দল সাজাতে পারে টিম ম্যানেজম্যান্ট। তার পরিবর্তে আসলে দু’জন খেলোয়াড়ের দরকার হয়।
অবশ্য দ্বিতীয় ম্যাচে সাকিবের জায়গায় সুযোগ পাওয়া ইমরুল কায়েসের ব্যাটেই সোমবার জিতেছে বাংলাদেশ। তবুও অধিনায়কের চিন্তা এখন ব্যাটিং নিয়েই। দু’একজন ছাড়া বাকিরা কেউ ভালো করতে পারছেন না। ব্যাটিংয়ের শুরুটা ভালো চান মাশরাফি।
ঘরের মাঠে পাঁচে পাঁচ তো হল। এবার আরো একটি বিশেষণ লাগানোর সুযোগ। তবে এ হোয়াইটওয়াশের মিশনে ডেঙ্গুজ্বর থেকে ফিরেই মাঠে নেমে পড়া অধিনায়ককে তৃতীয় ম্যাচটা বিশ্রামে রাখার পরিকল্পনা ছিল; কিন্তু সাকিব না থাকায় মাশরাফির বিশ্রাম নেয়া কঠিন; এছাড়া একাদশে আর পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। চুড়ান্ত দলে থাকা জুবায়ের হোসেন লিখন, কামরুল ইসলাম রাব্বি ও এনামুল হক বিজয় এখনো সুযোগ পাননি। এমনকি শেষ ম্যাচেও রাব্বির একাদশে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
সামনের টি২০ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে আল-আমিনকে আরো একম্যাচে ঝালিয়ে নিতে চায় টিম ম্যানেজম্যান্ট। ব্যাটিংয়ে তামিম ইকবাল এখনও বড় স্কোর করতে পারেননি। দ্বিতীয় ম্যাচে ইমরুলের ব্যাটিং কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে স্বগতিক শিবিরে। মুশফিকুর রহিম অবশ্য ছন্দে রয়েছেন। লিটন কুমার দাস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ রান পাচ্ছেন না। সাব্বির নির্ভরযোগ্য ব্যাটিং ও নাসির ছন্দে ফেরায় লোয়ার মিডল অর্ডার নিয়ে কিছুটা স্বস্তিতে বাংলাদেশ দল।
অপরদিকে টানা দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হারিয়ে হতাশ সফরকারী জিম্বাবুয়ে। মঙ্গলবার অতিথি দলের কোনো ক্রিকেটার মাঠমুখো হয়নি। দ্বিতীয় ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর এল্টন জিগুম্বুরা বলেছিলেন, ‘২৪০ রান (২৪১) টপকানো সম্ভব; কিন্তু সেটা না করতে পেরে হতাশ আমরা।’ জিম্বাবুয়ের বোলাররা এখন পর্যন্ত ভালো করেছেন; কিন্তু ব্যাটসম্যানদের কেউ বড় স্কোর করতে পারছেন না।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ : মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, লিটন কুমার দাস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন, আরাফাত সানি, মুস্তাফিজুর রহমান ও আল-আমিন হোসেন।