Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রযুক্তি বিশ্বের শীর্ষে অ্যাপল পিছিয়ে মাইক্রোসফট

apple-microsoftমার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল। ১৯৭৬ সালে স্টিভ জবস এবং স্টিভ ওজনিয়াকের হাত ধরে এ প্রতিষ্ঠানের পথ চলা শুরু হয়। প্রযুক্তি বাজারের বিভিন্ন খাতে অবদান রেখে এরই মধ্যে সফল একটি প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে মোবাইল ডিভাইস বাজারের সিংহভাগ মুনাফাই ঘরে তুলছে প্রতিষ্ঠানটি, যা সম্ভবপর হচ্ছে একমাত্র আইফোন ডিভাইসের কল্যাণেই। অন্যদিকে বিল গেটসের হাত ধরে ১৯৭৫ সালে পথ চলা শুরু হয় মার্কিন সফটওয়্যার নির্মাতা মাইক্রোসফটের। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রায় একই সময় যাত্রা হলেও অ্যাপল এখন প্রযুক্তি দুনিয়ায় একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে আছে। কিন্তু গত দশকজুড়েই প্রযুক্তি খাতে আধিপত্য হারিয়েছে মাইক্রোসফট। প্রতিষ্ঠানটি একমাত্র উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম দিয়েই প্রযুক্তি খাতে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে। কিন্তু উইন্ডোজকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে অন্যান্য পণ্যের মাধ্যমে মানুষকে মাইক্রোসফটে সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়। আর তারই নেতিবাচক প্রভাব এখন প্রতিফলিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির সামগ্রিক ব্যবসার ওপর। সম্প্রতি বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে এ দুই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।

প্রযুক্তি খাতের প্রভাবশালী এ দুই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার শুরুটাও প্রায় একইভাবে। অর্থাত্ উভয় প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ও প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ নির্মাণের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। মাইক্রোসফট একমাত্র উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে প্রায় দেড় দশক প্রযুক্তি বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য করেছে। সে সময় মানুষের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে মাইক্রোসফট। অপারেটিং সিস্টেমে নতুন নতুন ধারণার আঙ্গিকে তৈরি ফিচারের সংযোজন প্রতিষ্ঠানকে জায়গা করে দেয় মানুষের হূদয়ে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তি খাতে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীর আবির্ভাব ঘটে। ব্যবসা সম্প্রসারণে নানামুখী কৌশল গ্রহণ করতে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে প্রযুক্তি খাত প্রসারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট খাতে প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। এ সময়ের মধ্যে বৈশ্বিক প্রযুক্তি বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার। কিন্তু মাইক্রোসফট তাদের ধ্যান-জ্ঞান শুধু সফটওয়্যার ব্যবসায়ই সীমাবদ্ধ রাখে।

chardike-ad

অন্যদিকে অ্যাপল দীর্ঘসময় সাফল্য না পেলেও প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল আধিপত্য বিস্তারের। মানুষের মধ্যে প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারের পরিবর্তিত প্রবণতা অনুধাবন করে ২০০৭ সালে প্রথম আইফোন ডিভাইস উন্মোচন করে অ্যাপল। মূলত এর পর থেকেই আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি প্রতিষ্ঠানটিকে। এ সময়ের মধ্যে পার্সোনাল কম্পিউটারের পরিবর্তে স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে মাইক্রোসফট। সেই সময় থেকেই এ পর্যন্ত আর পূর্বের সাফল্যে ফিরতে পারেনি সফটওয়্যার খাতের প্রভাবশালী এ প্রতিষ্ঠান।

বিশ্লেষকদের মতে, সঠিক সময়ে মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আইফোন উন্মোচন করে অ্যাপল, যা প্রযুক্তি দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। এছাড়া সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রয়াত স্টিভ জবস পণ্যের বিষয়ে অত্যন্ত খুঁতখুঁতে ছিলেন। উন্নত প্রযুক্তি এবং আকর্ষণীয় নকশার ডিভাইস সরবরাহ করে এখন অ্যাপল বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি।

বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৯৯ সালে উইন্ডোজ দিয়ে বাজিমাত করেছে মাইক্রোসফট। ২০১৫ সালে এসে ওই একই রকম বাজিমাত করছে অ্যাপল। আর এটি করেছে আইফোন ডিভাইসের মাধ্যমে। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে আইফোনের মাধ্যমে ভিন্ন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটি করেছে অ্যাপল, যা মাইক্রোসফট উইন্ডোজ দিয়ে করতে সক্ষম হয়নি।

বেশ দেরিতে হলেও সফওয়্যারের পাশাপাশি হার্ডওয়্যার খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণের গুরুত্ব বুঝতে পারে মাইক্রোসফট। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে নকিয়ার সেলফোন বিভাগকে অধিগ্রহণ করে। কিন্তু যে সময় ফিনল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সেলফোন বিভাগকে অধিগ্রহণ করা হয়, তার আগেই সেটি একটি লোকসানি ব্যবসায় পরিণত হয়েছিল। ফলে এক্ষেত্রেও একটি বড় ধাক্কা খায় মাইক্রোসফট।

মাইক্রোসফটের বর্তমান সিইও সফটওয়্যারের পাশাপাশি হার্ডওয়্যার খাতেও আধিপত্য বাড়াতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। মূলত উন্নত প্রযুক্তির ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসের মাধ্যমে স্মার্টফোন বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়াতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। মোবাইল ডিভাইস বাজারে মাইক্রোসফট কতটুকু প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তা দেখতে আরো অপেক্ষা করতে হবে প্রযুক্তিপ্রেমীদের।