Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

‘ভিয়েতনাম’ কি পরবর্তী সিলিকন ভ্যালি?

vietnamযুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এডি থাই ও বিন ট্রান। সফল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ক্লাউটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিন ট্রান এটি বিক্রি করেন ২০ কোটি ডলারে। এডি থাই হার্ভার্ড ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। দুজনেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। এ দুই প্রযুক্তিবিদ সহজেই স্থান করে নিতে পারতেন গুগল, অ্যাপল কিংবা ফেসবুকের মতো আমেরিকার শীর্ষ কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে। অথচ তারা সেই দিকে যাননি। তাদের নজর ছিল ভিয়েতনামের দক্ষিণাঞ্চলের হো চি মিন শহর।

শুধু এডি থাই ও বিন ট্রান নন, এশিয়ার এ দেশটির প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনেক কোম্পানি। গত ২০ বছরে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল বাজারগুলোর অন্যতম ভিয়েতনাম, বললেন থাই। তার ভাষায়, ১০ বছর আগে দেশটিতে মাত্র ৪০ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল। এখন তা ছাড়িয়ে গেছে চার কোটির মাইলফলক। আবার ১০ বছর আগে এখানে স্মার্টফোনের ব্যবহার না থাকলেও এখন এ পণ্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা তিন কোটি। আরো বলেন, দেশটি শিক্ষা খাতেও এগিয়েছে। গণিত ও বিজ্ঞানে শিক্ষার্থীদের স্কোর যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের চেয়ে বেশ ভালো। এর মৌলিক কারণ কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রভাব। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিলিকন ভ্যালির তকমাটা ভিয়েতনামের সঙ্গে এখনই জুড়ে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

chardike-ad

হো চি মিন শহরের উপকণ্ঠের একটি এলাকা আগে সবাই চিনত সাইগন নামে। ছয়-সাত মাস আগে এখানে এলে দেখা মিলত ধানক্ষেতের। কিন্তু এখন আর তেমনটি নেই। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এখানে দেখা যাবে ‘সাইগন সিলিকন সিটি’। এ প্রকল্পের ভিয়েতনামিজ-আমেরিকান বিনিয়োগকারী ও চেয়ারম্যান হিউ মিন গুয়েন বেশ আশাবাদী বিশ্বের পরবর্তী সিলিকন ভ্যালি নিয়ে। ভিয়েতনামের তরুণ সমাজ, দক্ষ জনশক্তি ও উদার করনীতিতে আকৃষ্ট হয়ে স্যামসাং, ইন্টেল হো চি মিনের হাই-টেক পার্কের কাছাকাছি এলাকায় এরই মধ্যে কার্যালয় স্থাপন করেছে। এ অবস্থায় হিউয়ের সিলিকন ভ্যালি গড়ার স্বপ্ন একদিন সফল হবে, তা আশা করাই যায়। থাই জানান, আমরা গেমিং, চ্যাট ও ই-কমার্সের প্লাটফর্ম ভিএনজি স্থাপনে উদ্যোগ নিয়েছি। ২০০৪ সালে ভিয়েতনামে প্রথম ভিএনজি করপোরেশন চালু হয়। ২০১৪ সালে এর বাজারমূল্য ছিল ১০০ কোটি ডলার।

এডি থাইয়ের ভিয়েতনামে আসার কারণটা ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম ও বেড়ে ওঠা হলেও তার পূর্বপুরুষরা ছিলেন এ দেশের বাসিন্দা। নিজের শিকড়ের সন্ধানও ভিয়েতনামে আসার অন্যতম কারণ। ফরাসি উদ্যোক্তা কুন-হুয়ং ডুয়ংও ভিয়েতনামে প্রযুক্তি খাতে যোগ দিয়েছেন। বছর দুয়েক আগে নিজ দেশ ফ্রান্স থেকে এ দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি ভিয়েতনামের জন্য কাজ করতে চাই। এখানকার জনগণ কাজ করতে চায় উদ্যোক্তা হিসেবে। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রেও দেখা যায়। ফরাসিদের মধ্যে এ ধরনের চিন্তাধারা দেখা যায় না। বিদেশীরা তো রয়েছেই, দেশের নাগরিকরাও আগ্রহী হয়ে উঠছে প্রযুক্তি খাতে। ২০০৪ সালে ভিয়েতনামের উদ্যোক্তা ডিন আন হুয়ান সেলফোনের রিটেইল চেইন ঞযবমরড়রফরফড়হম.পড়স চালু  করেন। এর অর্থ ‘মোবাইল ওয়ার্ল্ড’। গত বছর স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। হুয়ানের ভাষ্যে, এ কোম্পানি থেকে আয় করেছি প্রায় ৩ কোটি ডলার। ভিয়েতনামের ২০টির মতো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছি আমি। এখন আমার লক্ষ্য অর্থ আয় নয়, ভিয়েতনামে তৈরি পণ্য রফতানি করা।

গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই গত ডিসেম্বরে ভিয়েতনাম সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী গুয়েন তান ডাংয়ের সঙ্গে। পিচাই ভিয়েতনামের ১ হাজার ৪০০ স্থানীয় তথ্য ও প্রযুক্তি প্রকৌশলীকে সার্চ ইঞ্জিনের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দেয়ার আশ্বাস দেন। তার মতে, ভিয়েতনাম অচিরেই গুগলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাজার হয়ে উঠবে।

সূত্র: বিবিসি