Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

রক্তে চর্বির পরিমাণ বেড়ে গেলে

healthপ্রত্যেক মানুষের রক্তে নির্দিষ্ট মাত্রায় চর্বি থাকে। কিন্তু এ চর্বির পরিমাণ যখন বেড়ে যায়, তখন এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে হূদরোগসহ মারাত্মক সব রোগের ঝুঁকি। এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে আমরা রক্তে চর্বির পরিমাণ কমাতে পারি বা কম রাখতে পারি। প্রথমেই কিছু সংযোজন বা বিয়োজনের মাধ্যমে খাদ্যতালিকা সমন্বয় করতে হবে।

গরু ও খাসির মাংস খাওয়া কমিয়ে দিন। পাশাপাশি কলিজাজাতীয় খাবারও আপনাকে কম খেতে বা খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

chardike-ad

প্রচুর পরিমাণে মাছ, শাকসবজি ও ফল খান।

দুধ বা দুধ থেকে উত্পন্ন খাদ্য যেমন: ঘি, পনির, মাখন, আইসক্রিম খাওয়া একদমই ঠিক হবে না।

কুসুম বাদ দিয়ে অর্থাত্ শুধু ডিমের সাদা অংশ খাওয়া উচিত।

নারকেল বা নারকেল দেয়া খাবার পরিত্যাগ করুন।

বলে রাখা ভালো, খাদ্যতালিকা সংশোধনের পাশাপাশি হূদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, এমন কোনো অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করতে হবে। পাশাপাশি উচ্চরক্তচাপ থাকলে এর জন্য সঠিক চিকিত্সা নেয়া জরুরি।

এর পর আসা যাক অ্যারোবিক এক্সারসাইজের বিষয়ে। সপ্তাহে অন্তত তিনদিন ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। তবে ব্যায়াম করার আগে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।

 

এবার আসা যাক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ভিটামিন প্রসঙ্গে। ভিটামিন এ, ই, আই, সি হচ্ছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ভিটামিন। এরা নানাভাবে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ও হূদরোগের ঝুঁকি কমায়। ভিটামিন এ রয়েছে রঙিন শাকসবজিতে। প্রতিদিন অন্তত ১৫ গ্রাম ভিটামিন এ আমাদের জন্য প্রয়োজন। তাই ভিটামিনসমৃদ্ধ প্রচুর পরিমাণ কাঁচা ও রান্না করা শাকসবজি, ফল গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

এছাড়া এমন কিছু ওষুধ রয়েছে, যেগুলো রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। আমরা সেগুলোকে মোটামুটিভাবে চারটি ভাগে ভাগ করতে পারি। এর মধ্যে বাইল এসিড রেজিনকে প্রথম ধাপের ওষুধ বলা হয়। এটি কোলেস্টেরল এবং বাইল এসিডের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে অন্ত্রে ও কোলেস্টেরলের শোষণ কমায়। এর সাহায্যে লিভার রক্ত থেকে বেশি পরিমাণ লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন শুষে নেয়। এ ধরনের ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। তবে এটা খেলে প্রচুর পরিমাণ পানি পান ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া এবং এতে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব হবে।

এর পর রয়েছে নায়াসিন বা নিকোটিনিক এসিড বি ভিটামিন। এটি লিভারের এলডিএল কোলেস্টেরল তৈরিতে বাধা দেয়। নায়াসিনের কর্মক্ষমতা ভালো হলেও এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। যেমন: মাথাব্যথা, চুলকানি ইত্যাদি।

অন্যদিকে আছে লোভাস্ট্যাটিন, সিমভাস্ট্যাটিন, প্রাভাস্ট্যাটিন ফ্লুভাস্ট্যাটিন জাতের ওষুধ। এসব ওষুধ লিভারে কাজ করে। এগুলো কোলেস্টেরল তৈরিতে বাধা দেয়। তবে স্ট্যাটিন নেয়ার আগে লিভারের কার্যক্ষমতা দেখে নেয়া প্রয়োজন। এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, যেমন: মাথাব্যথা, পেটব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য। তবে সবচেয়ে বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে মাংসপেশিতে ব্যথা। এ ওষুধ প্রতিদিন সন্ধ্যায় একবার গ্রহণ করলেই হয়।

এছাড়া জেমোফ্রিব্রেজিল ওষুধ সাধারণত ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে ব্যবহূত হয়। জেমোফ্রিব্রেজিল প্রায় সব রোগীরই সহ্য হয়। তবে কারো কারো ডায়রিয়া, শরীরে ফুসকুড়ি ওঠা, এসব হতে পারে। তাছাড়া ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। আগে পিত্তথলির অসুখ হয়েছে, এমন রোগীর জন্য নয় এটি।

জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হূদরোগের হাত থেকে রেহাই পেতে রক্তে কোলেস্টেরলের মান বা চর্বির মাত্রা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত রাখা প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার, প্রথমেই নজর দিতে হবে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকার দিকে। বর্জন করতে হবে অনেক কিছু, আবার গ্রহণ করতেও হবে বাড়তি কিছু। আর লিপিড প্রোফাইল করে জেনে নিতে হবে সব কোলেস্টেরলের মাত্রা।

 

ডা. ওয়ানাইজা, সহযোগী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিকস, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ