Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিশ্বজুড়ে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র বাণিজ্য

সিউল, ২১ জুলাই ২০১৩:

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে অস্ত্র ব্যবসা করেছে, এমন দেশের তালিকাটি ছোট হবে না। কিন্তু পানামায় সম্প্রতি আটক উত্তর কোরিয়ার জাহাজে চেপে দেশটিতে ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশ পাঠাচ্ছিল কিউবা— এমন তথ্যে অনেক বিশ্লেষক রীতিমতো আঁতকে উঠেছেন।

chardike-ad

উত্তর কোরিয়া ও কিউবা একইভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনোভাব পোষণ করে। গত মাসেই উত্তর কোরিয়ার সামরিক কর্মকর্তাদের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল হাভানা সফর করে গেল। তবে দেশ দুটো একে অন্যের প্রধানতম অস্ত্র বাণিজ্য অংশীদার— এমনটি বলা যাবে না। কিউবা বলছে, পানামায় আটক করা এ অস্ত্রগুলো পুরনো ও ব্যবহার অযোগ্য। এগুলো মেরামতের জন্য পিয়ংইয়ং পাঠানো হচ্ছিল।

flag-north-koreaঅস্ত্র কেনা, বেচা ও অন্যের হয়ে সরবরাহকারীর ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের ইতিহাস উত্তর কোরিয়ার। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। এ ব্যবসার বেশির ভাগই ছিল স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রিনির্ভর। পূর্ণাঙ্গ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার বাজার এখন সংকুচিত হয়ে এসেছে বলেই মনে করা হয়। এর একটি প্রধান কারণ হলো— তিনটি পারমাণবিক পরীক্ষার পর ২০০৬ সাল থেকে উত্তর কোরিয়ার আন্তর্জাতিক চাপ ও অস্ত্র রফতানিতে দেশটির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা। আরেকটি কারণ হতে পারে উত্তর কোরিয়ার প্রস্তুত করা এসব অস্ত্রশস্ত্র এখনো সোভিয়েত আমলের মানেই রয়ে গেছে। ফলে ক্রেতা নেই।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়া কোনো দেশে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য উপকরণ ও যন্ত্রাংশ কিংবা ভারী অস্ত্রশস্ত্র রফতানি করতে পারবে না। বিশ্লেষকদের দাবি, ১৯৯০ সালের পর থেকেই প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র উত্পাদনে সংযোজনযোগ্য যন্ত্রাংশ রফতানির ওপর জোর দিয়েছে উত্তর কোরিয়া।

এর আগেও বিভিন্ন সময়ে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্রের চালান বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর দিকে একটু নজর দিলেই উত্তর কোরিয়ার গ্রাহকদের সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যাবে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ জসোয়া পোলাক পরিচালিত ২০১১ সালের এক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে এ উদ্দেশ্যে। অস্ত্র পরিদর্শন ও বাজেয়াপ্তকরণের ওপর বিভিন্ন দাফতরিক প্রতিবেদনে দেয়া তথ্যও কাজে লাগিয়েছেন পোলাক।

মধ্যপ্রাচ্য: গত বছরের শেষ দিকে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান বন্দরে একটি চীনা জাহাজ থেকে ৪৪৫টি গ্রাফাইট সিলিন্ডার বাজেয়াপ্ত করা হয়। এগুলো আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা সম্ভব। উত্তর কোরিয়ায় তৈরি সিলিন্ডারগুলো নিয়ে চীনা জাহাজটি সিরিয়ায় রওনা দিয়েছিল। ২০০৯ সালে থাইল্যান্ড উত্তর কোরিয়ার একটি ভাড়া করা বিমানে ৩৫ টন ওজনের প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র আটক করে। এর মধ্যে ছিল ভূমি থেকে নিক্ষেপণযোগ্য কিছু ক্ষেপণাস্ত্র। ইরানের উদ্দেশে যাচ্ছিল বিমানটি। ২০০৭ সালে স্কাড ক্ষেপণাস্ত্রে ব্যবহারযোগ্য কিছু উত্তর কোরীয় প্রপেলার সিরিয়া যাওয়ার পথে আটক করা হয় বলে জাতিসংঘ কর্মকর্তারা জানান।

আফ্রিকা: আফ্রিকার কিছু ক্রেতা দেশের কাছে সোভিয়েত আমলের পুরনো রকেট, প্রচলিত আগ্নেয়াস্ত্র ও স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির চেষ্টা করেছে উত্তর কোরিয়া। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইরিত্রিয়া, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও বুরুন্ডির উদ্দেশে কিছু চালান আটকে দেয়ার খবর রয়েছে। ২০০৯ সালে কঙ্গোয় পাঠানো ট্যাংক যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য অস্ত্রের একটি চালান আটক হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। ১৯৯৯ ও ২০০০ সালে লিবিয়ার উদ্দেশে পাঠানো ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশ। ১৯৯৬ সালে সুইজারল্যান্ডে আটক হয় মিসরের উদ্দেশে পাঠানো গোলন্দাজ রকেট ও স্কাড ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশ।

মিয়ানমার: ওয়াশিংটনের দাবি, জান্তা সরকার ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছিল— মিয়ানমারকে তরল জ্বালানির মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ প্রযুক্তি দেবে উত্তর কোরিয়া। ২০০৯ সালের জুনে জাপানের একটি দৈনিকে বলা হয়েছিল, উত্তর কোরিয়ার নির্দেশনা মতো মিয়ানমারে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুতে ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রাংশ সরবরাহের চেষ্টায় তিনজনকে আটক করা হয়।

কিউবা: পানামায় আটক উত্তর কোরিয়ার জাহাজটিতে চিনির বস্তার কনটেইনারের নিচে রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশ ছিল। মিসাইল বিধ্বংসী ব্যবস্থায় এ রাডারগুলো কাজে লাগানো হয়। কিউবার দাবি, এগুলো নিতান্তই আত্মরক্ষামূলক। পুরনো যন্ত্রাংশগুলো মেরামতের জন্য উত্তর কোরিয়ায় পাঠানো হচ্ছিল।সুত্রঃ বণিকবার্তা