Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

এনটিপিসির সঙ্গে শ্রীলংকার কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প হচ্ছে না

nuclear-power-plant-in-bangladesh

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশনের (এনটিপিসি) প্রস্তাব বাতিল করেছে শ্রীলংকা। গত মঙ্গলবার দেশটির সর্বোচ্চ আদালতকে এ তথ্য জানিয়েছে শ্রীলংকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়।

chardike-ad

সুপ্রিম কোর্টকে শ্রীলংকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানায়, পরিবেশবাদীদের উদ্বেগের কারণে ত্রিনকোমালির শামপুরে প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে না। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবর্তে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের কথা  ভাবছে সরকার।

শ্রীলংকার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিনকোমালিতে কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের কথা ছিল। ভারতের বাইরে এটিই ছিল এনটিপিসির প্রথম আন্তর্জাতিক যৌথ উদ্যোগ। সিলন ইলেকট্রিসিটি বোর্ড (সিইবি) ও এনটিপিসির এতে সমান অংশীদারিত্ব ছিল। ২০০৬ সালে এ বিষয়ে চুক্তি করে শ্রীলংকা সরকার, সিইবি ও এনটিপিসি। এর পর ২০১১ সালে গঠন করা হয় ত্রিনকোমালি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। এ কোম্পানির মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াটের দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। প্রকল্পটি বাতিলে শ্রীলংকার এ সিদ্ধান্তকে এনটিপিসির জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। তবে এনটিপিসির কয়লাভিত্তিক এ প্রকল্প বাতিল করা হলেও প্রতিষ্ঠানটিকে শ্রীলংকার বিদ্যুৎ খাতের অন্য উেসর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে আগ্রহী বলে গত মঙ্গলবার জানান দেশটির বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (উন্নয়ন) সুলক্ষণা জয়াবর্ধনা।

সুলক্ষণা জয়াবর্ধনা ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য হিন্দুকে বলেন, ‘কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয় এখন এনটিপিসির সঙ্গে বিকল্প জ্বালানি উত্স নিয়ে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করার উপায় খুঁজছে। এনটিপিসি আগ্রহী হলে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তা বিবেচনা করব।’

এর আগে গত মে মাসে শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতি সিরিসেনার ভারত সফরের বিষয়টি উল্লেখ করে ওই সময় দেশটির পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী চান্দিমা ভীরাক্কোদি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির ভারত সফরের সময় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবর্তে এলএনজি প্লান্ট স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।’

ত্রিনকোমালি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (টিপিসিএল) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গত মঙ্গলবার দ্য হিন্দুকে জানান, দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে কয়েক মাস আগেই একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল বিকল্প খুঁজে বের করা। শ্রীলংকা এরই মধ্যে এ বিষয়ে মতামত দিয়েছে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করব আমরা।

এদিকে বাংলাদেশের রামপালে প্রস্তাবিত এনটিপিসির ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়েও আপত্তি তুলেছেন পরিবেশবাদীরা। প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকা সুন্দরবনের অনেক কাছে হওয়ায় শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছেন তারা।

দেশের সবচেয়ে বড় এ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১১ সালের ১০ জানুয়ারি ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে সরকার। এর পর একই বছরের ৩০ আগস্ট এনটিপিসির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এনটিপিসি ও পিডিবির সমান অংশীদারিত্বের এ যৌথ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৩৪ একর। কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হবে আমদানি করা কয়লা।

এ প্রকল্পে মোট ব্যয়ের ৩০ শতাংশ বহন করবে যৌথ উদ্যোগে গঠিত কোম্পানি বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)। বাকি ৭০ শতাংশ অর্থ ভারত সরকারের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেয়ার কথা।

উচ্চ ভর্তুকির এ প্রকল্প বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে করদাতা ও ভোক্তা সবাইকে আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে বলে এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গত জুনে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পটিতে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে রাখা হয়েছে একাধিক ভর্তুকির ব্যবস্থা। দুই দেশের সরকার এ প্রকল্পে মোট ৩০০ কোটি ডলার ভর্তুকি দেবে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু এর পরও বাংলাদেশে এ প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য স্বাভাবিক গড় দামের চেয়ে বেশি হবে। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে কয়লা সরবরাহের  জন্য নদী ড্রেজিংসহ অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও বড় অংকের ভর্তুকি দিতে হবে।

২০১৯ সালের জুলাইয়ের মধ্যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের মধ্যে প্রথমটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে চালুর লক্ষ্য ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটটি চালু হওয়ার কথা ২০১৯ সালে। মূল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে চলতি বছরের জুলাইয়ে বিআইএফপিসিএল ও ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেডের (বিএইচইএল) মধ্যে ১৪৯ কোটি ডলারের চুক্তিও সই হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের সঙ্গে রেল ও সড়ক সংযোগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ চলছে। মূল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফেন্সিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জিও টেকনিক্যাল সার্ভের কাজও করা হয়েছে।

প্রকল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে কর অবকাশ সুবিধা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এছাড়া ভারত থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির যন্ত্রপাতি আনতে পশুর নদী ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বণিকবার্তা।