Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ফিদেল কাস্ত্রোর বিপ্লবী জীবন

castroche

ফিদেল কাস্ত্রো প্রথম জীবনে ছিলেন একজন জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক নেতা। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট প্রেসিডেন্ট বাতিস্তার স্বৈরশাসনকে চ্যালেঞ্জ করেন এবং তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের নাকের ডগায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বজুড়ে নজির স্থাপন করেন কাস্ত্রো। বিশ শতকের এ মহানায়ক বিশ্বব্যাপী মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদের জয়জয়কারের মধ্যেও সমাজতান্ত্রিক কিউবাকে টিকিয়ে রেখে হয়ে ওঠেন বিপ্লবের প্রবাদ পুরুষ।

chardike-ad

ফিদেল কাস্ত্রোর রাজনৈতিক জীবন শুরু হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়ার সময়। তখন তিনি প্রেসিডেন্ট বাতিস্তা ও কিউবাতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী সমালোচনা নিবন্ধ লিখে ব্যাপক পরিচিতি পান। ১৯৪৭ সালে যোগ দেন কিউবার নবগঠিত পিপলস পার্টিতে। রাজনীতিতে যোগ দিয়েই কাস্ত্রো মার্কিন ব্যবসায়ী শ্রেণি ও সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন। দুর্নীতি, অবিচার, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও নিম্নমানের মজুরিসহ ক্ষমতাসীনদের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে দলের তরুণ সদস্যদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয়তা পান। ১৯৫২ সালে দলীয় কংগ্রেসের সদস্য প্রার্থী হন। জাতীয় নির্বাচনে পিপলস পার্টি যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই জেনারেল বাতিস্তা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়।

body_fidel-castro_1

সামরিক স্বৈরাচারের হাত থেকে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার গণতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ হওয়ায় বিকল্প পথ বেছে নেন কাস্ত্রো। বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ে শতাধিক সমর্থকের একটি সশস্ত্র দল নিয়ে ১৯৫৩ সালের ২৬ জুলাই মনকাদা আর্মি ব্যারাকে হামলা করেন। সংঘর্ষে কিছু সেনা নিহত হয় কিন্তু কাস্ত্রোর দল পরাস্ত হয়ে কারারুদ্ধ হয়। বিদ্রোহীদের আটক করামাত্র হত্যার নির্দেশ জারি করেন বাতিস্তা।

এ আদেশে ফিদেল কাস্ত্রোর প্রায় ৮১ জন সহযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়। তবে কাস্ত্রোকে আটককারী লেফটেন্যান্ট বাতিস্তার নির্দেশ না মেনে তাকে বেসামরিক কারাগারে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে কারাগারে কাস্ত্রোকে বিষ দিয়ে হত্যার জন্য ক্যাপ্টেন পেলেতিয়ারকে দায়িত্ব দেন বাতিস্তা। কিন্তু পেলেতিয়ার তাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেন। এ বিরুদ্ধাচরণের জন্য তাকে সামরিক আদালতে ফাঁসি দেয়া হয়। পরে বিশ্ব জনমতের কথা চিন্তা করে কাস্ত্রোকে বিচারের মুখোমুখি করেন বাতিস্তা।

মনকাদা হামলায় অভিযুক্ত হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কাস্ত্রোর দেয়া জবানবন্দি সে সময় কিউবার রাজনীতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। সেই জবানবন্দিতে কিউবার সামরিক স্বৈরশাসক ও বুর্জোয়া শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট নিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি। সংকট সমাধানের কার্যকরী পথ-নির্দেশনাও দিয়েছিলেন। কিউবায় কাস্ত্রোর এই জবানবন্দিমূলক বক্তৃতা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল ।

মনকাদা হামলার ওই বিচারে ১৫ বছরের কারাদণ্ড হলেও প্রবল জনপ্রতিরোধের কারণে মাত্র দুই বছরের মাথায় কাস্ত্রোকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় বাতিস্তা সরকার।

১৯৫৫ সালে ভাই রাউল কাস্ত্রো নিকো লোপেজের মাধ্যমে বিপ্লবী চে গুয়েভারার সঙ্গে পরিচিত হন। পরে রাউলের মাধ্যমে গুয়েভারার সঙ্গে পরিচয় হয় ফিদেল কাস্ত্রোর। চে ছিলেন একজন আপাদমস্তক মার্কসবাদী বিপ্লবী। বলা হয় তার সংস্পর্শে এসেই কাস্ত্রো মার্কসবাদী বিপ্লবী হয়ে ওঠেন।

চে গুয়েভারার সঙ্গে সাক্ষাতের পর কাস্ত্রো মেক্সিকো থেকে কিউবায় আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করেন। এ কারণে তাকে সঙ্গে নিয়ে গেরিলা দল গড়ে তোলার জন্যে মেক্সিকোয় পাড়ি জমান। সেখানে গেরিলা দল গঠন ও পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র জোগাড়ের পর চে গুয়েভারাসহ প্রায় ৮০ জনের একটি বিপ্লবী দল নিয়ে ১৯৫৬ সালের শেষে কিউবায় ফিরে আসেন কাস্ত্রো। ১৯৫৩ সালের ২৬ জুলাই মনকাদার সেই হামলার নামানুসারে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বাধীন গেরিলা দল ‘টুয়েন্টি সিক্সথ অব জুলাই মুভমেন্ট’ কিউবায় তখন ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা লাভ করে। এ দল নিয়ে ১৯৫৭ সালের শুরুর দিকে তিনি কিছু ছোট ছোট সংঘর্ষে সফলতাও পান।

১৯৫৮ সালের শুরুর দিকে বাতিস্তার হাজারখানেক সেনা গেরিলাদের হাতে প্রাণ হারালে যুক্তরাষ্ট্র বিমান, বোমা, জাহাজ ও ট্যাংক পাঠিয়ে গেরিলাদের দমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তৎকালীন নাপাম বোমার মতো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও গেরিলাদের সাথে লড়াইয়ে বাতিস্তা ব্যর্থ হওয়ায় তাকে নির্বাচন দেয়ার পরামর্শ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বাতিস্তা নির্বাচন দিলেও জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করে।

কাস্ত্রোর সেনারা চারদিক দিয়ে রাজধানী হাভানাকে ঘিরে ফেলা শুরু করলে ১৯৫৯ সালের পহেলা জানুয়ারি কিউবা ছেড়ে পালিয়ে যান জেনারেল বাতিস্তা। পরে ৯ জানুয়ারি রাজধানী হাভানায় ঢুকে দেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে কাস্ত্রোর গেরিলারা। আর এরই মধ্যদিয়ে কিউবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ফিদেল কাস্ত্রো।

আজীবন বিপ্লবী এই নেতা ১৯৬৫ সালে কমিউনিস্ট পার্টি অব কিউবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং কিউবাকে একটি সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরের কাজ শুরু করেন।

কিউবা-বিপ্লবের পরবর্তী অর্ধশতক ধরে পরপর ১০ জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যা কিংবা উৎখাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

castro

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব থেকে কিউবাকে বের করে নিয়ে এসে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করাসহ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা নীতির কারণে দেশটির মানুষ তাকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করে। যদিও দীর্ঘদিন ক্ষমতা ধরে রাখা এবং নিজের ভাইকে উত্তরসূরী হিসেবে রাখার কারণে অনেকে তার সমালোচনাও করেন।