Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাংলাদেশের কান্ট্রি ব্র্যান্ড ভ্যালু ১৭ হাজার কোটি ডলার

base_1480886610-brand-value-converted

চলতি বছর বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ভ্যালু বেড়েছে ১৮ শতাংশ। বৈশ্বিক ব্র্যান্ড মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যভিত্তিক ব্র্যান্ড ফিন্যান্সের হিসাবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ভ্যালু ১৭ হাজার কোটি (১৭০ বিলিয়ন) ডলার। গত অক্টোবরে প্রকাশিত ‘নেশন ব্র্যান্ডস ২০১৬’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ব্র্যান্ড ভ্যালুতে বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৪৪তম।

chardike-ad

তিনটি বিষয়ের ভিত্তিতে ব্র্যান্ড ভ্যালু হিসাব করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্র্যান্ড স্ট্রেন্থ ইনডেক্স (বিএসআই), ব্র্যান্ড রয়্যালটি রেট ও ব্র্যান্ডের রেভিনিউ। এ তিনটি তথ্য নির্দিষ্ট একটি সূত্রে ব্যবহার করে ব্র্যান্ড মূল্য হিসাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে আগের বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য। এসবের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে ব্র্যান্ড ভ্যালুতে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ব্র্যান্ড মূল্য ২০ হাজার ৫৭৪ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেড়েছে দেশটির ব্র্যান্ড মূল্য। গত বছরও তালিকার শীর্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছর শীর্ষ পাঁচের অন্য দেশগুলো হলো— চীন, জার্মানি, জাপান ও যুক্তরাজ্য। দেশগুলোর ব্র্যান্ড মূল্য যথাক্রমে ৭ হাজার ৮৭, ৩ হাজার ৮৮২, ৩ হাজার ২ ও ২ হাজার ৯৪২ বিলিয়ন ডলার।

ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্র্যান্ড ফিন্যান্সের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে। গত বছর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪৭তম। ব্র্যান্ড ফিন্যান্সের মূল্যায়ন অনুযায়ী, সে সময় দেশের ব্র্যান্ড ভ্যালু ছিল ১৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, সাধারণভাবে বলা যায় নেশন ব্র্যান্ডিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমান্বয়ে ভালো হওয়ারই কথা। কারণ অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট যেমন জিডিপি প্রবৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা ভালো। এ অবস্থা আরো ভালো করতে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোয় গুরুত্ব দিতে হবে।

ব্র্যান্ড ভ্যালু হিসাবের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিএসআই প্রকাশ করা হয়েছে তিনটি স্তম্ভের ভিত্তিতে। এগুলো হলো— বিনিয়োগ, সমাজ এবং পণ্য ও সেবা। এগুলোর বিপরীতে আবার রয়েছে আলাদা উপসূচক। বিনিয়োগ স্তম্ভের আওতায় রয়েছে তিনটি উপসূচক— সুশাসন, বাজার এবং জনগোষ্ঠী ও দক্ষতা। সুশাসন পরিমাপ করা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ, কর ব্যবস্থা, অবকাঠামো ও বিনিয়োগকারীর সুরক্ষার ভিত্তিতে। প্রযুক্তির ব্যবহার, গবেষণা ও উন্নয়ন, ব্যবসায় পরিবেশ ও বাজার উন্নয়নের ভিত্তিতে পরিমাপ করা হয়েছে বাজার উপসূচক। আর জনগোষ্ঠী ও দক্ষতা উপসূচকের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা, মেধার স্থিতি এবং মেধার ব্যবহার।

দুর্নীতি, বিচার ব্যবস্থা, নিরাপত্তা, ভাবমূর্তি, জীবনযাত্রার মান, করপোরেট নৈতিক অবস্থান— এসবের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয় সমাজ স্তম্ভটি।

পণ্য ও সেবা স্তম্ভের আওতায় রয়েছে সুশাসন, বাজার ও পর্যটন উপসূচক। এক্ষেত্রে সুশাসন পরিমাপে ব্যবহার করা হয় বাণিজ্য নীতিমালা ও সরকারের নীতি। বাজারের আকার, প্রতিযোগিতা ও উন্নয়ন বিবেচনা করে বাজার উপসূচকটির মান নির্ধারণ করা হয়।

প্রাপ্ত মান অনুযায়ী ছয়টি আলাদা শ্রেণীতে ভাগ করা হয় প্রতিটি দেশের ব্র্যান্ডকে। এগুলো হলো— অসাধারণ, অত্যন্ত শক্তিশালী, শক্তিশালী, উন্নয়নশীল, দুর্বল ও ক্ষয়িষ্ণু। প্রতিটি শ্রেণীতে তিনটি করে উপশ্রেণী রয়েছে। বাংলাদেশের রেটিং এক্ষেত্রে ‘এ মাইনাস’, যা শক্তিশালী ব্র্যান্ড রেটিংয়ের শ্রেণীভুক্ত।

দেশে ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম (বিবিএফ)। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, ব্র্যান্ড ফিন্যান্স নিয়মিত এ তালিকা প্রকাশ করছে। কান্ট্রি ব্র্যান্ড মূল্যমান নির্ধারণে তাদের নির্দিষ্ট মডেল রয়েছে। এ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্যও তাদের কাছে রয়েছে। এর ভিত্তিতেই তালিকা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। এ বছর প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের ব্র্যান্ড মূল্য নির্ধারণ করেছে ১৭ হাজার কোটি ডলার। এর যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পরের অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। ১২৮ বিলিয়ন ডলার ব্র্যান্ড মূল্য নিয়ে চলতি বছর দেশটির অবস্থান তালিকার ৫১তম স্থানে। গত বছরের চেয়ে তিন ধাপ অগ্রগতির পাশাপাশি পাকিস্তানের ব্র্যান্ড মূল্য বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। আগের বছর পাকিস্তানের ব্র্যান্ড মূল্য ছিল ৯৩ বিলিয়ন ডলার। ব্র্যান্ড মূল্যে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও ব্র্যান্ড স্ট্রেন্থের বিচারে এগিয়ে পাকিস্তান। দেশটির রেটিং ‘এ’।

ব্র্যান্ড ভ্যালুতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভারত। ব্র্যান্ড ফিন্যান্সের তালিকায় দেশটির অবস্থান সপ্তম। গত বছরের চেয়ে ৩ শতাংশ কমে দেশটির ব্র্যান্ড মূল্য দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৬ বিলিয়ন ডলার। আগের বছর এ মূল্যমান ছিল ২ হাজার ১৩৬ বিলিয়ন ডলার। ভারতের রেটিং ‘এএ মাইনাস’।

ব্র্যান্ড ফিন্যান্সের তালিকায় শ্রীলংকা রয়েছে ৫৫, মিয়ানমার ৬৮ ও নেপাল ৯৪তম অবস্থানে। দেশ তিনটির ব্র্যান্ড ভ্যালু যথাক্রমে ৭৪ বিলিয়ন, ৪৪ বিলিয়ন ও ১২ বিলিয়ন ডলার। মিয়ানমার প্রথমবারের মতো এ বছর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বণিকবার্তা।