Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কানাডায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের গ্রীষ্মকাল উদযাপন

canadaকানাডার তিনটি প্রেইরি প্রদেশের একটির নাম ম্যানিটোবা। উইনিপেগ প্রদেশটির রাজধানী ও কেন্দ্রিয় শহর। অত্যন্ত শীতপ্রধান এলাকা হওয়ায় কৌতুক করে কানাডিয়রা প্রদেশটিকে উইন্টারপেগও বলে থাকে। কৃষিনির্ভর প্রদেশ হিসেবে ‘কানাডার শস্যভান্ডার’ পরিচিতির বাইরেও ম্যানিটোবার ব্যাপক পরিচিতি আছে হাজারখানেক হ্রদ, আদিবাসীদের আধিক্য, বেলুগা তিমি, সীল, মেরুভল্লুক, এবং উত্তর মেরুতে ‘আরোরা’ বা বহুবর্ণ রঙ্গিন আলোর খেলার জন্য।

গ্রীষ্মকালটি এই প্রদেশে বিশেষভাবে উপভোগ্য সবুজ বন-বনানী এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে। ম্যানিটোবার বাংলাদেশি অভবাসীরাও গ্রীষ্মকালীন আনন্দ উপভোগের কোনো কমতি রাখেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় ম্যানিটোবার গ্রীষ্মকাল বাংলাদেশিদের পারিবারিক উৎসবের মূল সময় হয়ে উঠে।

chardike-ad

আশির দশকের মাঝমাঝিও ম্যানিটোবায় বাংলাদেশি অভিবাসীর সঙ্খ্যা ছিল দুই’শ জনের মত। একবিংশ শতকের শুরু হতে বাংলাদেশিরা সহজ ইমিগ্রেশনের সুবিধা নেবার প্রয়োজনে ম্যানিটোবায় অভিবাসনে আগ্রহি হয়ে উঠেন। বর্তমানে ম্যানিটোবায় প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশি বাস করছেন। অভিবাসীদের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত, এবং পেশাগতভাবে শিক্ষকতা, চিকিৎসাসেবা, প্রকৌশলবিদ্যা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন।

canadaম্যানিটোবার বাংলাদেশি অভিবাসীগণ পারসপরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সামাজিক যোগাযোগ ও নানাবিধ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সবিশেষ পরিচিত। প্রদেশের বাংলাদেশিরা নানা ধরণের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনসহ দুইটি কো-অপারেটিভ এর সঙ্গে জড়িত। এই সংগঠনগুলোর বিশেষত্ব এই যে প্রতিটির প্রত্যেক কর্মকান্ডই প্রত্যেক বাংলাদেশির জন্য উন্মুক্ত। সকলেই অনায়াসে সকলের অনুষ্ঠান-আয়োজনে অংশগ্রহণ করে থাকেন।

মে ২০১৭ হতেই নানারকম ঘরোয়া অনুষ্ঠান চলতে থাকলেও পুরো জুলাই মাস জুড়েই ম্যানিটোবার বাংলাদেশিরা একাধিক বৃহত্তর সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ নেন। এগুলোর মধ্যে চারটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান সংবাদ—

একঃ বাংলাদেশ কমিউনিটি কঞ্জ্যুমার্স কো-অপারেটিভ লিমিটেড ৯ই জুলাই মনোলোভা গিমলি সৈকত -এ বার্ষিক পূণর্মিলনি ও নতুন সদস্য বরণ ও অভিনন্দনের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটিতে মজাদার খাবারের যোগান ছাড়াও শিশুদের জন্য চিত্রাংকনসহ একাধিক মনোরঞ্জনমূলক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা রাখা হয়। বয়স্থ ও প্রমিলা সদস্যদের জন্যও একাধিক মজাদার প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়। নতুন সদস্যদের স্বাগত জানানো, বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা এবং অগ্রগতি প্রতিবেদন উপসাথনা শেষে মনোজ্ঞ র‍্যাফেল ড্র আয়োজনের মাধ্যমে আনন্দঘন অনুষ্ঠানটির সফল সমাপ্তি ঘটে।

canadaদুইঃ বাংলা স্কুল, উইনিপেগ এর শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী-অভিভাবকদের বার্ষিক ত্রি-পক্ষিয় সংযোগ সভা এবং চড়ুইভাতি ১৫ জুলাই সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা স্কুল ২০১২ সাল হতে অদ্যাবধি অবৈতনিক ও স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই অনুষ্ঠানটি নিয়মিত পালন করে চলেছে। বাংলাদেশি স্কুল ছাত্রছাত্রীদের প্রাথমিক ভাষা শিক্ষাদান ছাড়াও বাংলা স্কুল উচ্চতর শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য উইনিপেগ স্কুল ডিভিশনের অধীনে অতিরিক্ত ভাষাজ্ঞান পরীক্ষার আয়োজন করে।

পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবি শিক্ষকের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় সংক্ষিপ্ত কলেবরের অনুষ্ঠানটিতে শিশুদের চিত্রাংকনসহ বিভিন্ন মজাদার অনুষ্ঠা্নের আয়োজন ছিল। অনুষ্ঠানে স্কুল সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকগণ ভবিষ্যত কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহন এবং স্কুলটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের দৃঢ় সংকল্প ব্যাক্ত করেন।

তিনঃ দ্যা বেংগল টাইগার্স ক্লাব ১৬ই জুলাই কানাডার হোয়াইট শেল প্রভিন্সিয়াল পার্ক এর অধীন ফ্যাল্কন লেইক-এ বার্ষিক বনভোজন ও ক্রীড়ানুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিশোর যুবকদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশের জন্য বেংগল টাইগার্স ক্লাব বছর জুড়ে নিয়মিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও টুর্নামেন্টের আয়োজন করে থাকে। ক্লাবটি বিভিন্ন সময়ে সংগীত সন্ধ্যার আয়োজনও করে থাকে। ইতোমধ্য ক্রিকেট, ব্যাডমিনটন ও ফুটবল টুর্নামেন্টে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিত্বকারী দলকে হারিয়ে ক্লাবটি উইনিপেগের ক্রীড়া মহলে নিজস্ব পরিচিতি অর্জনেও সক্ষম হয়েছে। নানাবিধ মনোরঞ্জনমূলক ক্রীড়া-কৌতুক, প্রতিযোগিতা ও একাধিক র‍্যাফেল-ড্র এর সমন্বয়ে বিনোদনধর্মি অনুষ্ঠানটি ক্লাবের তহবিল সংগ্রহেও অবদান রেখেছে।

চারঃ কানাডা-বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইনকর্পোরেটেড (সিবিএ) এর বার্ষিক বনভোজন ২৩ জুলাই পোর্টেজ লা প্রেইরির আইল্যান্ড পার্ক-এ উদযাপিত হয়। কানাডা-বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ম্যানিটোবায় বাংলাদেশি প্রবাসীদের মূল প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন। সিবিএর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য আয়োজিত আরো নানবিধ অনুষ্ঠানের মধ্যে বার্ষিক মিলনমেলাটি অন্যতম।

canadaবরাবরের মত শিশুরা ছিল এই মিলনমেলার অন্যতম আকর্ষণ। শিশুদের জন্য আয়োজিত সারা দিনব্যাপি আয়োজনের অন্যতম উপভোগ্য বিষয় ছিল ‘যেমন খুশি সাজো’ এবং ‘বাউন্সি ক্যাসেল’। সুস্বাদু খাবার-দাবারের অফুরন্ত যোগানসহ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব ধরণের ও বয়সের বাংলাদেশি প্রবাসীদের আনন্দময় সময় উদযাপনের ব্যবস্থা ছাড়াও ম্যানিটোবায় আগত নবাগতদের বরণ করে নেবার প্রচেষ্টাও ছিল নজরে পড়ার মত।

অনুষ্ঠানটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন নাসরিন মাসুদ (সভাপতি), হেলাল মহিউদ্দীন (সহ-সভাপতি), ফায়সাল শিবলি (সাধারণ সম্পাদক), মোঃ রবিউল ইসলাম খান (সহ সাধারণ সম্পাদক), এস এম এ রানা (কোষাধ্যক্ষ), রেজা কাদির (জনসংযোগ সম্পাদক), মোঃ ওয়ালিউল্লাহ (সাংস্কৃতিক সম্পাদক), মোঃ মানিক হোসেন ও মোস্তারিনা বেগম (সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক), এবং মোঃ শামিম চৌধুরী ও শামিলা কায়সার (সহ-ক্রীড়া সম্পাদক)। পুরস্কার বিতরণ এবং ১০ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য সিবিএর বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ঘোষণা ও রূপরেখা প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষিত হয়।

সংবাদটি পাঠিয়েছেন, ড. হেলাল মহিউদ্দীন, গবেষণা ফেলো, ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা ।